ডেম্বেলেকে ধরে রাখা উচিত বার্সার, এল-ক্ল্যাসিকোর ৫ খুটিনাটি

প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) ছেড়ে লিওনেল মেসি বিদায় নেওয়ার পর ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দেন কিলিয়ান এমবাপ্পেও। তবে সেটা ফ্রি এজেন্টে, মৌসুম শেষে। তাছাড়া অনেক দিন থেকে ইনজুরির কারণে খেলতে পারছেন না নেইমার। এ কারণেই কিনা উসমান ডেম্বেলের ওপর পাখির চোখ করেছে প্যারিসিয়ানরা।

উসমান ডেম্বেলে

ডেম্বেলেকে নিয়ে শোনা গিয়েছিল তিনি পিএসজিতে যোগ দিতে চান না। বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তি নবায়নে আগ্রহী ফ্রান্স তারকা। যদিও তার আগ্রহের ব্যাপারে মুখ খোলেনি বার্সা। এবার হয়ত ডেম্বেলেকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য হবেন বার্সার প্রধান কোচ জাভি হার্নান্দেজ। গতরাতে এলক্ল্যাসিকোয় ডেম্বেলের পারফরম্যান্স ছিল সত্যি অসাধারণ। প্রাক-মৌসুম ফ্রেন্ডলি ম্যাচে গতরাতে রিয়াল মাদ্রিদকে ৩-০ গোল ব্যবধানে হারানোর ম্যাচে বার্সেলোনার হয়ে প্রথম গোলটি করেন ডেম্বেলে।

এই ম্যাচটি যারা দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই এটিকে প্রস্তুতি ম্যাচ হিসেবে উল্লেখ করবেন না। অন্তত দুই দলের ফুটবলারদের আপ্রাণ চেষ্টা, মাঠের প্রতিশ্রুতি এবং উত্তেজনা বিচারে। এ সবকিছুই আকর্ষণীয় ছিল। আর এ কারণেই চির-প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দলের খেলা সবসময়ই অন্যরকম উত্তেজনা তৈরি করে, সেটা মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে।

এই ম্যাচের খুটিনাটি বিষয় নিয়ে অনেক কিছুই আলোচনা করার আছে। গতরাতের এল-ক্ল্যাসিকো থেকে এই ৫টি বিষয় থাকছে আমাদের আলোচনায়। দেখে নেওয়া যাক কী সেই পাঁচটি বিষয়-

কেউ বলবে না এটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ

ম্যাচটির অফিশিয়াল নাম প্রাক-মৌসুম ক্লাব ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। আদতে কোনোভাবেই এটিকে বন্ধুত্বপূর্ণ ম্যাচ হিসেবে নেয়নি দুই দলের ফুটবলাররা। আর সেটি বোঝা গেছে ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায়ই। এ সময়ে দলের পক্ষে প্রথম লিড এনে দেন ডেম্বেলে। গোলের পর উদযাপনে তিনি ছিলেন যথেষ্টই আবেগপ্রবণ। যেন এটি সত্যিকারেরই একটি ক্লাসিকো ছিল।

শনিবার রাতের এল-ক্ল্যাসিকোয় উত্তেজনা ছিল চরমে

অথচ ফ্রেন্ডলি ম্যাচে এতটা উত্তেজনা থাকারই কথা নয়। কিন্তু রিয়াল-বার্সা দ্বৈরথ সবসময়ই জ্বালাময়ী এক ম্যাচের উদাহরণ সৃষ্টি করে। আর সেটির উপস্থিতি ছিল গতরাতেও। ম্যাচের প্রথমার্ধে চারটি হলুদ কার্ড দেন রেফারি। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারত। কেননা ফ্রেঙ্কি ডি জং সেটার প্রাপ্য দাবিদার ছিলেন, যখন তিনি অরলিয়েন চৌমেনির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন। যদিও এটিকে এড়িয়ে গেছেন রেফারি।

বার্সায় ছন্দ পেয়ে গেছেন ডেম্বেলে

আসন্ন মৌসুমের শুরুতে ডেম্বেলে কোন দলের হয়ে খেলবেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। পিএসজি ইতোমধ্যে ৫০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে তার জন্য। রাইট উইঙ্গার হিসেবে ফ্রান্স তারকাকেই পছন্দ তাদের। যদিও আপাতত বার্সার হয়ে সেরা ছন্দে আছেন তিনি। তাই বলা যাচ্ছে না শেষপর্যন্ত কি হতে চলেছে।

গতরাতে গোল দিয়ে শুরু করেছিলেন ডেম্বেলে। ম্যাচের শেষটাও হতে পারত গোল দিয়েই, যদি না থিবো কোর্তোয়া অবিশ্বাস্যভাবে সেটি সেভ না করতেন। ডেম্বেলের সৃজনশীল উপস্থিতি গতরাতে জাভির বার্সার সাফল্যের অন্যতম কারণ। শুধু গোলের জন্যই নয়। এই ম্যাচে ডেম্বেলের ক্রস পাসগুলো ছিল দেখার মতো। ফরওয়ার্ড লাইনে রবার্ট লেভেনডফস্কির সঙ্গে তার রসায়নটাও ছিল চমৎকার। তিনি লেভানডফস্কিকে দিয়ে বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করেছেন। যদিও হতে পারে কাতালান ক্লাবের হয়ে এটি ডেম্বেলের শেষ ম্যাচ। তবে তিনি অবশ্যই ক্লাবকে দেখিয়েছেন যে তাকে ছেড়ে দিলে তারা কী হারাতে পারে।

