এরদোয়ান: ইইউর দরজা খুলুন, সুইডেনের জন্য ন্যাটোর পথ খুলে দেবো

ন্যাটো সামরিক জোটে সুইডেনের যোগদানের পথে নতুন শর্ত যোগ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ১০ জুলাই, সোমবার তিনি বলেন, তুরস্কের পার্লামেন্টে ন্যাটো সামরিক জোটে সুইডেনের যোগদানের প্রস্তাব অনুমোদন করার আগে ইইউ ব্লকে আঙ্কারার যোগ দেওয়ার পথ খুলে দেওয়া উচিত। খবর রয়টার্স।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

২০০৫ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এরদোয়ানের প্রথম মেয়াদে দায়িত্বে থাকাবস্থাতেই ইইউতে ঢোকার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছিল তুরস্ক। তবে বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যুতে তুরস্ক ও ইইউর সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেলে এ আলোচনা খুব বেশি দূর আগায়নি। বিশেষ করে ২০১৬ সালে তুরস্কে একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের চেষ্টার পর এই দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি হয়। অবশ্য এখন তাদের মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। কারণ ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ন্ত্রণে ইইউর কাছে আঙ্কারার সহযোগিতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ অবস্থায় সুইডেনকে ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারে সবাই তুরস্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে এরদোয়ান আগে তুরস্ককে ইইউর অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তোলেন।

লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগে সোমবার এরদোয়ান বলেন, যারা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তুরস্ককে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দরজায় অপেক্ষা করিয়ে রেখেছে, তাদের প্রতি বিষয়টিতে নজর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীর সাথে এরদোয়ানের করমর্দন

তিনি বলেন, প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের জন্য পথ উন্মুক্ত করুন। তারপর আমরা সুইডেনের জন্য ন্যাটোর পথ খুলে দেব। ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে এই আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করবেন বলেও জানান তিনি। এর আগে রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে আলাপকালেও এ কথা উল্লেখ করেছেন বলে দাবি করেন এরদোয়ান।

এ ব্যাপারে ইউরোপীয় কমিশনের একজন মুখপাত্র জানান, ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্প্রসারণ আলাদা প্রক্রিয়া। ইইউতে অন্তর্ভুক্ত হতে আগ্রহী দেশের যোগদান প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দেশের যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। তাই দুটি প্রক্রিয়াকে মিলিয়ে ফেলা যাবে না।

অন্যদিকে এরদোয়ানের এ মন্তব্য সম্পর্কে ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, তিনি আঙ্কারার ইইউ সদস্যপদকে সমর্থন করেন। তবে সুইডেন ইতোমধ্যে ন্যাটোতে যোগদানের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভিলনিয়াসে এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া এখনও সম্ভব।

সুইডেন ও ফিনল্যান্ড গত কয়েক দশক ধরে সামরিক নিরপেক্ষতার নীতি অবলম্বন করে আসছিল। তবে গত বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর নিরপেক্ষতার নীতি থেকে সরে আসে এবং ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আবেদন করে। তবে তুরস্ক তাতে অসম্মতি জানায়। অবশেষে তুরস্ক আপত্তি তুলে নিলে গত এপ্রিলে ফিনল্যান্ড ন্যাটো সদস্যপদ পায়।

তবে তুরস্ককে রাজি করাতে না পারায় সুইডেন এখন পর্যন্ত ন্যাটোর সদস্য হতে পারেনি। আঙ্কারা বলছে, তুরস্ক যাদের সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিরুদ্ধে সুইডেন যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি। বরং এসব সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দেয় দেশটি। তবে এবার এ ইস্যুটি ছেড়ে ইইউর সদস্যপদ পাওয়াকেই সুইডেনের জন্য ন্যাটোতে যাওয়ার শর্ত বানিয়েছে তুরস্ক।