পুতিন নিখোঁজ, প্রিগোশিন শান্ত, অনিশ্চয়তায় ওয়াগনার সেনারা!

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ৫০০ দিন পূর্ণ হবে জুলাইয়ের ৮ তারিখে। এই দীর্ঘ সময়ে রুশ সেনাবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কিয়েভের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের ওয়াগনার বাহিনী। ভাড়াটে বাহিনী হলেও তারা ইউক্রেনের যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এক বিদ্রোহের ঘটনায় অনেক হিসাব উলট-পালট হয়ে গেছে। খবর বিবিসি।

রোস্তভ-অন-দন শহরে ওয়াগনার বাহিনীর টহল

শনিবার রুশ সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে ওয়াগনার বাহিনী। ওই ঘটনার পর রুশ শহরের কিছু অংশ দখল এবং জাতির উদ্দেশ্যে পুতিনের ভাষণ দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু এরপরই উধাও হয়ে যান পুতিন। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় শান্ত হয়ে ফিরে যান প্রিগোশিন। এ অবস্থায় আগামীর যুদ্ধগুলো কেমন হবে, বিশেষ করে ইউক্রেনের থাকা ওয়াগনার বাহিনী কি আদৌ রুশ পক্ষের হয়ে লড়বে কি না- এগুলোই এখন বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

পুতিনের পাচক বা ক্রেমলিনের পাচক হিসেবে পরিচিতি ছিল ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের। এক সময় ক্ষমতার শীর্ষ ব্যক্তিদের কাছাকাছি থাকতে থাকতে হয়ে উঠেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী। গড়ে তোলেন ভাড়াটে সেনা দল। সুলভে পেয়ে তাদের ব্যবহার করেন পুতিন। বিভিন্ন দেশে রাশিয়ার হয়ে ভাড়ায় লড়তে থাকে ওয়াগনার সেনারা। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে মাঝে মধ্যেই রুশ সেনা কর্তৃপক্ষ ও ওয়াগনারের মধ্যে বাদানুবাদ হতো। গত শনিবার তা রূপ নেয় চরমে। ওয়াগনার সেনাদের বিরুদ্ধে মিসাইল ব্যবহারের অভিযোগ আনে তারা। তাদের ওপর হামলা চালাতে এসেছিল- এই অভিযোগ তুলে ধ্বংস করে রাশিয়ার একটি হেলিকপ্টারও। তারা দাবি জানায়, রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে সরিয়ে দিতে হবে।

এক সময় পুতিনের খুব কাছের লোক ছিলেন এই প্রিগোশিন

এক পর্যায়ে ওয়াগনার যোদ্ধারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে রোস্তভ-অন-দন শহর দখল করে নেয়। নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন সেখানকার সামরিক ঘাঁটিতে। পুরো বিষয়টিকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে উল্লেখ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি জানান, প্রিগোশিন রাশিয়ার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এর সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। পরে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় উত্তেজনা প্রশমিত হয়। দখল-নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে ওয়াগনার বাহিনী সরে যায় রোস্তভ-অন-দন থেকে।

পুরো বিশ্ব এখন রাশিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন মঞ্চ থেকে উধাও হয়ে গেলেন পুতিন ও প্রিগোশিন উভয়েই। কোথাও তাদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের কোনো কথাও শোনা যাচ্ছে না। ফলে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে ওয়াগনার বাহিনীর সদস্যরা। এই মুহূর্তে তাদের করণীয় কী, তারা কি আর রুশ বাহিনীর হয়ে লড়াই করবেন। নাকি যৌথ বাহিনীর যাত্রা এখানেই শেষ- এই উত্তর খুঁজছেন।

শুরু থেকেই স্বাধীনভাবে কাজ করছিল ওয়াগনার বাহিনীর সেনারা। তবে কিছুদিন ধরে তাদের ওপর চাপ আসছিল রুশ বাহিনীতে একীভূত হয়ে যাওয়ার। এতদিন সে চাপ ঠেকিয়ে আসলেও সেটিকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যাবে এবারের বিদ্রোহ। তবে একটি ভাড়াটে গোষ্ঠীকে আদৌ নিয়মিত সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে কি না, করা গেলেও নিয়মিত বাহিনীর সেনারা তাদের সহজভাবে গ্রহণ করবে কি না, সেই জটিল প্রশ্নও সামনে রয়ে গেছে।