যুদ্ধ বন্ধ করতে পুতিনকে আফ্রিকান নেতাদের চাপ

ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে তাদের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে এবং ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির চুক্তি নবায়ন করতে চাপ দিয়েছে আফ্রিকার দেশগুলোর জোট আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ)। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত এইউর সম্মেলনে সংস্থাটির নেতৃবৃন্দ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এই চাপ দেন। খবর রয়টার্স।

এইউ সম্মেলনে পুতিন

গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের সম্মেলনে এইউ নেতৃবৃন্দ সরাসরি রাশিয়ার কোনো সমালোচনা করেননি। তবে এবার তারা যে অবস্থান নিয়েছেন তা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সংহত ও জোরালো ছিল। তারা পুতিনকে চলমান যুদ্ধের পরিণতি, বিশেষ করে খাদ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আফ্রিকার উদ্বেগের গভীরতা স্মরণ করিয়ে দেন।

এইউ কমিশনের চেয়ারম্যান মুসা ফাকি মোহাম্মদ বক্তব্যে বলেছেন, এই যুদ্ধের অবসান হওয়া উচিত, জ্বালানি ও শস্য সরবরাহের বিঘ্নতাও অবিলম্বে শেষ হওয়া উচিত। বিশ্বের সব মানুষ বিশেষ করে আফ্রিকানদের কথা বিবেচনা করে শস্য চুক্তিটির মেয়াদ বাড়ানো উচিত। আর চলমান এই যুদ্ধ কেবল ন্যায়বিচার ও যুক্তির ভিত্তিতেই শেষ হতে পারে।

পুতিন

গত জুনে আফ্রিকা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে পুতিনের কাছে একটি শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিল। তাতে ইউক্রেন থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাবর্তন, বেলারুশ থেকে রাশিয়ান কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র সরিয়ে নেওয়া, পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করা এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কমানোসহ সঙ্ঘাত নিরসনের জন্য সম্ভাব্য বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।

পুতিন সেটি তখন নিয়ে বলেছিলেন, বিষয়টি মস্কো ভালোভাবে বিবেচনা করে দেখবে। গতকাল শুক্রবারও তিনি এ বিষয়ে বলেন, মস্কো এই শান্তি পরিকল্পনাকে সম্মান করে এবং সতর্কতার সঙ্গে এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে।

কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ডেনিস সাসু এনগুয়েসো এ বিষয়ে বলেন, আফ্রিকান এই শান্তি পরিকল্পনাটি অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। একই সঙ্গে আমরা আবারও জরুরিভাবে ইউরোপে শান্তি পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানাচ্ছি।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা তার বক্তব্যে প্রত্যাশ্যা ব্যক্ত করেন, গঠনমূলক ব্যস্ততা ও আলোচনার মাধ্যমে চলমান সংঘাতের অবসান হতে পারে।

আফ্রিকান নেতৃবৃন্দের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে পুতিন রাশিয়ার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন এবং অধিকাংশ সমস্যা সৃষ্টির জন্য ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্বকে দায়ী করেন। পুতিন বলেন, আমাদের আফ্রিকান বন্ধুরা যে আমাদের সমস্যার দিকে নজর দিয়েছে সে জন্য রাশিয়া তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা আপনাদের এ ধরনের উদ্যোগকে সম্মান করি। মূলত আমরাও আলোচনা চাই। কিন্তু কিয়েভ কোনো ধরনের আলোচনা করতে রাজি নয়।

মূলত রাশিয়া ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল দখল করে নেওয়ার পরই আলোচনার বিষয়টি স্থগিত হয়ে যায়। রাশিয়া আলোচনার জন্য নিজেদের দরজা খোলা রাখার ঘোষণা দিলেও ইউক্রেন জানায়, ওই চারটি অঞ্চল ফিরিয়ে দেওয়ার আগে কোনো ধরনের আলোচনা সম্ভব হবে না।

এইউর সভাপতি আজালি আসুমানি তার বক্তব্যে বলেন, আলোচনার ব্যাপারে পুতিন সম্মত আছেন। এখন আমাদের অন্য পক্ষকে বোঝাতে হবে।

সম্মেলনে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। তবে এর জবাবে রাশিয়া জানায়, বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বৃদ্ধির যে কথা বলা হচ্ছে, তা মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের পূর্ববর্তী পশ্চিমা নীতির ভুলের ফল। আর মস্কো এ চুক্তি থেকে সরে এসেছে। কারণ, এই চুক্তির আওতায় দরিদ্রতম দেশগুলো শস্য পাচ্ছে না এবং পশ্চিমারা দর কষাকষিতে রাশিয়ার কথা চিন্তা করছে না।

এদিকে সম্মেলনের প্রথম দিনে আফ্রিকার দরিদ্রতম ছয়টি দেশকে বিনামূল্যে গম দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন। তিনি বলেন, আগামী তিন চার মাসে বুরকিনা ফাসো, জিম্বাবুয়ে, মালি, সোমালি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও ইরিত্রিয়ার প্রত্যেককে ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টন পর্যন্ত গম পাঠানো হবে।

বৃহস্পতিবার সম্মেলনের সূচনা বক্তব্যে পুতিন বলেছিলেন, আগামীতে নতুন বহুমুখী বিশ্বে রাশিয়ার অন্যতম প্রধান অংশীদার হয়ে উঠবে আফ্রিকা। রাশিয়া ও আফ্রিকা এখন থেকে জলবায়ু সমস্যা, মানবাধিকার সুরক্ষা ও জেন্ডার এজেন্ডা নিয়ে কাজ করবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।