‘সিংহ-সুপারম্যান’ ইব্রার বিখ্যাত ৫০ উক্তি

ফুটবলের ইতিহাসে পেশাদার ক্যারিয়ারে ৫০০ গোল করা খেলোয়াড় খুব কমই আছেন। মুষ্ঠিমেয় সেই তালিকায় থাকা একজন জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তার ক্যারিয়ারটা ছিল লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সময়ে। এ কারণে ব্যক্তিগত বড় ক্যারিয়ারের স্বীকৃতি পাননি তিনি। তবে সর্বকালের সেরা ১০টা গোলের তালিকা তৈরি করলে নিশ্চিতভাবেই ইব্রার একাধিক গোল থাকবে সেখানে।

জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ

দুই যুগের বর্ণিল ক্যারিয়ারে সাতটি দেশের ১০টি ক্লাবে খেলেছেন ইব্রা। তন্মধ্যে এসি মিলানেই দ্বিতীয়বার ফিরেছেন তিনি। সম্প্রতি অবসরের ঘোষণায় সবাইকে চমকে দিয়েছেন ফুটবল যাযাবর। সান সিরোতে তার বিদায় অনুষ্ঠানটা স্মরণীয় করে রেখেছে ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলান। সেদিন ইব্রার জন্য কেঁদেছেন ভক্তরা, পরে নিজেও কেঁদেছেন। তবে চোটের কারণে বিদায়ী ম্যাচটা খেলতে পারেননি তিনি।

কেবল মাঠের পারফরম্যান্সই নয়, ক্যারিয়ারজুড়ে স্থান, কাল, পাত্রভেদে নানারকম কথা বলেও আলোচনার শীর্ষে ছিলেন ইব্রা। পারফরম্যান্সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতো তার মুখ। এসব কথাবর্তায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অহংকার আর আত্মগর্ব ফুটে উঠেছিল সুইডিশ কিংবদন্তির। সেসব শুনতেও ভালোই লাগত। যা তাকে সবার চেয়ে আলাদা করে রেখেছে।

২৪ বছরের বর্ণিল ক্যারিয়ারে শ’ শ’ বচন রয়েছে ইব্রার। কোনটা রেখে কোনটা বাদ দেবেন এটা ভাবতেই হয়তো সংকটে পড়ে যাবেন! সেখান থেকে ৫০টি উক্তি বাছাই করা কঠিন থেকে কঠিনতর। ৪২ ছুঁই ছুঁই ইব্রার নির্বাচিত সেসব বচন টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

১. সিংহরা কখনোই মানুষের সঙ্গে নিজের তুলনা করে না।

২. আমি ফুটবল অনুসরণ করি না, বরং ফুটবল আমাকে অনুসরণ করে।

৩. আমি রাজার মতে এসেছিলাম এবং কিংবদন্তির মতো চলে যাচ্ছি।

৪. যদি আমাকে লিঙ্গার্ড কিংবা জোনসের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে বলা হয় আমি খুশে মনে ‘কিংবা’কেই বেছে নেব।

৫. সাফল্যের জন্য আমার ক্যারিয়ারে কোনো কোচের দরকার পড়েনি। বরং কোচদের আমাকে প্রয়োজন হয়েছে তাদের সাফল্য ও স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য।

৬. সাংবাদিক: গোল করার পর আপনার কেমন লাগছে?

ইব্রা: আপনি গোলকে জিজ্ঞেস করুন আমার কাছ থেকে গোল হয়ে কেমন লাগছে।

৭. আমি বলকে কখনো নিয়ন্ত্রণ করি না, বরং আমার জন্য বল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে।

৮. যখন আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই তখন কোনো প্রতিফলন দেখতে পাই না। কারণ জ্লাতান দুজন হতে পারে না।

৯. সাংবাদিক: জ্লাতান আপনি নিজেকে সিংহ হিসেবে ভাবেন আর মেসি ও রোনালদোকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করেন। কিন্তু তাদের বেশ কয়েকটি ব্যালন ডি’অর আছে অথচ আপনার নেই কেন?

ইব্রা: ব্যক্তিগত কোনো ট্রফি নিয়ে আমি চিন্তা করি না। যদি আমি সেটা চাইতাম তাহলে আমি গলফ খেলতাম।

১০. আমি যখন বাড়ি ছেড়ে যেতাম তখন বাবাকে বলতাম, আপনি এখন ঘরের মানুষ।

১১. যদি আপনি আমাকে আপনার বাড়িতে দাওয়াত দেন, তখন আপনিই হবেন আমার অতিথি।

১২. আমি আমার দুই পা ব্যবহার করি ফুটবল খেলার জন্য। কিন্তু গোল করার জন্য আমি পুরো শরীরটাই ব্যবহার করি।

