ভয় পেলেও বাবাকে খুশি করতে টাইটানে চড়েছিলেন ১৯ বছরের সুলেমান

চারদিনের তল্লাশি শেষে অবশেষে খোঁজ মিলেছে সাবমেরিন টাইটানের। বিস্ফোরণে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাওয়া টাইটানেরই খোঁজ পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা। টাইটানের পাঁচ আরোহীর কোনো খোঁজ পাওয়া না গেলেও উদ্ধারকারীরা তাদের মৃত ঘোষণা করেছেন। অভিযাত্রী দলের সবচেয়ে কম বয়সী সুলেমান এ অভিযাত্রী দলে যেতে ইচ্ছুক ছিলেন না। বাবাকে খুশি করতেই তিনি সঙ্গী হয়েছিলেন টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনে। সে যাত্রাই শেষ যাত্রা হলো পাকিস্তানি এই পিতা-পুত্রের। খবর বিবিসি।

সুলেমান ও শাহজাদা দাউদ

গত রোববারে যাত্রা করা টাইটানের অভিযানে পাঁচ অভিযাত্রী দলের যুক্ত হয়েছিলেন, ৪৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সুলেমান দাউদ। এই দাউদ পরিবার পাকিস্তানের ধনী পরিবারগুলোর অন্যতম। শাহজাদা দাউদের স্ত্রী ক্রিস্টিন এবং আরেক সন্তান আলিনাসহ তারা লন্ডনে বসবাস করেন। গত এক মাস ধরে পরিবারটি কানাডায় অবস্থান করছিল।

শাহজাদা দাউদের বড় বোন আজমেহ দাউদ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তার ১৯ বছর বয়সী ভাতিজা সুলেমান টাইটানে চড়তে চায়নি। এ বিষয়ে তার কিছুটা ভীতিও ছিল। কিন্তু বাবা দিবসের প্রাক্কালে বাবা শাহজাদা দাউদকে খুশি করতেই সে যোগ দিয়েছিল টাইটানিক দেখার অভিযানে।

টাইটান

টাইটান নিখোঁজ হওয়ার খবরে চারদিন উদ্বিগ্ন অবস্থায় কাটিয়েছিলেন আজমেহ দাউদ। এক পর্যায়ের তিনি সবচেয়ে খারাপ কিছু ঘটার আশঙ্কা করছিলেন। শেষপর্যন্ত তার সেই আশঙ্কাই সত্য হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার খোঁজ মেলে টাইটানের ধ্বংসাবশেষের।

শাহজাদা দাউদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, শাহজাদা পাকিস্তানের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান এনগ্রো কর্পোরেশন নামের বড় একটি সার কোম্পানির ভাইস-চেয়ারম্যান। এছাড়া তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হাউকিউলিস করপোরেশনের বিভিন্ন সংস্থায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই সঙ্গে তিনি এসইটিআই নামের ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থার সাঙ্গে কাজ করতেন।

শাহজাদা বৃটিশ রাজা চার্লসের প্রতিষ্ঠিত দুটি দাতব্য সংস্থা ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট এবং প্রিন্স ট্রাস্ট ইন্টারন্যাশনালেও সহায়তা করেছেন বিভিন্ন সময়। বিভিন্ন সময় জাতিসংঘ ও অক্সফোর্ড ইউনিয়নে বক্তৃতা দেওয়া শাহজাদা দাউদ বিভিন্ন প্রাকৃতি নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিলেন। শিক্ষাজীবনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া ও ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব বাকিংহ্যামে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৯৮ সালে তিনি গ্র্যাজুয়েশন সম্পূর্ণ করেন।

আজমেহ দাউদ জানান, প্রকৃতি নিয়ে আগ্রহী শাহজাদা টাইটানিকের প্রতি যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন। ফলে ছেলেকে নিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার অভিযানে টাইটানের টিকিট কিনেছিলেন তিনি। আজমেহ বলেন, টাইটানিকের প্রতি তারও আগ্রহ আছে, কিন্তু তিনি কখনোই এই অভিযানে যাওয়ার কথা ভাবেননি।