ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, ঢাকাতেই ৮ হটস্পট
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছিল। তবে চলমান পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দিন দিন আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে ডেঙ্গু। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী ও মৃতের সংখ্যা। বিশেষ করে জুলাইয়ে এসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় যেন বিস্ফোরণ ঘটেছে।
হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী
বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতির জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগের অদূরদর্শিতা ও অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন। তবে এ অবস্থাতেও ডেঙ্গুকে জরুরি অবস্থা জারি কিংবা মহামারি ঘোষণার দিকে যেতে রাজি নয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে এক হাজার ৭৫৫ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মারা যাওয়া ৯ জনের মধ্যে ঢাকার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে রয়েছেন একজন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জুলাইয়ের ২০ দিনেই মারা গেছেন ১০৮ জন।
ডেঙ্গু রোগী দিন দিন বাড়ছেই
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে আরও জানা গেছে, বর্তমানে ৫ হাজার ৯৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ঢাকাতে তিন হাজার ৫২২ জন এবং দুই হাজার ৪১৫ জন ঢাকার বাইরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ বছরে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫৪৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জুলাইয়ের ২০ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯ হাজার ৫৬৯ জন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডেঙ্গুর এমন আগ্রাসী পরিস্থিতির জন্য বেশিরভাগ দায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগের অদূরদর্শিতা এবং অব্যবস্থাপনার। ডেঙ্গু রোগীর প্রাথমিক সেবা নিশ্চিত করতে নগরে সিটি করপোরেশনের চিকিৎসাকেন্দ্র না থাকা, মশা নিধনে দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনার অভাব, এডিস মশার বিস্তার ও রোগী ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য এ রোগ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আগে যেখানে এ রোগ ঢাকাকেন্দ্রিক ছিল, এখন তা ক্রমেই গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে। যেখানে ডেঙ্গুর চিকিৎসা একেবারেই অপ্রতুল। ফলে সেখানে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটছে দ্রুত হারে।
এদিকে ডেঙ্গু সংক্রমণের শীর্ষস্থানে রয়েছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী। বর্তমানে আক্রান্ত রোগীর ১৩ শতাংশ এ এলাকার বাসিন্দা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনা করে আরও দেখা গেছে, এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুগদা, আক্রান্ত রোগীর ৫ শতাংশ মানুষ সেখানকার। এরপর তৃতীয় স্থানে রয়েছে উত্তরা ও জুরাইন এলাকা (৪ শতাংশ করে)। পরের স্থানে রয়েছে কদমতলী, মোহাম্মদপুর, মানিকনগর ও রাজধানীর উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জ এলাকায়। আক্রান্ত রোগীর ৩ শতাংশ করে এসব এলাকার বাসিন্দা। সব মিলিয়ে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের ৩৮ শতাংশই এই আট এলাকার বাসিন্দা। আর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ ঢাকার বাসিন্দা। বাকি ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ ঢাকার বাইরের। আবার ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে যারা মারা গেছে, তাদের ৭৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ ঢাকার বাসিন্দা, বাকি ২২ দশমিক ৬১ শতাংশ ঢাকার বাইরের।
অন্যদিকে ডেঙ্গুর চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে বেশি রোগী আছে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। মোট আক্রান্ত রোগীর ২৪ শতাংশই এ হাসপাতালে ভর্তি। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১১ শতাংশ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নয় শতাংশ রোগী, সরকারি হাসপাতালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৩ শতাংশ, ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালে ২ শতাংশ করে রোগী ভর্তি রয়েছেন। ১ শতাংশ করে রোগী আছেন বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। সব মিলিয়ে সারা দেশে আক্রান্তদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন রাজধানীর নয়টি সরকারি হাসপাতালে।
আবার বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন আজগর আলী হাসপাতাল ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে; ৪ শতাংশ করে। এছাড়া হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৩ শতাংশ, সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং গ্রীন লাইফ হাসপাতালে ২ শতাংশ করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ হিসেবে রাজধানীর ৭ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৯ শতাংশ রোগী। সব মিলিয়ে রাজধানীর ১৬ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৭৬ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিকল্পনায় ঘাটতির কারণেই পরিস্থিতি এমন বিস্ফোরক হয়ে ওঠেছে। তারা বলেন, একসময় বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগটি মৌসুমি রোগ হিসেবেই গণ্য হতো। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরদারির অভাব ও অব্যবস্থাপনার কারণে গত কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গু ভাইরাস আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল বলেন, সিটি করপোরেশনগুলো মশা নিধন আর স্বাস্থ্য বিভাগ চিকিৎসা প্রদানের দায়িত্ব পালন করছেন। ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় তারা পরস্পরকে দায়ী করে বক্তব্য দিচ্ছে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। স্বাস্থ্য বিভাগও এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে কোনো কার্যকর গবেষণা করতে পারেনি। এমনকি কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে ডেঙ্গুর সংক্রমণ হলেও সেদিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ কারণে মৌসুমের আগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা করোনার মতো বেড়ে গেলে পরিস্থিতি সামাল দিতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই তিনি সবার প্রতি বাসাবাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা এবং মশার কামড় থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার করার আহ্বান জানান।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.