রুপিতে লেনদেন: থমকে গেল রাশিয়া-ভারত আলোচনা

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক লেনদেন রুপিতে নিষ্পত্তির আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে। কয়েক মাসব্যাপী আলোচনার পরও মস্কোর প্রতিনিধিরা নিজেদের রিজার্ভে রুপি রাখতে সম্মত না হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারত সরকারের দুজন কর্মকর্তা ও আলোচনা সম্পর্কে সরাসরি ওয়াকিবহাল একটি সূত্র এ কথা জানিয়েছে। খবর রয়টার্স।

ভারতের কাছে বিক্রিত পণ্যের মূল্য বাবদ রুপি নিতে রাজি হয়নি রাশিয়া

রাশিয়ার সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্যের আলোচনা ভেস্তে যাওয়ায় ভারতের ব্যবসায়ীরা, বিশেষত সস্তায় রাশিয়া থেকে তেল ও কয়লা আমদানিকারকরা বড় ধরনের হোঁচট খাবেন। দুই দেশের মুদ্রা রূপান্তরের খরচ এড়িয়ে পাকাপাকিভাবে রুপিতে লেনদেন প্রক্রিয়া চালুর আশা করেছিলেন তারা।

জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে চলা আলোচনার পরও রাশিয়া নিজেদের পণ্যের মূল্য হিসেবে ভারতের রুপি নিতে রাজি হয়নি। এক্ষেত্রে মস্কোর অনুকূলে বড় ধরনের বাণিজ্যিক ভারসাম্যকেই তারা বড় বাধা মনে করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভারতীয় কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া মনে করছে, বৈশ্বিক বাণিজ্যে ভারতের উপস্থিতি বা হিস্যা মাত্র ২ শতাংশ। এ অবস্থায় ভারতীয় রুপি নিতে আগ্রহী দেশ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রাশিয়া-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের যে ভারসাম্যাবস্থা, তাতে রুপিতে লেনদেন হলে প্রতিবছর রাশিয়ার কাছে ৪০ বিলিয়ন (চার হাজার কোটি) ডলারের সমপরিমাণ রুপি জমা হবে। এত বিপুল পরিমাণ রুপি মজুত করা কাঙ্ক্ষিত নয় বলে রুশ কর্মকর্তাদের অভিমত।

ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ও রুশ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তৎক্ষণাৎ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আক্রমণের পরপর রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়া থেকে তেল ও কয়লা কেনা অনেকাংশে বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় ভারত রাশিয়া থেকে সস্তায় বিপুল পরিমাণ তেল কেনার সুযোগ নেয় এবং একইসঙ্গে রাশিয়াকে রুপিতে লেনদেনে রাজি করানোর চেষ্টা চালাতে থাকে।

ভারতের জোরালো চেষ্টা সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে এ পর্যন্ত একটি লেনদেনও রুপিতে নিষ্পত্তি করেনি। দুই দেশের মধ্যে বেশিরভাগ লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে ডলারে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আরব আমিরাতের দিরহামসহ অন্য কয়েকটি দেশের মুদ্রায়ও দিল্লী ও মস্কোর মধ্যে লেনদেন নিষ্পত্তি হয়েছে।

এ বিষয়ে মস্কোর সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ভারতের অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া রুপি নিতে আগ্রহী নয়। বরং তারা চীনা ইউয়ান অথবা অন্য কোনো মুদ্রা নিতে পারে বলে আমাদের জানিয়েছে।

জানতে চাইলে আলোচনা সম্পর্কে তৃতীয় আরেকজন ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, আমরা আর রুপিতে লেনদেনের আলোচনা করতে চাই না। সেটা হবে না, কেবল এটুকুই বলতে পারি। আমাদের যা করার ছিল, সব করেছি, কিন্তু কাজ হয়নি।

ভারতের একজন কর্মকর্তা জানান, গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ইউক্রেন দখলের পর থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত রাশিয়া থেকে ভারতের আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫১ দশমিক ৩ বিলিয়ন (৫ হাজার ১৩০ কোটি) ডলার। পূর্ববর্তী বছর একই সময়ে রাশিয়া থেকে ভারতের আমদানির পরিমাণ ছিল ১০ দশমিক ৬ বিলিয়ন (১ হাজার ৬০ কোটি) ডলার। মূলতঃ ছাড়কৃত মূল্যে তেল কেনার সুযোগ পেয়েই রাশিয়া থেকে আমদানি ১২ গুণ বেড়ে গেছে ভারতের।