শ্রীলঙ্কা: এমন বেহাল দশা নিজের দোষে, নাকি চীনের ফাঁদে
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা যে গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বের খুব কমই দেশই সেই সংকট প্রত্যক্ষ করেছে। সংকট এমন যে দেশটির জনগণের দৈনন্দিন জীবন পার করার জন্য জ্বালানি, বিদ্যুৎ এবং খাদ্যের মতো মৌলিক প্রয়োজনীয়তারও চরম অভাব রয়েছে। তবে এই সংকটের পেছনে আসলে কারণ কী? এই প্রশ্নে যদিও কেউ বলবে এটি তাদের নিজেদেরই জগাখিচুড়ির ফল, বাস্তবতা আসলে ভিন্ন কিছু।
শ্রীলঙ্কার পতাকা
নিউজ এইটিন লিখেছে, ২০২১ সালের শেষ নাগাদ চীনের কাছ থেকে নেওয়া শ্রীলঙ্কার ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪০ কোটি ডলার, যার দেশটির মোট ঋণের ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ। যেহেতু দ্বীপ রাষ্ট্রটির বৃহত্তম ঋণদাতা দেশ চীন, সেহেতু ‘চীনা ঋণের ফাঁদ’ এর প্রসঙ্গটি আবারও সামনে এসেছে। চলমান সঙ্কটের সঙ্গে শ্রীলঙ্কাকে ওই ঋণের সুদের অর্থ পরিশোধে কঠিন চাপ দেওয়া হবে। সেখানে শিগগিরই ঋণের মূলধন ফেরত দেওয়ারও আশা নেই।
শ্রীলঙ্কার এই হাল কেন
সবথেকে সহজ কথায়, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। নিউজ এইটিন জানিয়েছে, বছরের পর বছর ধরে দেশের শাসক গোষ্ঠীর অব্যবস্থাপনা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে না যাওয়ার জন্য মাহিন্দা রাজাপাকসের একগুঁয়েমি শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বর্তমানে দেশটিতে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, বাজেট ও অর্থ ঘাটতি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, একটি অবমূল্যায়িত মুদ্রা এবং বিপুল বিদেশি ঋণ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, যা আর শোধ করতে পারবে না।
২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধের পরে দেশটি বা এর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক এলিটরা যুদ্ধের খরচ সামলানো এবং অতিপ্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় এবং ব্যয়বহুল অবকাঠামো প্রকল্পগুলো শুরু করার জন্য ব্যাপক ঋণ নিয়েছিল। কিন্তু এই ঋণে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পগুলোর বাস্তবিক ফলাফল ছিল সামান্য। এছাড়া ঋণের অর্থ পরিশোধেরও আশা ছিল না।
অন্যদিকে দেশটির পর্যটন শিল্পে নিয়ে এসেছে কোভিড মহামারী, যা ছিল তার বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস। এখন চীন ও অন্যান্য ঋণদাতাদের ঋণ পুনর্গঠন করতে দেশটিকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
বিশাল অঙ্কের ঋণ, তার সঙ্গে মহামারীর খাঁড়ার পর ইউক্রেইন যুদ্ধ একেবারে পথে বসিয়ে দিয়েছে সোয়া ২ কোটি মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কাকে। গতবছরের এপ্রিলে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এতটাই কমে যে, তা দিয়ে এক মাসের আমদানি ব্যয়ও মেটানো সম্ভব ছিল না।
এই পরিস্থিতিতে দেখা দেয় জনবিক্ষোভ। কলম্বোতে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের বাড়ির সামনে শত শত বিক্ষোভকারী পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে জারি করা হয় জরুরি অবস্থা।
গত বছরের এপ্রিলে ডয়চে ভেলে এক প্রতিবেদনে জানায়, সেসময় শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে প্রায় ৭০ শতাংশ কমে। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার ছিল।
বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির অর্থ হল, দেশটি জ্বালানি, খাদ্য এবং ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি এবং মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে সংগ্রাম করছে। এই সঙ্কটের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে দিনে মাত্র চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল এবং ফিলিং স্টেশনগুলোর বাইরে লম্বা লাইন তৈরি হয়েছিল।
জ্বালানি সঙ্কটে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর জলাধারের পানি বিপজ্জনক মাত্রায় নেমে যাওয়ায় সেখানেও উৎপাদন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই সংকটের কারণে গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশজুড়ে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঙ্কটে খাদ্য ও ওষুধের দামও হু হু করে বাড়ছে, ফুরিয়ে আসছে এসব পণ্যের মজুদ। চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি, দুধ কিনতে মানুষকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জ্বালানি তেল সংগ্রহের লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করার সময় অন্তত দুজনের মৃত্যুর খবরও এসেছে। তবে এইক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রয়েছে শ্রীলঙ্কার রুপির অবমূল্যায়নে।
চীনা ঋণের ফাঁদ
শ্রীলঙ্কাকে চীনের ঋণ দেওয়ার গল্পটি দীর্ঘ, একইসঙ্গে জটিলও। গত কয়েক বছরে শ্রীলঙ্কা চীনের ঋণের জালে আটকা পড়ার গল্প বহুবার সামনে এসেছে।
শ্রীলঙ্কা ২০১৭ সালে চীনের কাছে একটি জাতীয় সম্পদ নতুন পরিমার্জিত হাম্বানটোটা বন্দর হস্তান্তর করে। ওই বন্দর নির্মাণে যে ঋণ নেওয়া হয়েছিল, তার বিনিময়ে শ্রীলঙ্কা ৯৯ বছরের জন্য চীনের কাছে সেটি ইজারা দেয়।
হাম্বানটোটা আন্তর্জাতিক বন্দর প্রকল্পটি রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত অবকাঠামো প্রকল্প ছিল। ২০০৫-২০১৪ এবং ২০১৯-২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা সরকার পরিচালনা করে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.