১৩. যখন জ্লাতান অনুশীলনে দেরিতে আসে তখন অন্য খেলোয়াড়রা শাস্তি পেত আগে আসার জন্য।

১৪. জ্লাতান কখনো অডিশন দেয় না (আর্সেনাল কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারের দেওয়া ট্রায়ালের প্রস্তাব পাওয়ার পর ১৭ বছর বয়সী ইব্রার প্রতিক্রিয়া)।

১৫. আমি প্রথমে বাঁয়ে গেলাম, সেও গেল। আমি ডানদিকে গেলাম, সে ওদিকেই গেল। তারপর আমি আবার বাঁয়ে যেতেই সে একটা হট ডগ কিনতে চলে গেল।

১৬. কেবল মাত্র পদক রাখার জন্য আমার আলাদা একটা বাড়ি আছে।

১৭. উপহার বলতে আপনি কী বোঝাতে চান? ও (প্রাক্তন প্রেমিকা) তো জ্লাতানকেই পেয়েছে।

১৮. আমি একটা এপার্টমেন্ট খুঁজছি। যদি খুঁজে না পাই, তাহলে হয়তো গোটা একটা হোটেলই কিনে ফেলব।

১৯. ইনজুরিতে পড়া জ্লাতান যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্কর।

২০. কোনো খেলোয়াড়কে কোচিং করিয়ে আপনি এমন প্রতিভা শেখাতে পারবেন না (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক গোলের পর ইব্রার প্রতিক্রিয়া)।

২১. আমার ডাকনাম দেওয়ার কোনো দরকার নেই। ভয় পাওয়ার জন্য কেবল আমার খেলা দেখলেই চলবে।

২২. বুড়ো! বয়স! এসব আবার কী? সুপারম্যানের কি বয়স বাড়ে?

২৩. আমি ইংল্যান্ডে খেললেও সবকিছু ধসিয়ে দিতাম। এমনটা আমি সব জায়গাতেই করেছি।

২৪. আমাকে কেনার অর্থ হচ্ছে, আপনি একটা ফেরারি কিনেছেন। এটা চালাতে প্রিমিয়াম পেট্রোল লাগবে। কিন্তু (পেপ) গার্দিওলা ডিজেল ভরে চালালেন। আসলে তার একটা ফিয়াট কেনা উচিত ছিল।

২৫. (হোসে) মরিনহো হচ্ছেন গার্দিওলার ঠিক উল্টো। তিনি ঘর আলোকিত করা মানুষ। আর গার্দিওলা হচ্ছে পর্দা টেনে দেওয়া মানুষ। আমার ধারণা গার্দিওলা মরিনহোর সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন।

২৬. এখানকার (ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের) খেলোয়াড়দের মধ্যে আমি তেমন কাউকে চিনি না। কিন্তু তারা নিশ্চয়ই জানে আমি কে (পিএসজিতে আসার পর ইব্রার প্রতিক্রিয়া)।

২৭. তারা (ডেনমার্ক দল ও সমর্থকরা) ভেবেছিল আমাকে (হারিয়ে) এভাবেই অবসরে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু আমি তাদের গোটা দেশটাকেই অবসরে পাঠিয়ে দিলাম।

২৮. আমার মনে হয় না ওরা (পিএসজি) আইফেল টাওয়ার সরিয়ে আমার ভাস্কর্য বসাবে। ওরা এটা বললেও আমি বিশ্বাস করব না। যদি তারা এটা পারে তাহলে আমি এখানে থেকে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেব (পিএসজিতে থেকে যাওয়া সম্ভব কিনা এমন প্রসঙ্গে)। 

২৯. মনে হচ্ছিল আমার বিপক্ষে ১১টা শিশু খেলছে (চেলসির বিপক্ষে লাল কার্ড খাওয়া প্রসঙ্গে)।

৩০. আমিও আতশবাজি পছন্দ করি। ওগুলো বাগানেই ফোটাই। আমি কখনো নিজের ঘরে আগুন দেই না (মারিও বালোতেল্লির ঘরের মধ্যে আতশবাজি ফোটানো প্রসঙ্গে)।

৩১. আমি কতটা নিখুঁত এটা দেখে হেসেই কুল পাই না।

৩২. ফুটবল মাঠে আমি ১১টা পজিশনে খেলতে পারি। কারণ, একজন ভালো খেলোয়াড় সব পজিশনে খেলতে পারে।

৩৩. ফুটবল নিয়ে জন ক্যারু যা করতে পারেন সেটা আমি স্রেফ দুটি কমলালেবু দিয়েই করতে পারি।

৩৪. আমি ইচ্ছে করে কাউকে ইনজুরিতে ফেলি না। তবু কেউ যদি এমন অভিযোগ করে তাহলে আমি তার দুই পা ভেঙে দেব। তখন সেটা ইচ্ছে করেই করব।

