হঠাৎ সেই মার্কিন অস্ত্র নিয়ে সরব ইসরায়েল

প্রায় দুই বছর আগে আফগানিস্তান ছাড়ার সময় যুক্তরাষ্ট্র যে সব অস্ত্র ফেলে এসেছিল সেগুলো মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন শত্রু রাষ্ট্র ও সংগঠনের হাতে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা করছে ইসরায়েল। সম্প্রতি দেশটির একজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। খবর মিডলইস্টমনিটর।

যুক্তরাষ্ট্র ফিরে যাওয়ার আগে অনেক কিছু নষ্ট করে দিয়ে যায়

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা নিউজউইককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০ বছর অবস্থানের পর দ্রুতগতিতে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময় যুক্তরাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আফগানিস্তানে রেখে আসতে বাধ্য হয়। পরবর্তী সময়ে সেগুলো জব্দ করে আফগানিস্তান সরকার। সেই অস্ত্রগুলোই ইরান, ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যে সক্রিয় থাকা ইসরায়েলের বিভিন্ন শত্রুপক্ষের কাছে চলে যেতে পারে।

তিনি দাবি করেন, গত বছর ১১ দিনব্যাপী যুদ্ধের সময় গাজায় হামাসের যোদ্ধাদের কাছে বেশকিছু ছোট অস্ত্র দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেগুলো আফগানিস্তানে ফেলে আসা মার্কিন অস্ত্র।

আফগানিস্তানে জব্দ মার্কিন অস্ত্র

তালেবানসহ আফগানিস্তানের বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দুই দশক লড়াইয়ের পর ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তাদের সব সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। তালেবান সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টিতে কড়াকড়ি আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্র তড়িঘড়ি করে সেনা প্রত্যাহারে বাধ্য হয়। সে সময় তারা প্রচুর পরিমাণে সামরিক সরঞ্জাম ফেলে আসতে বাধ্য হয়, যা কয়েক বছর ধরে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ থেকে আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত সময়ে আফগান ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্সেসকে মোট ১৮ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলার মূল্যের যুদ্ধসরঞ্জামসহ প্রতিরক্ষামূলক নানা সরঞ্জাম দিয়েছে। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় সাত দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারের সরঞ্জাম আফগানিস্তানে ফেলে আসতে বাধ্য হয়।

রেখে যাওয়া যুদ্ধ সরঞ্জামের তালিকায় উড়োজাহাজ, ব্ল্যৗক হক হেলিকপ্টার এবং লাইট অ্যাটাক প্লেন, সাঁজোয়া যান, হামভিস এবং মাইন-প্রতিরোধী অ্যাম্বুশ-সুরক্ষিত যান যেমন রয়েছে, তেমনি নানা ধরনের অত্যাধুনিক রাইফেল, মেশিনগান, রেডি, নাইট-ভিশন গগলসের মতো হালকা অস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামও রয়েছে। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এসব সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করে।

যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল, তারা আফগানিস্তান ত্যাগের আগে বেশকিছু সামরিক সরঞ্জাম নষ্ট করে এসেছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় পাইলট, মেরামতের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশের অভাবেও তারা এসব সরঞ্জামের অনেক কিছুই ব্যবহার করতে পারবে না। তারপরও পরবর্তী সময়ে কুচকাওয়াজসহ নানা ক্ষেত্রে এসব অস্ত্র তাদের হাতে দেখা গেছে। নানা অভিযানেও তারা এসব সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ফেলে আসা এসব অস্ত্রের বেশ কিছু তালেবান নিজেই মেরামত করতে সক্ষম। এছাড়া চীনের মতো আফগানিস্তানের বেশকিছু মিত্র দেশও এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করতে পারে। এর পাশাপাশি বেশ কিছু অস্ত্র সীমানা পেরিয়ে অন্য কোনো দেশের হাতেও চলে যেতে পারে। যা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র ইসরায়েলের জন্য হুমকি হতে পারে।

এই কারণে ইসরায়েলের ওই সামরিক কর্মকর্তা আশঙ্কা করছেন, এ অস্ত্র ইরানের হাতে যেতে পারে, এছাড়া ফিলিস্তিনের বিভিন্ন গোষ্ঠীর হাতেও পড়তে পারে। এরই মধ্যে তারা এ ব্যাপারেও প্রমাণও পেয়েছেন।

এর আগে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনকে যেসব অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে, তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইরানসহ বিভিন্ন শত্রু রাষ্ট্রে চলে যাচ্ছে, যা পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।