আরাউজো বনাম ভিনিসিয়াস

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, গ্যারেথ বেল এবং করিম বেনজেমা চলে যাওয়ায় ভিনিসিয়াসের ওপর এখন উত্তর দায়িত্ব। বিভিন্ন সময়ে তিনি দুর্দান্ত কিছু উপহার দিয়েছেন। গত রাতেও তার ড্রিবলিং, পাস এবং গতি সবই ভালো ছিল। কিন্তু কোনো একটা জায়গা আবারও তাকে আটকে রাখা হয়েছে। এল-ক্ল্যাসিকো ম্যাচে তার বিপরীতে রোনাল্ড আরাউজোকে রেখেছে বার্সা। লেফট উইংয়ে ভিনি থাকায় রাইট ব্যাকে এদিনও আরাউজোকে রেখেছিল ব্লাউগানারা। যিনি ভিনিচিয়াসকে আটকে রাখতে নিজের সবটাই করেছেন।

শনিবার রাতেও দু'জনের মধ্যে দারুণ দ্বন্দ্ব হয়েছে। যা গত কয়েক মাসের তুলনায় কিছুটা বেশি ছিল। ভিনিসিয়াস প্রায় প্রতিবারই আরাউজোর কঠিন ট্যাকল বা স্নিকি ফাউলের মুখোমুখি হয়েছেন। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে আবার বার্সা ডিফেন্ডারকে টপকে যান ভিনি। তবুও ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার কখনই ভয়ঙ্কর কোনো পাস কিংবা শট নিতে পারেননি। আশা করা যায় দুজনের এই দ্বৈরথ সামনের দিনে আরও অনেক দেখা যাবে।

কিছুটা আগেভাগেই ইনজুরির দুঃশ্চিন্তায় দুই দল

নামে এই দুই দলের ম্যাচ যেটাই হোক মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সেটা কি আর থেকেছে কখনও? গতরাতেও ছিল না। দুই দলই মাঠে নেমেছে জয়ের জন্য। চির-প্রতিদ্বন্দ্বির বিপক্ষে হারটা মেনে নেবেন না তারা। আর সে কারণেই ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হওয়া সত্ত্বেও ম্যাচে সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন দুই দলের ফুটবলাররা।

চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন রিয়াল মাদ্রিদের ডিফেন্ডার ফার‌ল্যান্ড মেন্ডি

ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ইল্কে গান্ডোগান এবং আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন উভয়কেই তুলে নেওয়া হয়। দুজনেই ম্যাচে চোট পেয়েছিলেন। তবে জাভির জন্য চিন্তার কারণ হতে পারেন ইল্কে গুন্ডোগানের চোট।

এদিকে কার্লো আনচেলত্তিও খুব একটা স্বস্তিতে নেই। চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন ফারল্যান্ড মেন্ডি। প্রায় এক বছর ধরে ইনজুরিতে ভুগছিলেন লেফট-ব্যাক। ফেরার ম্যাচে আবারও চোটে পড়া নিশ্চিত বড় ক্ষতি হতে পারে রিয়ালের জন্য।

ফিনিশারের অভাব রিয়ালে

রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেবেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। কয়েক মাস ধরে ফুটবল অঙ্গনের সবচেয়ে বড় গুঞ্জনের মধ্যে যা অন্যতম। যদিও সেটার বাস্তবিক প্রতিফলন নেই বললেই চলে। এমবাপ্পে রিয়ালে যোগদান করুক বা না করুক, এটা খুবই স্পষ্ট যে মাদ্রিদের ফরওয়ার্ডে একজন ক্লিনিকাল স্ট্রাইকার দরকার।

শনিবার বার্সা রক্ষণভাগে দুর্দান্ত ছিল। তাদের রক্ষণাত্মক ইউনিট ছিল আদর্শ ডিফেন্স লাইনের বিজ্ঞাপনের মতো। রদ্রিগোদের ভুল পাসগুলো চোখে লেগেছে। এছাড়া জুডে বেলিংহাম এখনও নম্বর টেন হয়ে উঠতে পারেননি। এ কারণেই রিয়ালে একজন্য গোলস্কোরিং স্ট্রাইকার দরকার।

একটি কার্যকরী নম্বর নাইন বাছাই করার জন্য দীর্ঘ পরিকল্পনা করতে হবে রিয়ালকে। এমবাপ্পে সেটি পূর্ণ করতে পারেন। তিনি একজন মারাত্মক, সহজাত ফিনিশার যা মাদ্রিদের অভাব। এমনকি যদি তারা তাকে না পায়, তবে বিকল্প ভাবতে হবে। কেননা মাদ্রিদের বর্তমান ‘ফ্রন্ট থ্রি’ দিয়ে এই ধরনের বড় ম্যাচে জয় পাওয়া সহজ হবে না।