ফারজানার ঐতিহাসিক সেঞ্চুরির দিনে অবিশ্বাস্য বোলাররা

একটা সময় মনে হচ্ছিল সহজ জয়ই পেয়ে যাবে ভারত নারী ক্রিকেট দল। কিন্তু দেরিতে হলেও বোলারদের অবিশ্বাস্য প্রচেষ্টায় ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। মিরপুরে রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা ফিরিয়ে আনেন নাহিদা আক্তার, সুলতানা খাতুন ও মারুফা আক্তাররা। তাদের অসাধারণ বোলিংয়ে সিরিজ নিস্পত্তি ম্যাচে জেতেনি কোনো দল। টাই হয়েছে তৃতীয় ওয়ানডে।

ভারতের ইয়াসতিকা ভাটিয়াকে আউট করেন সুলতানা খাতুন। এরপর তার সঙ্গে উদযাপনে সতীর্থরা

প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভারতের সামনে বড় লক্ষ্যই (২২৬) দাঁড় করায় বাংলাদেশ। সেই রান তাড়া করতে নেমে শক্তিশালী ভারত ৩২ রানের মধ্যে দুটি উইকেট হারিয়ে ফেলে। তবে ওপেনিংয়ে নামা অভিজ্ঞ স্মৃতি মান্ধানা ছিলেন দুর্দান্ত। তার সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন হারলিন দেওল। এই জুটিতে ওঠে ১০৭ রান।

দুই উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান করে ফেলা ভারতের জন্য জয়টা তখন অবশ্যম্ভাবী মনে হচ্ছিল। এরপরই ম্যাচে অবিশ্বাস্য কিছু করার ইঙ্গিত দেন লেগস্পিনার ফাহিমা খাতুন। স্মৃতিকে ব্যক্তিগত ৫৯ রানে রেখে আউট করেন ৩০ বছর বয়সী এই বোলার। ১০ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে আর কোনো উইকেট না পেলেও ভারতের প্রতিরোধ ভাঙেন তিনি। এরপর তাকে অনুসরণ করেন বাকি বোলাররা।

দলীয় ১৬০ রানের মাথায় অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরকে ফেরান নাহিদা আক্তার। বাংলাদেশি স্পিনারদের আসল ঘূর্ণি শুরু হয় ভারতীয় ইনিংসের ১৯১ রান থেকে। এ সময় জোড়া উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। ১৯২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন কাঁপছে ভারত। দলীয় সর্বোচ্চ ৭৭ রান করে রান আউটে কাটা পড়েন হারলিন দেওল।

স্বাগতিক বোলারদের সামনে তখন ঢাল হয়ে দাঁড়ান ভারতের জেমিমা রদ্রিগেজ। গত ম্যাচে যিনি বল ও ব্যাট হাতে অলরাউন্ডিং নৈপূণ্যে ভারতকে জিতিয়েছেন। আজও তিনি নাহিদা-মারুফাদের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন। বিপদের মধ্যে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন এই অলরাউন্ডার। তাকে ফেরানো না গেলেও অন্যপ্রান্তে উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। ১১৬ থেকে ১১৭ এই এক রানের মধ্যে তিন উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ।

শেষ দুই ওভারে ভারতের সামনে লক্ষ্য ৯ রানের। হাতে কেবল একটি উইকেট। ৪৯তম ওভারের প্রথম তিন বলে কোনো রান নিতে পারেনি ভারত। কিন্তু ওই ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আবার ম্যাচটা নিজেদের দিকে নিয়ে নেয় ‍ভারত।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল কেবল তিন রান। প্রথম দুই বলে দুই রান নিয়ে ম্যাচটা টাই করে ফেলে সফরকারী দল। শেষ ৪ বলে এক রান নিলেই জয় পেত ভারত। এরপরই মারুফার সেই দুর্দান্ত বল, যে বলে কাট করতে গিয়ে মেঘনা সিং ক্যাচ তুলে দেন বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির হাতে। উল্লাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা। সিরিজ জিততে না পারলেও ভারতের বিপক্ষে সিরিজ সমতা করাটাও যে বড় প্রাপ্তি।

বাংলাদেশের নাহিদা নিয়েছেন তিনটি উইকেট। দুটি উইকেট পেয়েছেন পেসার মারুফা আক্তার। একটি করে উইকেট শিকার করেছেন সুলতানা খাতুন, রাবেয়া খান ও ফাহিমা।

এর আগে ফারজানা আক্তার পিংকির ঐতিহাসিক সেঞ্চুরিতে ভর করে দুশো ছাড়ানো ইনিংস গড়ে বাংলাদেশ। প্রথম বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান এখন তিনি। এছাড়া ফিফটির দেখা পেয়েছেন শামীমা সুলতানা। তাদের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের সুবাদে ৪ উইকেট হারিয়ে ২২৫ রান করে জ্যোতির দল।