ইন্টারকে কাঁদিয়ে সিটির ত্রিমুকুট

অবশেষে স্বপ্নপূরণ। দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টায় ‘গেরো’ খুলল ম্যানচেস্টার সিটি। শনিবার রাতে ইন্টার মিলানকে কাঁদিয়ে ইংলিশ ক্লাবটি জিতল উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। পেপ গার্দিওলার দুর্দান্ত কোচিংয়ে হলো ইতিহাস। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় এবং সবমিলিয়ে দশম দল হিসেবে ত্রিমুকুট জয়ের কীর্তি গড়ল সিটিজেনরা।

দ্বিতীয় ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়েছে ম্যানচেস্টার সিটি

ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক স্টেডিয়ামে স্নায়ুঠাসা ফাইনালে ইন্টার মিলানকে সিটি হারিয়েছে ১-০ গোলে। ৬৮ মিনিটে ম্যাচের একমাত্র ও জয়সূচক গোলটি করেছেন রদ্রি। গোলটা ফিরিয়ে দিতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেনি ইতালিয়ান ক্লাবটি। তাদের গোলবঞ্চিত করেন সিটির ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এডারসন। এদিন কি পারফর্মটাই না করলেন তিনি!

এই মৌসুমটা দুর্দান্ত কাটিয়েছে সিটি। মৌসুমের লম্বা সময় শিরোপা দৌড়ে পিছিয়ে থেকেও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সিংহাসন ধরে রেখেছেন গার্দিওলার শিষ্যরা। এরপর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে ইংলিশ এফএ কাপের শিরোপা। এবার হলো বৃত্তপূরণ। তাতেই অমরত্বের স্বাদ পেয়ে গেলেন গার্দিওলা।

ইতিহাসের প্রথম কোচ হিসেবে ভিন্ন দুটি ক্লাবের হয়ে ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়েছেন স্প্যানিশ কোচ। এর আগে বার্সেলোনার হয়ে দুবার ইউরোপ সেরার মুকুট জেতেন তিনি। এর মধ্যে ঐতিহাসিক ট্রেবল এসেছিল ২০০৯ সালে। সিটির ডাগ আউটে যেন সেটির পুনরাবৃত্তি করলেন গার্দিওলা। কিন্তু কাজটা সহজ ছিল না।

দুই বছর আগে এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে চেলসির কাছে হেরেছিল সিটি। এবার অবশ্য শুরু থেকেই ফেভারিট ছিল তারা। কিন্তু যতটা সহজ ভাবা হয়েছিল ততটাই কঠিনভাবে ফাইনাল জিতেছে ইংলিশ ক্লাবটি। প্রথমার্ধে ইন্টার মিলানের রক্ষণদুর্গের পরীক্ষা নিলেও কাজের কাজটা করতে পারেনি তারা।

বরং ম্যাচের ৩৫ মিনিটে বড়সড় ধাক্কা খেতে হয়েছে সিটিজেনদের। চোট নিয়ে মাঠের বাইরে চলে যান মধ্যমাঠের প্রাণভোমরা কেভিন ডি ব্রুইনে। বেলজিয়ান মিডফিল্ডারকে হারানোর পর আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকে সিটির। ম্যাচের লাগাম নিজেদের হাতে তুলে নেয় ইন্টার মিলান। কিন্তু গোল পাচ্ছিল না তারাও।

সিটির গোলপোস্টের নিচে যেমন অ্যাডারসন তেমনি ইন্টারের তিন কাঠির নিচে দুর্দান্ত পারফর্ম করে চলেছেন আন্দ্রে ওনানা। শেষ পর্যন্ত আফ্রিকান শেষ প্রহরীর প্রাচীর গুঁড়িয়ে দেন রদ্রি। দুর্দান্ত এক শটে ইতালিয়ান জায়ান্টদর জালে বল পাঠান এই তারকা। ওনানার সাধ্য ছিল না গোল ঠেকানোর। গোলের দৃশ্যটা তিনি শুধুই চেয়ে দেখলেন।

এডারসন তো ছিলেনই, ইন্টার মিলানের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল দুর্ভাগ্যও। ম্যাচের শেষ দিকে ফেডেরিকো ডিমার্কোর হেড ফিরে আসে সিটির ক্রসবারে লেগে। ফিরতি হেড নিয়েছিলেন ইন্টার মিলান ফরওয়ার্ড। কিন্তু এবার বল পায়ে লাগে পরিবর্তিত ফরওয়ার্ড রোমেলু লুকাকুর। হতাশায় ভেঙে পড়ে কালো-নীল শিবির।

লুকাকু অমন পজিশনে না থাকলে হয়তো দ্বিতীয় চেষ্টায় গোলটা পেতে পারতেন ডিমার্কো। খলনায়ক বনে যাওয়া বেলজিয়ান স্ট্রাইকার শাপমোচনের সুযোগ দুবার পেয়েছিলেন। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি। প্রথমবার লুকাকুর মাটি কামড়ানো শট ফেরান এডারসন। ম্যাচের শেষ দিকে হেড নিয়েছিলেন তিনি। এবারও বাধা এডারসন। সিটি গোলরক্ষকের পায়ে লেগে বল প্রতিহত হয়।

ম্যাচের শুরু থেকে ম্যানচেস্টার সিটি ফেভারিট থাকলেও ইন্টার মিলান হয়ে উঠেছিল ভয়ঙ্কর। তাদের আক্রমণ সামলাতে দ্বিতীয়ার্ধজুড়ে হিমশিম খেতে হয়েছে সিটিকে। ভাগ্যিস, এডারসনের মতো গোলরক্ষক ছিলেন। না হলে ম্যাচের ফলটা ভিন্ন হতে পারতো। চতুর্থ শিরোপার জন্য তাই ইন্টার মিলানকে অন্তত আরও এক বছরের জন্য অক্ষোয় থাকতে হচ্ছে। আর ২৩তম দল হিসেবে নতুন চ্যাম্পিয়ন পেল চ্যাম্পিয়নস লিগ।