মিয়ানমারের ২ ব্যাংক ও মন্ত্রণালয়ের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্র সরকার মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় দুটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একইসঙ্গে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বৈদেশিক লেনদেনের পথ রুদ্ধ করতে এবং দেশটির জনগণের ওপর সামরিক বাহিনীর নিপীড়নের শাস্তি হিসেবে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় দুই ব্যাংককে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ গতকাল বুধবার মিয়ানমার ফরেন ট্রেড ব্যাংক ও মিয়ানমার ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংককে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। মিয়ানমারের সরকার-নিয়ন্ত্রিত এ দুটি ব্যাংক সে দেশের সামরিক জান্তাকে বৈদেশিক লেনদেনের সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে জান্তার আয় বৃদ্ধি এবং জনগণের ওপর নিপীড়নের সক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে।

এ সংক্রান্ত বিবৃতিতে আন্ডার সেক্রেটারি অব দ্য ট্রেজারি ফর টেররিজম অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্রায়ান নেলসন বলেছেন, বার্মার সামরিক রেজিম অস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী আমদানির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশগম্যতাকে কাজে লাগিয়েছে। এসব ব্যাংক স্থানীয় মুদ্রা কিয়াটকে ডলার ও ইউরোতে রূপান্তর করে। ব্যাংকগুলোর অফশোর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সামরিক জান্তা আন্তর্জাতিক বাজারে কেনাকাটা করতে, এমনকি নিষেধাজ্ঞাভুক্ত রুশ কোম্পানি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারে।

মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে বার্মার সামরিক বাহিনী মার্কিন নিষেধাজ্ঞাভুক্ত রুশ প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্যদের কাছ থেকে কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ মূল্যের অস্ত্র ও জিনিসপত্র আমদানি করেছে। সেনা শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরতদের ওপর নির্বিচার শক্তিপ্রয়োগ করা হয়েছে।

মিয়ানমারের সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে সে দেশের ব্যাংক ও গ্যাস খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে আসছে। ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা এলেও গ্যাস খাতকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখায় হতাশা প্রকাশ করেছে একাধিক সংগঠন।

অলাভজনক সংস্থা আর্থরাইটস ইন্টারন্যাশনাল দুই ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পথ অনুসরণ এবং মিয়ানমা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এন্টারপ্রাইজকে কালো তালিকাভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। সামরিক জান্তার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস মিয়ানমা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস এন্টারপ্রাইজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইইউ।

মিয়ানমারের নির্বাসিত বিরোধীদলীয় নেতা ও ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট দুয়া লাশি লা দুই ব্যাংক ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছেন। টুইটারে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই সামরিক জান্তার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের পথ বন্ধ করতে হবে এবং তেল ও গ্যাস খাতসহ তাদের রাজস্ব আয়ের প্রবাহ বন্ধ করতে হবে।