নারী নির্যাতন মামলার অধিকাংশই ভুয়া!

দেশের বিভিন্ন আদালতে দায়ের হওয়া নারী নির্যাতন মামলার অধিকাংশই ভুয়া বলে জানা গেছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, আদালতে দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলার ৮০ শতাংশই ভুয়া। নারী নির্যাতনের নামে অন্যান্য বিরোধের বিষয়টিও উঠে এসেছে।

ফাইল ফটো

জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ৭২টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩টি মামলার বিচার কাজ চলমান রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা বলছেন, 'এসব মামলার অধিকাংশ মিথ্যা এবং ভুয়া। মামলাগুলোর ৮০ শতাংশই যৌতুক, ধর্ষণ ও যৌন পীড়নের অভিযোগে দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ নারী নির্যাতন হলেও বলা হচ্ছে অন্য ধরনের বিরোধের কারণেই এসব দায়ের করা হয়েছে। বিচারকরা মামলাগুলো আপসে নিষ্পত্তির পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ধরনের মামলাগুলো সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইডের কাছে পাঠানোর কথা বলেছেন বিচারকরা।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, 'এ বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। তবে বিচারেকরা মামলা মিথ্যা হলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।' অন্যদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল জানান, 'বিচারকরা সঠিক মূল্যায়ন করেছেন। কেন এমন হচ্ছে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ২০০০ সালের আইনটির উপযুক্ত সংশোধনী করা উচিত।'

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ মিথ্যা মামলা। সম্প্রতি জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের ঘরোয়া কর্ম-অধিবেশনে জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার ৪০টির বেশি ট্রাইব্যুনালের বিচারকেরা সুপ্রিম কোর্টে এক উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. ইমান আলী।

আলোচনায় বিচারকরা ১০ দফা সুপারিশ করেছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার নারী ডাক্তার দ্বারা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক করা, পরীক্ষায় অংশ নিতে ভিকটিমদের সচেতন করা, পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে দাখিলে পুলিশকে বাধ্য করা, শিশুর বয়স নিয়ে ১৮ এবং ১৬ এর মধ্যে সমতা আনা, ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষার সনদ সময়মতো পাওয়া এবং সাক্ষী ডাক্তারদের আদালতে তলবের বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান করার তাগিদ দিয়েছেন বিচারকরা।

পাশাপাশি বিচারকরা বেশকিছু সুপারিশও করেছেন। এরমধ্যে রয়েছে ছেলে শিশুদের যৌন হয়রানির শাস্তি আইনে যুক্ত করা, মিথ্যা মামলার জন্য জরিমানা, শাস্তি প্রদানে সমতা, আইনের ১৯ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন দেওয়ার ক্ষমতা রহিত করা। এছাড়াও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যৌতুক-সংক্রান্ত যেসব মামলা হয় সেগুলো আপসের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে। 

'নারী ও শিশু নির্যাতন দমন' ট্রাইব্যুনালের এক বিচারক তার নিবন্ধে বলেন, 'আদালতে দায়ের করা মামলার ৮০ শতাংশই যৌতুক-সংক্রান্ত। তবে দায়েরকৃত মামলাগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র যৌতুকের দাবিতে মারধর করে জখম বা গুরুতর জখম এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে যৌতুকের দাবিতে মৃত্যুর ঘটনা বিষয়ক মামলার ঘটনা ৫ শতাংশেরও কম।'

নিবন্ধে আরো বলা হয়, 'যৌতুকের দাবিতে মারধরের মামলাগুলোতে মারপিট করার উপাদান অনেক ক্ষেত্রে থাকেনা। মামলাগুলো আবার একেবারেই মিথ্যা নয়। অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হলে স্ত্রী পক্ষ কোনো উপায়ন্ত না পেয়ে দ্রুত প্রতিকার লাভের আশায় স্বামী এবং তাঁর নিকটাত্মীয়দের আসামি করে নারী নির্যাতন আইনের ১১(গ) ধারার বিধান অনুযায়ী মামলা করেন।'

বিচারকরা ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রেও এই ধরনের প্রবণতা দেখতে পান। যৌতুকের দাবিতে করা মামলা ছাড়া বাকি ২০ শতাংশ মামলার মধ্যে অন্যতম ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন। এই ধরনের অভিযোগে আইনের ৯(৪)(খ) ধারায় ধর্ষণের চেষ্টা বা ১০ ধারার যৌন নিপীড়ন অপরাধের ক্ষেত্রে জামিনের জন্য দেয়া আবেদনে যে দরখাস্ত ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয় তাতে বিচারকেরা ধারাগুলোতে যেই অপরাধের কথা লেখা থাকে সেই অপরাধের উপাদান দেখতে পান না।