ভেঙে গেল নেদারল্যান্ডসের সরকার

ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের সরকার ভেঙে গেছে। অভিবাসন নীতি নিয়ে বিরোধের কারণে দেশটির সরকারের পতন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট গতকাল শুক্রবার রাজার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে এখন দেশটিতে নতুন করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। নতুন সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভা দায়িত্ব পালন করবে। খবর সিএনএন।

মার্ক রুট

খবরে বলা হয়, দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের রক্ষণশীল ভিভিডি পার্টি নেদারল্যান্ডসে আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা কমিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়ার পর চার দলীয় জোটের অংশীদার দুই দল তা নাকচ করে দেয়। এতেই সংকটের সূত্রপাত হয়।

এ বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় হেগে সাংবাদিকদের রুট বলেন, অভিবাসন নেদারল্যান্ডসের একটি প্রধান রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা। এখন আমরা যেহেতু এই বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে পারিনি, তাই আমরা সম্মিলিতভাবে মনে করছি, জোটের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেছে।

নেদারল্যান্ডসের অভিবাসী

চার জোট সদস্যদের ‘অভিবাসন নীতিতে খুব ভিন্ন মতামত রয়েছে‘ উল্লেখ করে রুট আরও বলেন, দুর্ভাগ্যবশত আমাদের স্বীকার করতে হচ্ছে যে, মতের এই ভিন্নতা সমাধানযোগ্য নয়।

রাজা উইলেম-আলেকজান্ডারকে সরকারের পদত্যাগের কথা জানানো হয়েছে। তার কাছেই রুট পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। দেশটির সাধারণ নির্বাচন আগামী নভেম্বরে হতে পারে। সে পর্যন্ত রুট তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

গতকাল শুক্রবার চার দলীয় জোটের বিতর্কের মূলে ছিল অভিবাসন নীতি। আবাসন ঘাটতির কথা উল্লেখ করে রুটের পিপলস পার্টি ফর ফ্রিডম অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (ভিভিডি) এবং খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাটরা নেদারল্যান্ডসে আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা কমিয়ে আনার প্রস্তাব দেয়। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়, দেশটিতে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের সঙ্গে মিলিত হতে চাওয়া আত্মীয়দের সংখ্যা বছরে ২০০-এর মধ্যে সীমিত রাখা এবং যুদ্ধ শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ভিন্ন ক্যাটাগরি তৈরি করা। তবে জোটের বাকি দুই সদস্য ডি৬৬ এবং খ্রিস্টান ইউনিয়ন ‘পরিবার ভাঙার’ কথা বলে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে।

নেদারল্যান্ডস ২০২২ সালে ৪৬ হাজার অভিবাসীর আশ্রয়ের আবেদন পেয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই বছর সংখ্যাটি ৭০ হাজার পেরিয়ে যেতে পারে। দেশটি ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ‘অস্থায়ী সুরক্ষা‘র অধীনে এ পর্যন্ত প্রায় ৯৫ হাজার ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে গ্রহণ করেছে।

নেদারল্যান্ডসের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে সরকার পরিচালনাকারী নেতা হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন ৫৬ বছর বয়সী রুট। তার নেতৃত্বাধীন বর্তমান জোট সরকার ক্ষমতায় আসে গত বছরের জানুয়ারিতে। ২০১০ সালের অক্টোবরে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। এরপর টানা চারবার সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন রুট।

জ্যেষ্ঠতার দিক বিবেচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওর্বানের পরই রয়েছেন তিনি। আগামী নির্বাচনেও ভিভিডি পার্টির নেতৃত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে তার।