লিথিয়াম খনি: আফগানিস্তানকে চীনের বিশাল অফার

আফগানিস্তানের লিথিয়াম খনিতে এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে চীন। কাজ পেলে দেশটি আফগানিস্তানে টানেল, সড়ক, বিদ্যুতকেন্দ্রসহ বেশকিছু অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। আফগানিস্তানের খনি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে।

আফগানিস্তানের লিথিয়াম আহরণে এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে চীন

খনি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুমায়ুন আফগান বলেন, আফগানিস্তানের লিথিয়াম মজুদের সিংহভাগ পাওয়া গেছে কুনার, নুরিস্তান ও হেলমান্দ প্রদেশে। লিথিয়াম খাতে কেবল চীন নয়, আরও বহু দেশের বিনিয়োগকারীরা এসেছেন এবং আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। চীনা পক্ষ এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে।

তিনি বলেন, খনি বরাদ্দ চুক্তির বিষয়ে আফগানিস্তানের মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আশা করা হচ্ছে, মন্ত্রিসভা অচিরেই লিথিয়াম আহরণ চুক্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করবে। বিশ্বে লিথিয়াম সমৃদ্ধ দেশের তালিকায় রয়েছে আফগানিস্তান। এসব সম্পদ দেশের কাজে লাগানো হবে।

আফগানিস্তানের লিথিয়াম আহরণের চীনের সংশ্লিষ্টতার সুফল সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থনীতি বিষয়ক পর্যবেক্ষক সায়ের কুরেশী বলেন, চীন যেহেতু নয়া জ্বালানি-নির্ভর যানবাহনের সবচেয়ে বড় বাজার হতে চলেছে, দেশটির কাছে লিথিয়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষত ইলেকট্রনিক ভেহিকলের জন্য লিথিয়ামের ওপর নির্ভরতার বিকল্প নেই।

তড়িৎ শক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টোরেজ হিসেবে বিবেচিত লিথিয়াম এখন পর্যন্ত মূলতঃ মাইক্রোফোন, বিদ্যুতচালিত গাড়ি, কম্পিউটার ও ড্রোনের ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ খনিজের ব্যবহার আরও বাড়তে পারে। নবায়নযোগ্য ও সবুজ জ্বালানির ওপর ঝোঁকের কতা বিবেচনায় রেখে লিথিয়ামকে ভবিষ্যত পৃথিবীর অন্যতম আরাধ্য খনিজ ভাবা হচ্ছে।

আফগানিস্তানের খনি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, চীনের সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি গোচিন লিথিয়াম আহরণে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে যোগাযোগ করেছে। লিথিয়াম আহরণের কাজ পেলে চীনা কোম্পানিটি আফগানিস্তানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করবে বলেও জানিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি টানেল, একটি জলবিদ্যুতকেন্দ্র এবং বেশকিছু সড়ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি জানিয়েছে।

খনি ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী শাহাবুদ্দিন দেলোয়ার বলেছেন, আফগানিস্তানের খনি আইন অনুযায়ী লিথিয়াম ও অন্যান্য খনি বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আফগান সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।

২০২১ সালের আগস্টে তালেবানরা ক্ষমতা দখলের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ (ইউএসজিএস) ও মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আফগানিস্তানের ২৪টি এরিয়া অব ইন্টারেস্টে খনিজ মজুত শনাক্ত ও নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করছিল। এর আগে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ইউএসজিএস আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদ নিয়ে তাদের প্রাথমিক জরিপের সারাংশ প্রকাশ করে।

সামারিজ অব ইম্পর্ট্যান্ট এরিয়াজ ফর মিনারেল ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড প্রোডাকশন অপরচুনিটিজ অব নন-ফুয়েল মিনারেলস ইন আফগানিস্তান শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে হেলমান্দ প্রদেশের খানেশিন কার্বনটেট এলাকায় ১০ লাখ মেট্রিক টন দুর্লভ আর্থ ইলেমেন্টস, কাবুলের কাছে তামা ও কোবাল্টের উল্লেখযোগ্য মজুত, আফগানিস্তানের মধ্যাঞ্চলে লোহা, টিন, টাংস্টেন ও লিথিয়ামের বড় মজুত এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে তামা ও স্বর্ণ মজুতের কথা বলা হয়।