যেভাবে কোরআন হিফজ করলেন ফিলিস্তিনি বৃদ্ধা

বয়স বেশি হওয়ার অজুহাতে অনেকে যেখানে স্বাভাবিক ইবাদতই পালন করতে চান না, সেখানে ১০ ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমে পবিত্র কোরআন হেফজ করার সাহস দেখিয়েছেন এক ফিলিস্তিনি বৃদ্ধা। তিনি প্রমাণ করলেন, বয়স তার কাছে কেবলই একটি সংখ্যা। সূত্র আলজাজিরা মুবাশ্বির ও আল আহেদ নিউজ।

খাদিজা আল বারবারাবি

জানা গেছে, ২০১৩ সালে পবিত্র কোরআন হেফজ করতে শুরু করেন ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অবস্থিত প্রাচীন নগরী খলিলের (হেবরন) বাসিন্দা খাদিজা আল বারবারাবি। এক দশকের প্রচেষ্টায় পুরো কোরআন হেফজ শেষ করেন চলতি জুনেই।

আলজাজিরা মুবাশ্বিরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার এই কৃতিত্বে তার সন্তান, নাতি-নাতনিসহ পুরো পরিবারই গর্বিত ও উচ্ছ্বসিত। সম্প্রতি এই উপলক্ষে তারা বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেন।

খাদিজা আল বারবারাবির হেফজ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিবারের সদস্যরা

মহিমান্বিত এই যাত্রা শুরুর ব্যাপারে খাদিজা বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল আমি শুদ্ধরূপে পবিত্র কোরআন পাঠ করব। কিন্তু ঘরে একাকী কোরআন পড়তে গিয়ে বুঝতে পারি, আমার পড়া শুদ্ধ হচ্ছে না। পরে প্রতি শুক্রবার স্থানীয় মসজিদে গিয়ে কোরআন শিখতে শুরু করি।

তবে তিনি যখন মসজিদে গিয়ে কোরআন শিখতে শুরু করেন, ততদিনে তার সহপাঠীরা অনেকখানি এগিয়ে গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খাদিজা তাদের ছুঁয়ে ফেলেন। পুরো কোরআন শুদ্ধরূপে পড়া শেষ করার পর শুরু করেন কোরআন হেফজ করা। তবে অন্যরা যেখানে বছরে কমপক্ষে ১০ পারা হিফজ করতে পারেন, সেখানে খাদিজা প্রতিবছর ৪-৫ পারা করে হেফজ করতে পারেন।

খাদিজা বলেন, বয়স বেশি হওয়ার কারণে তিনি প্রায়ই হেফজ করা অংশ ভুলে যেতেন। ফলে বিশাল এই কোরআনের পুরোটা মুখস্থ রাখতে তাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। এ সমস্যা মোকাবেলায় তিনি দিনের বেশিরভাগ সময় কোরআন তেলাওয়াত করতে থাকতেন। এমনকি রান্নাসহ অন্যান্য কাজকর্মের সময়ও তিনি পেছনের পড়া (আগের মুখস্থ করা) পড়তে থাকতেন।

তিনি জানান, একসময় তার হাতে একটি তাফসীর গ্রন্থ আসে। এটি পাঠ করার কারণে কোরআনের ভাষ্যগুলো তার মনে গেঁথে যেত। ফলে কোরআন হেফজ করা তার জন্য তুলনামূলক সহজ হয়ে যায়। তিনি বলেন, আমার কোরআন হেফজের ক্ষেত্রে আল্লাহর অনুগ্রহের পর সবচেয়ে বড় অবদান আমার বাবার। তিনি আমার কোরআন হেফজের ব্যাপারটিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিলেন।

খাদিজা তার কোরআন হেফজকে তার বাবা, স্বাধীন ফিলিস্তিনের জন্য শহীদ এবং তার হেফজ কার্যক্রমে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন। এখন তার লক্ষ্য কোরআনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। তিনি সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে খাদিজা বলেন, অনেকে মনে করেন, তাদের আর পবিত্র কোরআন হেফজের বয়স নেই। তাদের উদ্দেশ্যে ফিলিস্তিনি এই বৃদ্ধার পরামর্শ, ভুল চিন্তা থেকে বের হয়ে আসুন। সবাই কোরআন হেফজ করুন। এর জন্য বার্ধক্য বা অসুস্থতা কোনো বাঁধা নয়।