টাইটানের পরিণতিও হলো টাইটানিকের মতোই: সবাইকে মৃত ঘোষণা

১১১ বছর আগে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু তাদেরও যে টাইটানিকের যাত্রীদের মতো পরিণতি হবে, তা কল্পনা করতে পারেননি কেউ। কয়েকদিন নিখোঁজ থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের পাশেই পাওয়া যায় টাইটান সাবমেরিনটির ধ্বংসস্তূপ। সেখানে অভিযাত্রীদের কাউকে পাওয়া না গেলেও সবাইকেই মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। খবর বিবিসি, আল জাজিরা।

টাইটানিক ও টাইটান

কয়েকদিন আগেই গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের থ্রি-ডি ছবি। এরপরই সেটি দেখার আগ্রহ বেড়ে যায়। তাদের এই চাহিদা মেটাতে আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে সাবমেরিন পাঠানোর ব্যবস্থা করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওশানগেট।

গত রোববার কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড প্রদেশের সেন্ট জন শহর থেকে টাইটান ডুবোজাহাজটি নিয়ে রওনা দেয় আরেকটি জাহাজ ‘পোলার প্রিন্স’। আটলান্টিকের তলদেশের যে জায়গায় টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, পোলার প্রিন্স সেখানে পৌঁছানোর পর পাঁচ আরোহীকে নিয়ে সাগরের তলদেশের উদ্দেশে যাত্রা করে সাবমেরিন টাইটান। ১৩ হাজার ফুট নিচে নামার লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরুর পৌনে দুই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণকক্ষ সাবমেরিনটির সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে।

টাইটানের পাঁচ আরোহী

টাইটান নামের ওই সাবমেরিনের আরোহী ছিলেন পাঁচজন। তারা হলেন, মহাকাশভ্রমণের পাশাপাশি দক্ষিণ মেরু পরিভ্রমণ করা অভিযাত্রী ব্রিটিশ নাগরিক হামিশ হার্ডিং (৫৮), যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী পাকিস্তানের নামকরা ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ (৪৮) ও তার ছেলে কলেজশিক্ষার্থী সুলেমান দাউদ (১৯), ফ্রান্সের নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য ও টাইটানিক বিশেষজ্ঞ পল অঁরি নাজোলে (৭৭) এবং সাবমেরিন পাঠানো প্রতিষ্ঠানের ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশ (৬১)।

নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে টাইটানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই শুরু হয় ব্যাপক তল্লাশি। বিশাল এলাকায় তল্লাশি চালিয়েও চারদিন ধরে তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। এদিকে সাবমেরিনে থাকা অক্সিজেন শেষ হয়ে আসতে থাকায় তাদের জীবিত পাওয়া আশা একপ্রকার ছেড়েই দেন সংশ্লিষ্টরা। তারপরও মিরাকলের আশায় উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রাখে উদ্ধারকারীরা। গত মঙ্গল ও বুধবার উদ্ধারকারী দল আটলান্টিকের তলদেশ থেকে কিছু শব্দ শুনতে পাওয়ার পর অভিযান আবারো জোরদার হয়। উদ্ধার অভিযানে যুক্ত হয় ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের দুটি জাহাজ। ‘ভিক্টর-৬০০০’ নামের বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন রোবটও নামানো হয় উদ্ধারকাজে। শেষপর্যন্ত ওই রোবটই টাইটানের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করে ছবি তুলে পাঠায়।

ওশানগেট গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে টাইটানের পাঁচ আরোহীর মৃত্যুর কথা জানায়। পরে মার্কিন কোস্টগার্ড বাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের আধা কিলোমিটারের মধ্যেই টাইটানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। সেখানে বড় বড় পাঁচটি টুকরা পাওয়া গেছে, যেগুলো টাইটানের বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিস্ফোরণে টাইটান ধ্বংস হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ঠিক কখন বা কিভাবে সেটি বিস্ফোরিত হয়েছে, সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি টাইটান কর্তৃপক্ষ। আরোহীদের মরদেহ আদৌ উদ্ধার করা যাবে কি না, সে বিষয়েও কিছু জানাতে পারেনি উদ্ধারকারীরা।

মার্কিন কোস্টগার্ড বাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মউগার বলেন, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ৪৮০ মিটার দূরে টাইটানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে। মনে করা হচ্ছে, দুর্ঘটনার সময় প্রথমে ডুবোযানটি ভেতরের দিকে দুমড়েমুচড়ে গিয়েছিল। টাইটানের আরোহীদের মরদেহ উদ্ধার করা যাবে কি না, এখন তা বলা কঠিন।

উল্লেখ্য, ১৯১২ সালে ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু করার পর বিশাল হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে টাইটানিক ডুবে যায়। এতে মারা গিয়েছিল দেড় হাজারের বেশি মানুষ। উত্তর আটলান্টিকের তলদেশে ১২ হাজার ৫০০ ফুট গভীরে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।