আজ পবিত্র হজ

আজ মঙ্গলবার (২৭ জুন) পবিত্র হজ। সৌদি আরবের ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। ইয়াওমুল আরাফাহ নামে পরিচিত এই দিনটিতে ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে যোগ দিচ্ছেন লাখ লাখ মুসল্লি। তারা আজ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই ময়দানে অবস্থান করবেন।

মিনার পথে সব বয়সী মানুষ

সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বছর দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ২৫ লাখের বেশি মানুষ হজ করবেন। তারা প্রত্যেকেই হাজির হবেন আরাফাতের ময়দানে। অংশ নেবেন হজের নানা আয়োজনে। আর তাদের মুখে ধ্বনিত হবে তালবিয়া- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির। তোমার কোনো অংশীদার নেই। আমি হাজির। সব প্রশংসা ও অনুগ্রহ শুধুই তোমার। সব রাজত্ব তোমার।

বিদায় হজের সময় এ আরাফাতের ময়দানেই খুতবা পাঠ করেছিলেন মানবতার মুক্তির দূত মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স)। তারই অনুকরণে আরাফাতের ময়দানে পড়া হবে খুতবা। উপস্থিত হাজিদের উদ্দেশে এবার হজের খুতবা পড়বেন শায়খ ইউসুফ বিন মুহাম্মদ। তিনি মসজিদে নামিরায় এ খুতবা পাঠ করবেন। এ খুতবা তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাসহ ২০ ভাষায় অনুদিত হবে।

গরমে আরাম দিতে এক হজযাত্রীর মাথায় পানি দিয়ে দিচ্ছেন এক নিরাপত্তাকর্মী

আরাফাতের দিনের ফজিলত ও তাৎপর্য অপরিসীম। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হাজীদের জন্য ফরজ। দিনটিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত এবং গুনাহ মাফের দিন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আরাফাতের ময়দানে হাজীরা ইবাদত-বন্দেগি ও গুনাহ মাফের জন্য কান্নাকাটি করে জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকেন।

মূলত মিনা প্রান্তরে পৌঁছানোর মাধ্যমে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। হজের পাঁচ দিনের প্রথম দিন হাজীদের মিনায় অবস্থান করতে হয়। এখানে অংশ গ্রহণ করা এবং ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকা সুন্নাত। মিনায় অবস্থানের পর আরাফাত ময়দানে অবস্থান, মুজদালিফায় রাত্রিযাপন এবং জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ, কোরবানিসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন হাজিরা। ১২ জিলহজ শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

হজের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে গতকাল মিনায় অবস্থান করেছেন লাখ লাখ হাজি। তবে এবার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হাজিকে মিনায় না নিয়ে সরাসরি আরাফাতে নিয়ে যাওয়া হয়।

সৌদি আরবের হজ কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনার পর এবারই প্রথম বিশ্বের ১৬০টির বেশি দেশ থেকে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ১৮৮ হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। সৌদি আরবের অনেক মানুষও এবার হজ পালন করছেন।

সৌদি আরবের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ আল বাসামি জানিয়েছেন, হাজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হজের দুই লাখ ৩৮ হাজার নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করছেন। হজযাত্রীদের পরিবহন সেবা দিচ্ছে প্রায় ২০ হাজার বাস। তাদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে প্রস্তুত আছেন ৩২ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী। অসুস্থ হাজীদের জন্য মক্কা, মিনা, আরাফাতের ময়দান ও মুজদালিফায় হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অ্যাম্বুল্যান্স, অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র ইত্যাদি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আবহমান কাল থেকেই হজ করতে হাজার হাজার মানুষ মক্কায় গমন করতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। করোনার আগ পর্যন্ত ২০ লাখের ওপর মানুষ হজ করেছেন বলে জানা যায়। তবে করোনার সময় কঠোর বিধি-নিষেধের কারণে ২০২০ সালে মাত্র ১০ হাজার এবং ২০২১ সালে ৬০ হাজার মানুষ হজ পালন করেন। গত বছর করোনার বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল হলে প্রায় ১০ লাখ মুসলমান হজ পালন করার সুযোগ পান। তবে এ বছর আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি মুসলমান হজ করছেন বলে জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।