টেনিস বিশ্বে নতুন ইতিহাস

বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে রাফায়েল নাদালের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছিলেন নোভাক জকোভিচ। বছরের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যামেই স্প্যানিশ কিংবদন্তিকে টপকে টেনিস অঙ্গনে নতুন ইতিহাস গড়লেন সার্বিয়ান সেনসেশন। রোববার রাতে নরওয়ের ক্যাসপার রুদকে সরাসরি সেটে উড়িয়ে পুরুষ এককে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের কীর্তি গড়লেন জকো।

নোভাক জকোভিচ

ফ্রেঞ্চ ওপেনে এটা সার্বিয়ান তারকার তৃতীয় শিরোপা। সবমিলিয়ে টেনিসে ২৩তম মৌলিক শিরোপা। ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম আছে নাদালের। পুরুষ এককের আরেক মহাতারকা সুইজারল্যান্ডের রজার ফেদেরার মৌলিক ট্রফি জিতেছেন ২০টি। নাদাল-জকো এখনও খেলা চালিয়ে গেলেও গত বছর অবসর নিয়েছেন ‘ফেড এক্সপ্রেস’।

ক্লে কোর্টের রাজা বলা হয় নাদালকে। চোটের কারণে এবারের ফ্রেঞ্চ ওপেন খেলতে পারেননি তিনি। যা জকোর জন্য বড় সুযোগ হয়েই এসেছিল। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ফাইনালে উঠে সুযোগের সদ্ব্যবহারের অপেক্ষায় ছিলেন যকো। কিন্তু প্যারিসে ম্যাচের শুরুতে ব্যাকফুটে চলে যাান তিনি। সার্ভিস ব্রেক করে প্রথম সেটে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যান রুদ।

এরপরই জকোর প্রত্যাবর্তনের গল্পের শুরু। জিতলেন টানা তিন সেটই। শেষ পর্যন্ত জয়টি এসেছে ৭-৬ (৭-১), ৬-৩, ৭-৫ গেমে। এই জয়ে জকো কেবল শিরোপাই জেতেননি, হয়ে গেছেন টেনিসের নতুন ইতিহাস। বছরজুড়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে আগামী সোমবার ডব্লিউটিএ র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষেও উঠতে যাচ্ছেন জকো।

গত বছর ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে নাদালের কাছে হেরেছিলেন জকো। ওই হারের পর থেকেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন তিনি। হারেননি গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টের আর কোনো ম্যাচ। এ সময় উইম্বলডন ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতেন তিনি। কিন্তু করোনাভাইরাস প্রতিশেধক না নেওয়ায় ইউএস ওপেনে তাকে খেলতে দেওয়া হয়নি।

কোর্টে ফিরেই সেটির জবাব দিলেন ৩৬ বছর বয়সী তারকা। জিতলেন বছর শুরুর দুই গ্র্যান্ড স্ল্যামই। তাতে আরও একটা বড় কীর্তি হলো তার। উন্মুক্ত যুগে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম অন্তত তিনবার করে জয়ের রেকর্ড গড়লেন তিনি। ফ্রেঞ্চ ওপেনের মতো ইউএস ওপেনও তিনবার জিতেছেন সার্বিয়ান সেনসেশন।

তবে জকোভিচের সেরা সাফল্য অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে। মেলবোর্নের ১০বারের রাজা তিনি। এ ছাড়া ইল্যান্ডের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নশিপের স্বাদ পেয়েছেন সাতবার। সবমিলিয়ে স্বীকৃত টুর্নামেন্টে তার ট্রফি এখন ৯৪টি। জকো ভাগ বসিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের ইভান লেন্ডলের আসনে। ৯২টি শিরোপা জিতেছেন নাদাল।

১০৯টি ট্রফি জিতে সবার ওপরে আছেন জিমি কনর্স। তার পেছনে থাকা ফেদেরারের ট্রফি ১০৩টি। তাদের এই রেকর্ড জকো ভাঙতে পারবেন কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর তোলা থাকল ভবিষ্যতের হাতে। কার্যত নাদালকে টপকে ইতিহাস গড়তে পেরেই খুশি জকো। তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী স্প্যানিশ কিংবদন্তিও।

ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনাল শেষ হতেই জকোবে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন নাদাল। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, ‘দুর্দান্ত এই অর্জনের জন্য জকোভিচকে অভিনন্দন। কয়েক বছর আগেও ২৩ সংখ্যাটা সবার ভাবনার বাইরে ছিল। আজ (রোববার) তুমি সেটা বাস্তবে রূপ দিলে। পরিবার ও দলের সদস্যদের নিয়ে মুহূর্তটা উপভোগ করো।’

টেনিসের নতুন উচ্চতায় উঠতে পারার উচ্ছ্বাসটা চেপে রাখেননি জকোভিচ। জয়ের পরই র‌্যাকেট ছুড়ে ফেলে কোর্টে শুয়ে পড়লেন তিনি। সেখান থেকে উঠে জকো বলেছেন, ‘আমি খুব সৌভাগ্যবান। ক্যারিয়ারে ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছি। এটা অবিশ্বাস্য। সাত বছর বয়সে আমি যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, উইম্বলডন জিতব, বিশ্বসেরা হব। এটি এখন বাস্তব। এখানে দাঁড়াতে পেরে আমি ধন্য, আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।’