ইউক্রেনে বিতর্কিত ক্লাস্টার বোমা পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র!

বিশ্বজুড়ে সমালোচিত অস্ত্র হিসেবে পরিচিত ক্লাস্টার বোমা ইউক্রেনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শতাধিক দেশে নিষিদ্ধ এই অস্ত্র মোতায়েন নিয়ে নানা ধরনের উদ্বেগের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র সহায়তা হিসেবে ১৫৫ মিলিমিটারের হাউইৎজার কামান থেকে ছোড়া ক্লাস্টার বোমার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। খবর আল জাজিরা।

ক্লাস্টার বোমা

জানা গেছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনসহ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ইউক্রেনে ক্লাস্টার বোমাসহ এসব অস্ত্র পাঠানোর সুপারিশ করেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইউক্রেনের জন্য নতুন করে মোট ৮০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্রের প্যাকেজের ঘোষণা আসতে যাচ্ছে। এর মধ্যে থাকবে হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম, ব্র্যাডলি ফাইটিং ভেহিকেল ও সাঁজোয়া সেনাদের বহনকারী স্থলযান। ক্লাস্টার বোমাও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার বিশেষ অভিযান শুরুর পর এটি হবে ইউক্রেনে ৪২তম সহায়তা প্যাকেজ।

ইউক্রেনের যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র, ফাইল ছবি

ক্লাস্টার বোমার ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সক্ষমতার কারণে অনেক দেশই যুদ্ধক্ষেত্রে এ বোমা নিষিদ্ধ করেছে। তবে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বর্তমান পরিস্থিতি ক্লাস্টার বোমার ব্যবহারকে ‘শতভাগ প্রয়োজনীয়’ করে তুলেছে। রাশিয়ার হামলা মোকাবেলায় ক্লাস্টার বোমা ইউক্রেনের জন্য উপকারী হবে। কিয়েভের পাল্টা আক্রমণকে ধীর করে দিতে রাশিয়ান পরিখা কৌশলের বিরুদ্ধে এটি বেশ কার্যকরী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আবিষ্কার হওয়া ক্লাস্টার বোমা এমন এক ধরনের অস্ত্র, যা ছোড়ার পর আকাশেই এটি থেকে শত শত ছোট ছোট বোমা বেরিয়ে মাটিতে পড়ে। ফলে এগুলো বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সক্ষম। এ বোমার সাহায্যে বৈদ্যুতিক পাওয়ার ট্রান্সমিশন কিংবা যুদ্ধ বিমানের রানওয়ে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া যায়। আবার এই বোমার সাহায্যে রাসায়নিক বা জৈবিক অস্ত্র ছড়িয়ে দেওয়াও সম্ভব। পরিকাঠামোর পাশাপাশি ব্যাপক হারে মানুষ হত্যা করা যায় এই বোমার মাধ্যমে।

ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর এত বেশি সক্ষমতার কারণে অনেক দেশই এ অস্ত্র থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। ১২০টির বেশি দেশ ‘ক্লাস্টার মিউনিশন’ বিষয়ক ২০০৮ সালের জাতিসংঘ কনভেনশনে সম্মতি জানিয়েছে। তবে ইউক্রেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। তবে ২০০৯ সালের ১ শতাংশের বেশি ক্লাস্টার গোলাবারুদ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাস করে যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য বর্তমান পরিস্থিতিতে বাইডেন ওই আইন বাতিল করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) অভিযোগ করেছে, এর আগে ইউক্রেন ও রাশিয়া ব্যাপকহারে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে। রাশিয়া ব্যাপকভাবে ক্লাস্টার বোমার ব্যবহার করে অনেক বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে। অন্যদিকে ২০২২ সালে রুশ-অধিকৃত শহর ইজিয়ামে ইউক্রেন ক্লাস্টার বোমা হামলা চালালে অন্তত ৮ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।