যুদ্ধ বন্ধে প্রার্থনা করছেন সুদানি হজযাত্রীরা

সুদানে বর্তমানে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলছে। এরই মধ্যে সুদানি হজযাত্রীরা মক্কায় পৌঁছেছেন। এই হজ যাত্রা সুদানের কামাল কাবাশিকে তার দেশের রক্তক্ষয়ী সংঘাত থেকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অবকাশ দিয়েছে। ইসলামের পবিত্রতম শহরে নিরাপদে পৌঁছে তিনি শান্তির জন্য প্রার্থনা করছিলেন। খবর এএফপি।

সুদানি হজযাত্রীরা যুদ্ধ অবসানের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে সুদানের পশ্চিমে উত্তর দারফুর রাজ্যে গোলাবর্ষণের কারণে কামাল কাবাশির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে ৫২ বছর বয়সী কাবাশি, তার স্ত্রী এবং তাদের পাঁচ সন্তানের কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ তারা কয়েকদিন আগেই রাজ্যের রাজধানী এল ফাশারের একটি নিরাপদ এলাকায় চলে গিয়েছিলেন।

দেশটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই জেনারেলের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই বর্তমানে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। ফলে ভয়াবহ এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করছেন সুদানিরা।

স্থল ও সমুদ্রপথে চার দিনের বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে কাবাশি সৌদি আরবের পবিত্র শহর মক্কায় হজ করার জন্য এসেছেন। হজযাত্রীদের জন্য নির্ধারিত সাদা পোশাক পরিহিত সরকারি এই কর্মচারী বলেছেন, ‘আমি আমার পরিবার এবং সন্তানদের জন্য খুব ভয় পাচ্ছি। আমার বাড়ির উঠানে কামানের গোলা এসে পড়েছিল। এতে আমার বাড়ির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।’

মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে আমার হাত তুলেছি। সুদানের সমস্যার সমাধান করার জন্য তার কাছে অনুরোধ করছি।’

বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ হজযাত্রী বিমানে করে সৌদি আরব আসেন। তবে সুদান থেকে হজযাত্রীরা বেশিরভাগই নৌকায় করে এসেছেন। কারণ দেশটির প্রধান বিমান চলাচল কেন্দ্র খার্তুমের বিমানবন্দর ভয়াবহ লড়াইয়ের কারণে পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে।

হজের জন্য কাবাশি দুই দিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পার হয়ে পোর্ট সুদানে আসেন। সেখানে তিনি একটি জাহাজে করে লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে জেদ্দায় পৌঁছেন। কাবাশি এর আগেও একবার হজ করেছিলেন। তবে তার বন্ধু আহমেদ জাবের জীবনে প্রথমবারের মতো হজ করতে এসেছেন। ৬২ বছর বয়সী জাবের একজন ব্যবসায়ী। তিনি হজের জন্য ৪ হাজার ৩০০ ডলারের বেশি ফি দিয়েছিলেন এবং কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

অশ্রুসিক্ত আহমেদ জাবের বলেছেন, ‘গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকেই এই বছর হজ করার পরিকল্পনা করেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম মক্কায় আমার প্রিয়জনদের জন্যই কেবল দোয়া করব। কিন্তু এখন আমি আমার পরিবারের সদস্য ছাড়াও সমস্ত সুদানিদের জন্য দোয়া করছি। আমরা কেবল শান্তির স্বপ্ন দেখছি।’

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা জানিয়েছে, প্রায় ৬ লাখ মানুষ সুদান থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের মতে, সুদানের অভ্যন্তরে ২০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সুদানের যেসব নাগরিক দল বেঁধে মক্কায় এসেছেন, তাদের সাদা পোশাকে দেশের পতাকা ছাপা রয়েছে। গণিতের শিক্ষক হারাম আলীর জন্য পবিত্র এই নগরীতে আসার অর্থ কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশ্রাম নিতে পারা।

তিনি বলেছেন, ‘আমি মানসিকভাবে শান্তিতে আছি। আমি সমস্ত সুদানিদের শান্তির জন্য দোয়া করছি, যাতে তারাও আমার মত একই রকম শান্তি অনুভব করতে পারেন।’ ৪৯ বছর বয়সী গণিতের এই শিক্ষক হজে আসতে পারাকে আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া বড় একটি উপহার বলে মনে করছেন।

কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা ৫০ বছর বয়সী গৃহবধূ মাহা আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘সুদানের পরিস্থিতি খুবই কঠিন। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে পারবে না।’

উল্লেখ্য, ১৫ এপ্রিল সুদানের গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। দেশটির নিয়মিত সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে সংঘটিত এই লড়াইয়ে ২ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। মূলত সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান এবং আরএসএফ প্রধান জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালোর মধ্যে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে এই গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে।