কিলিছদারোলুর অভিবাসীবিরোধী প্রচারণায় আতঙ্কে সিরিয়ানরা

তুরস্কে বাস করা অনেক সিরিয়ান শরণার্থীদের মতো ঘাইথ সামিরও ২৮ মের নির্বাচনের ফলাফলের জন্য আতঙ্কের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিছদারোলুর জয় পাওয়ার ভয়ে আছেন তারা। নির্বাচনে বিজয়ী হলে অভিবাসীদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। খবর রয়টার্স।

কামাল কিলিছদারোলু

২০১২ সালে গৃহযুদ্ধ কবলিত সিরিয়া থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছিলেন সামির। তুরস্কে বসবাসকারী ৩৫ লাখের বেশি সিরীয় শরণার্থীদের মধ্যে তিনিও একজন। কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণে তুরস্কের অনেকেই সিরিয়ার শরণার্থীদের সহ্য করতে পারছেন না। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আভিবাসীবিরোধী প্রচারণায় নেমেছেন কিলিছদারোলু।

সামির বলেছেন, ‘বিরোধীদের প্রচারণা আমাকে ভীত করে এবং আমাকে ক্ষুব্ধ করে। কারণ তারা তুর্কি নাগরিকদের আমাদের প্রতি ঘৃণা করতে শিখিয়েছেন।’ সিরিয়ার এই শরণার্থী দুই বছর আগে তুরস্কের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তিনি ২৮ মে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।

১৪ মে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে ৪৯.৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন এরদোয়ান। কিন্তু ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় ২৮ মে দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম রাউন্ডে ৪৪.৮৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন কামাল কিলিছদারোলু। এবার দ্বিতীয় রাউন্ডে জয় পেতে মরিয়া এই নেতা তীব্র অভিবাসীবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন।

কামাল কিলিছদারোলু একটি অতি ডান জাতীয়তাবাদী দলের সঙ্গে জোট বেঁধেছেন। তিনি তুরস্কের জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচনে জয়ী হলে এক বছরের মধ্যে সমস্ত অভিবাসীদের সিরিয়ায় ফেরত পাঠাবেন। এই প্রতিশ্রুতি লেখা কিলিছদারোলুর বড় বড় পোস্টার তুরস্কজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান দেশটিতে সিরিয়ান এবং অন্যান্য অভিবাসীদের স্বাগত জানিয়েছেন। তুরস্কে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শরণার্থী বাস করে। এদের সংখ্যা ৫০ লাখ হবে বলে ধারণা করা হয়। তবে তিনি সিরিয়ার অভিবাসীদের প্রত্যাবর্তন ত্বরান্বিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছেন।

তুরস্কের এই নির্বাচন এবং বিরোধী দলের অভিবাসীবিরোধী অবস্থান সিরিয়ার শরণার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে। ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় আবার ফিরে যাবেন কিনা তা নিয়ে অনেকেই চিন্তায় পড়ে গেছেন।

৩৮ বছর বয়সী সামির জানান, তারা অত্যন্ত উৎকণ্ঠার সঙ্গে আগামী রোববারের নির্বাচনের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছেন। এই ফলাফলের উপরই নির্ভর করবে তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা। যদিও তিনি তুরস্কের নাগরিকত্ব পেয়েছেন কিন্তু তিনিও নির্বাচনের পর প্রয়োজন হলে তুরস্ক ছাড়ার চিন্তা করছেন।

সামির জানিয়েছেন, তিনি তার স্ত্রী এবং দুটি ছোট সন্তানকে নিয়ে এমন একটি দেশে চলে যাওয়ার কথা বিবেচনা করেছেন যেখানে সিরিয়ানদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভাল হতে পারে, যেমন মিশর বা ইরাকের কুর্দি অঞ্চল।

গত বুধবার কামাল কিলিছদারোলু চরম ডানপন্থী ভিক্টোরি পার্টির নেতা উমিত ওজদাগের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছেন। এর ফলে ওজদাগ দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটে কিলিছদারোলুকে সমর্থন করবেন। ডানপন্থী এই নেতা সিরিয়ান এবং আফগান শরণার্থীদের তুরস্ক থেকে বের করে দিতে চান। তুরস্ককে তিনি 'অভিবাসীস্তান' হতে দেবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।