যে কারণে উলু কেমি মসজিদের মধ্যখানে ওজুখানা

নামাজ আদায়ের জন্য পবিত্রতা অত্যাবশ্যকীয়। আর সে কারণেই মসজিদে ওজুর ব্যবস্থা থাকে। সাধরণত মসজিদের কোনো এক পাশেই হয় এর অবস্থান। কিন্তু তুরস্কের বুরসা নগরীর উলু কেমি মসজিদের মধ্যখানে বসানো হয়েছে ওজুখানা। এর পেছনে রয়েছে মজার এক ইতিহাস।

উলু কেমি মসজিদের ওজুখানা

১৩৯৬ সালে তৎকালীন উসমানি সাম্রাজ্যের রাজধানী বুরসা নগরীর প্রাণকেন্দ্রে একটি বড় মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন সুলতান বায়েজিদ। প্রথমেই সবাই নেমে পড়লেন জায়গা নির্বাচনে। শহরের মাঝখানে একটি জায়গা পছন্দ করলেন প্রকৌশলীরা। তবে ওই জায়গাটিতে ছিল অনেক বসতি।

অবশ্য সুলতান মসজিদ নির্মাণের কথা জানালে জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি হয় সেখানকার লোকজন। সুলতানের পক্ষ থেকে তাদের জন্য অন্যত্র বসবাসের জায়গা দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু গোল বাঁধে সেখানকার এক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিকে নিয়ে। তিনি কোনোভাবেই তার জমি দিতে রাজি নন। তার জায়গাটি ছিল মসজিদের জন্য যে জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে, তার ঠিক মাঝখানে। এই জমি ছাড়া মসজিদ তৈরি করাও সম্ভব ছিল না।

উলু কেমি মসজিদ

সুলতান আবার জোর করে তাকে উচ্ছেদের পক্ষেও নন। শুরু হলো তাকে বুঝিয়ে সরানো যায় কি না, সেই প্রচেষ্টা। শেষপর্যন্ত ওই খ্রিষ্টান ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে ওই জায়গা ছাড়তে রাজি হলেন বটে, কিন্তু জুড়ে দিলেন আজব এক শর্ত। তিনি বললেন, তার জায়গা তিনি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু ওই অংশটুকুতে কেউ নামাজ আদায় করতে পারবে না।

এ অবস্থায় সুলতানের পক্ষ থেকে সে সময়ে প্রধান মুফতির কাছে এ ব্যাপারে সমাধান জানতে চাওয়া হয়। তিনি শর্ত মেনে জায়গা কিনে নেওয়ার পক্ষে ফতোয়া দেন। এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা শেষে প্রকৌশলীরা ঠিক করলেন, খ্রিষ্টান ব্যক্তির ওই জমি বরাবর মসজিদের ওজুখানা তৈরি করা হবে। তাহলে মসজিদ নির্মাণেও কোনো বাধা থাকবে না, আবার শর্তও মানা হবে।

সেই পরিকল্পনা মতোই মসজিদের মাঝখানে নির্মাণ করা হয় ওজুখানা, যা আর সব মসজিদের চেয়ে উলু কেমি মসজিদকে করেছে ভিন্ন। পর্যটনের দেশ তুরস্কে যাওয়া লোকজন যখন বুরসা শহরের এই মসজিদে নামাজ পড়তে যান, প্রথম দর্শনেই তাদের কাছে খটকা লাগে ওজুখানার এই অবস্থানটি। কিন্তু যখন তারা জানতে পারেন এর নেপথ্যে থাকা কাহিনী, তখন ভিন্ন এক ধর্মাবলম্বীর প্রতি প্রতাপশালী সুলতানের এই শ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণে অবাক হয়ে যান তারা।

সূত্র: বুসরাডটকম