যুক্তরাষ্ট্র: চার মাসে লক্ষাধিক রুশ সেনা হতাহত হয়েছে

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলছে ১৪ মাসের বেশি সময় ধরে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গত চার মাসে ইউক্রেনের প্রতিরোধের মুখে এক লাখেরও বেশি রাশিয়ার সেনাসদস্য হতাহত হয়েছে। এরমধ্যে নিহতের সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি। খবর আল জাজিরা।

আহত সহযোদ্ধাকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এক রুশ সেনা

এক গোয়েন্দা রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে হোয়াইট হাউস জানায়, মূলত পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক (যাদের একত্রে দনবাস বলা হয়) অঞ্চলে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে রুশ সেনাবাহিনী বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। হাতছাড়া হওয়া দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন প্রদেশেও লড়াইয়ে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুতিনের বাহিনী। এ সব যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিক সরঞ্জামের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে তারা। সেই সঙ্গে ব্যাপক মাত্রায় হতাহতের শিকার হয়েছে রাশিয়ার সেনা সদস্যরা। অন্যদিকে ইউক্রেন যেহেতু আগ্রাসনের শিকার, তাই তাদের হতাহতের তথ্য প্রকাশ করেনি হোয়াইট হাউস।

হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি গতকাল সোমবার জানান, হতাহতের এই পরিসংখ্যানটি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। তবে তারা কীভাবে এই সংখ্যা নির্ধারণ করেছে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

দনবাসে লড়াই চলছে

নিহত ২০ হাজারের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই হচ্ছে প্রাইভেট ওয়াগনার গ্রুপের দ্বারা নিয়োগকৃত ভাড়াটে সৈন্য- এমনটা উল্লেখ করে কিরবি বলেন, মূল কথা হলো ইউক্রেনীয় বাহিনী গত কয়েক মাস ধরে ব্যাপকহারে পাল্টা আঘাত করে যাচ্ছে। যার ফলে রাশিয়া এই বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছে।

ইউক্রেনের স্থল বাহিনীর প্রধান ওলেক্সান্ডার সিরস্কি বলেছেন, রাশিয়া বাখমুত শহরটি দখলে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তবে এখনও পর্যন্ত তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। শহরের কিছু অংশে শত্রুরা আমাদের পাল্টা আক্রমণের মুখে পড়ে তাদের অবস্থান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে।

এদিকে এতদিন লড়াই শুধু বাখমুতকে কেন্দ্র করে অব্যাহত থাকলেও গত কয়েকদিনে রাশিয়া ইউক্রেনের অন্যান্য অংশেও হামলা চালাচ্ছে। কিয়েভ বলছে, রুশ বাহিনী বিভিন্ন বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে শিশু-নারীসহ বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করছে। গত এক সপ্তাহে তারা বেশ কয়েকটি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। তাদের অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র রুখে দেওয়া হচ্ছে দাবি করা হলেও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিতান্তই কম নয়।

অন্যদিকে ইউক্রেনও রাশিয়ার অভ্যন্তরে এবং রাশিয়ার বাইরে দেশটির বিভিন্ন স্বার্থে হামলা চালাতে শুরু করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে ক্রিমিয়ায় একটি রুশ জ্বালানি ডিপোতে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রুশ বাহিনী দাবি করে, ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়ে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাশিয়ান ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে বিস্ফোরণের জেরে একটি মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। এর জন্য রুশ কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনপন্থী নাশকতাকারী গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছে।

গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেছিল রাশিয়া। গত আগস্টে সামরিক পর্যবেক্ষক সংস্থা মিলিটারি টাইমস দাবি করেছিল, প্রথম ছয় মাসে ইউক্রেনে অন্তত ৭০ হাজার সেনাকে হারিয়েছে রাশিয়া। তিন মাস পর নভেম্বরে শীর্ষ কর্মকর্তা জেনারেল মার্ক মিলি দাবি করেছিলেন, সাড়ে ৮ মাসের যুদ্ধে ১ লক্ষেরও বেশি রুশ সেনা হারিয়েছে রাশিয়া। এর পর চার মাসের হিসেবে আরও এক লাখ রুশ সেনার হতাহত হওয়ার দাবি করল দেশটি, যার মধ্যে ২০ হাজারই যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়েছে।