অখণ্ড ভারত: দিল্লির কাছে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চায় কাঠমান্ডু

ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবনে স্থাপিত বিতর্কিত অখণ্ড ভারত মানচিত্রের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চায় নেপাল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে দিল্লিতে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূতকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নেপালের পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। খবর কাঠমান্ডু পোস্ট।

ভারতের পার্লামেন্টে স্থাপিত বিতর্কিত মানচিত্র

নয়াদিল্লিতে নেপালের একজন কূটনীতিক বলেছেন, সরকারের তরফ থেকে আমাদেরকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ম্যুরালের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চাইতে বলা হয়েছে। নেপালের লুম্বিনী, কপিলবস্তু ও দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের ভূখণ্ডকে বিতর্কিত ওই মানচিত্রে ভারতের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ২৮ মে নতুন পার্লামেন্ট ভবন উদ্বোধন করেন। ভবনে স্থাপিত ম্যুরাল নিয়ে নেপাল, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বিতর্ক দেখা দিলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর গত ৮ জুন বলেন, দেওয়ালে আঁকা ওই মানচিত্রে সম্রাট অশোকের আমলে (৩০৪-২৩২ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ) মৌর্য সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি দেখানো হয়েছে।

নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, চলতি মাসে আরও আগের দিকে ভারত সফরকালে প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল প্রচন্ডা নয়াদিল্লির নেপাল দূতাবাসকে বিতর্কিত ম্যুরালের তথ্য সংগ্রহের নির্দেশনা দেন। দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কাঠমান্ডুতে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারতের স্থাপিত ম্যুরালের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে এর তেমন সম্পর্ক নেই।

সূত্র জানায়, প্রতিবেদন পাওয়ার পর সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দূতাবাসকে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উত্থাপন করতে বলা হয়েছে এবং তাদের কাছে ম্যুরালের ব্যাখ্যা চাইতে বলা হয়েছে।

নেপালের পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাবুরাম ভট্টরাই ও অন্য আইনপ্রণেতারা অখণ্ড ভারত মানচিত্রের বিষয়টি ভারতের কাছে উপস্থাপন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এনপি সউদ পার্লামেন্ট কমিটিকে বলেছেন, সরকার নয়াদিল্লির নেপাল দূতাবাসকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছে। আমরা ভারতের পার্লামেন্টে ম্যুরাল স্থাপনের বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছি। নেপালের আন্তর্জাতিক সীমান্ত নিয়ে আমাদের জাতীয় ঐকমত্য রয়েছে। ২০২০ সালের ১৩ জুন আমাদের জাতীয় মানচিত্র হালনাগাদ করা হয়েছে।

বৈঠকে সিপিএন (মাওয়িস্ট সেন্টার)-দলীয় এমপি বর্ষ মান পান বলেন, পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনার ক্ষেত্রে নেপালকে সবসময় ভূরাজনৈতিক সংবেদনশীলতার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদেরকে রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। না হলে দেশের জন্য সমস্যা হবে।

নেপালি কংগ্রেস পার্টির এমপি বীমলেন্দ্র নিধি ও সিপিএন (ইউনিফায়েড সেন্টার) দলের প্রধান মাধব নেপাল তেরাই অঞ্চলে বন্যার বিষয়টি ভারতের কাছে তুলে ধরতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

বীমলেন্দ্র নিধি বলেন, নেপাল ও ভারত উভয় পক্ষকে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি, সমঝোতা ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে হবে। নেপাল-ভারত সীমান্ত বরাবর ভারত একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণ করছে। সড়ক নির্মাণের অজুহাতে ভারতের একের পর এক বাঁধ নির্মাণ নেপালের ভূখণ্ডকে হুমকিতে ফেলছে। এসব সড়ক নির্মাণের আগে ভারতের উচিত নেপালের অনুমতি চাওয়া। তারা সেটা করছে না। এ বিষয়ে নেপাল সরকার চুপ কেন, প্রশ্ন করেন তিনি।