এক দশকের অভিমান ভুলে গেল তুরস্ক-মিশর!

মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব বিশ্বে সম্পর্ক পুনস্থাপনের যে ধারা শুরু হয়েছে তাতে এবার যুক্ত হয়েছে মিশর ও তুরস্ক। নিজেদের মধ্যকার এক দশকের তিক্ততা ভুলে আবারও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করছে দেশ দুটি। এরইমধ্যে দুই দেশ একে অপরের রাজধানীতে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেছে। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক ঘোষণায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। খবর রয়টার্স ও আল জাজিরা।

কাতারের আমিরের উপস্থিতিতে করমর্দন করছেন দুই প্রেসিডেন্ট

দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই পদক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্বাভাবিককরণের লক্ষ্যে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে পারস্পরিক ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে। আঙ্কারায় মিশরের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমর এলহামামিকে এবং কায়রোতে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত হিসেবে সালিহ মুতলু সেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

২০১৩ সালে আঙ্কারার মিত্র তৎকালীন মিশরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে তুরস্ক ও মিশরের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ওই বছরই তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে কায়রো। তারা দাবি করে, তাদের ক্ষতি করছে এমন সংগঠনকে মদদ দিচ্ছে তুরস্ক। এ ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়।

তুরস্ক ও মিশরের পতাকা

পরবর্তী সময়ে মিশরের তৎকালীন সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। অন্যদিকে ২০১৯ সালে আদালতে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান মোহাম্মদ মুরসি। পুরো ঘটনায় তুরস্ক ও মিশরের সম্পর্কে বেশ তিক্ততা তৈরি হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বরে তুরস্ক ও লিবিয়া ভূমধ্যসাগরের সামুদ্রিক এলাকার সার্বভৌমত্বের বিষয়ে একটি চুক্তিতে সই করলে তিক্ততা আরও বৃদ্ধি পায়।

তবে গত কয়েক বছর ধরে আঙ্কারা আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতের দিকে নজর দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ২০২১ সালে আঙ্কারা ও কায়রোতে দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের সময় দোহায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির হাত মেলানোর মধ্যে দিয়ে আঙ্কারা-কায়রোর সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা জোরদার হয়।

ফেব্রুয়ারিতে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর দুই নেতা টেলিফোনে কথা বলেন। এছাড়া মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শউকরি কায়রো থেকে সংহতির বার্তা জানাতে তুরস্ক সফর করেন। চলতি বছরের মে মাসে এরদোয়ানকে ফোন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানান এল সিসি। এরই ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রদূত নিয়োগে সম্মত হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ এ দুই দেশ।

এদিকে আঙ্কারা মিশর ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের সঙ্গেও সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।