৩৫. রুনি দলবদল করতে চাইলে আমি ওকে প্যারিসে আসার পরামর্শ দেব। তখন ও বুঝবে জ্লাতান ওরচেয়ে ভালো গোল করতে পারে এবং ও এটায় অভ্যস্ত হয়ে যেত।

৩৬. ওর সঙ্গে আমার এখনো দেখা হয়নি। তবে দেখা হলে অবশ্যই ওর সঙ্গে ডেট করব (বিশ্বসেরা সুন্দরী কে এমন প্রশ্নে)।

৩৭. আমি ম্যানচেস্টারের রাজা হব না, আমি হব ম্যানচেস্টারের ঈশ্বর।

৩৮. আমার মনে হয়, আমি অনেকটা ওয়াইনের মতো। যত পুরোনো ততই ভালো।

৩৯. (বেশি মদপান প্রসঙ্গে) এতে আমার কোনো দোষ নেই। এটা ডেভিড ত্রেজেগের দোষ। সে আমাকে একটার পর একটা ভদকা খাইয়ে গেলেন। তখন আমি বাথটাবেই ঘুমিয়ে পড়লাম। এরপর থেকে ভদকার ওপর আমার নিয়ন্ত্রণ এসেছে।

৪০. (পেপ) গার্দিওলার অধীনে ওর (আর্লিং হাল্যান্ড) উন্নতি হবে কিনা সেটা নির্ভর করছে তার ইগোর ওপর। সে (গার্দিওলা) ওকে তার চেয়ে বড় হতে দেবেন না। সে আমাকেও এটা করতে দেয়নি। অন্যদেরও তা হতে দেয়নি।

৪১. ড্রেসিংরুমে আমি তার গানের তালিকা দেখেছিলাম। সেখানে জাস্টিন বেইবার, জোন্স ব্রাদার্স ও সেলিনা গোমেজদের দেখেছিলাম। পরে আমার ভালো লেগেছে। কারণ, অমি জেনেছি ডেভিড বেকহ্যামের রুচিও ভালো ছিল না।

৪২. আমিই পেনাল্টি নিতাম। কারণ, আমি দলের অধিনায়ক, আমিই সিদ্ধান্ত নেব কে পেনাল্টি নেবে, কে নেবে না। আমি প্রথমে তিনটি পেনাল্টি নিতাম। তারপর ওর (মেসি) জন্য একটা পেনাল্টি ছেড়ে দিতাম। এরপরের তিনটা পেনাল্টি আবার আমি নিতাম। তারপর আবার ওর জন্য একটা ছাড়তাম।

৪৩. আমার মতো এই বয়সে এসে পারফর্ম করা খুব বেশি খেলোয়াড় আমি দেখি না। ওর (জিয়ানলুইজি বুফন) জন্য অবশ্য কাজটা সহজ। কারণ ও শুধু দাঁড়িয়ে থেকে বল প্রতিহত করলেই চলে। আমার তো নড়াচড়া করা লাগে, সুযোগ তৈরি করতে হয়, ডিফেন্ডারদের সঙ্গে লড়াই করতে হয়।

৪৪. অসম্ভব। আমার মতো কেউ নেই। এই পৃথিবীতে জ্লাতান কেবল একজনই।

৪৫. ইব্রা: কে (২০১৪ বিশ্বকাপ) কোয়ালিফাই করবে সেটা একমাত্র ঈশ্বর জানেন।
সাংবাদিক: তাকে জিজ্ঞেস করা তো একটু কঠিন।
ইব্রা: আপনি তার সঙ্গেই কথা বলছেন।

৪৬. আমাকে ছাড়া যে বিশ্বকাপ, সেটা দেখার কিছু নেই। কাজেই বিশ্বকাপের জন্য অপেক্ষা করার কোনো মানে হয় না (বিশ্বকাপের টিকিট না পাওয়ার পর)।

৪৭. অবশ্যই আমি (পোর্শে) কিনিনি। আমি একটা বিমানের অর্ডার করেছি। এটার গতি আরও বেশি।

৪৮. কে জিতল, কে হারল তাতে আমার কিছু যায় না। কারণ, আমি ছুটিতে যাচ্ছি (২০১২ ইউরো থেকে সুইডেন বাদ পড়ার পর)।

৪৯. আমি এখনও ঈশ্বর। আমি এক নম্বর। আমি যখন ফিরব তখন সবকিছুই বদলে যাবে।

৫০. কেউ কেউ ফুটবল খেলেন। কিন্তু আমার কাছে রোনালদো (ব্রাজিল কিংবদন্তি) মানেই ফুটবল। সে যেভাবে মাঠে দৌড়ায়, পা ফেলে মনে হয় সে যেন একটা সাপ। নিঃসন্দেহে আমার কাছে তিনিই সর্বকালের সেরা ফুটবলার।