ইউক্রেনে মিসাইল ও ড্রোন হামলা, ব্যাপক ক্ষতিসাধনের দাবি রাশিয়ার

মধ্যরাত থেকে ইউক্রেনে বড় ধরনের মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। হামলার ফলে ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা সম্ভাব্য আক্রমণের জন্য মজুতকৃত বিপুল সংখ্যক মিসাইল ধ্বংস হয়েছে বলে রুশ বাহিনী দাবি করেছে।

মিসাইল হামলার পর পাভলোগ্রাদ রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে

ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রাশিয়ার কৌশলগত বিমান বহরের কমপক্ষে ১৫টি টুপোলভ-৯৫এমএস বোমারু বিমান এ হামলায় অংশ নিয়েছে। বেশকিছু লক্ষ্যবস্তুতে এক্স-১০১ জেট মিসাইল ছোড়া হয়েছে। ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী রাশিয়ার ছোড়া বেশিরভাগ মিসাইল ভূপাতিত করেছে।

আরবিসি-ইউক্রেনের খবরে বলা হয়েছে, রুশ মিসাইল হামলার পর দনিপ্রোপেত্রোভস্ক, পাভলোগ্রাদ, সুমি, খারকিভ ও পোলটাভা শহরে বিকট বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। মিসাইল হামলায় পাভলোগ্রাদ রেল জংশনে আগুন ধরে গেছে। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টার পরও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।

ঝেরকালো-নেদেলি সংবাদ পোর্টাল জানিয়েছে, পাভলোগ্রাদের শিল্প এলাকা ও দুটি রেল স্টেশনে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। বহু দূর থেকে আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

দোনেৎস্কে পাল্টা আক্রমণের প্রস্তুতি হিসেবে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাভলোগ্রাদে বিপুল সংখ্যক রিজার্ভ সৈন্য সমাগম করা হয়েছিল। পাভলোগ্রাদ রেল জংশন থেকে তাদের বিভিন্ন ফ্রন্টে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। রুশ বিমান বাহিনীর হামলায় সৈন্যদের বড় অংশ নিহত হয়ে থাকতে পারে।

ইজভেস্তিয়া জানিয়েছে, পাভলোগ্রাদ ও দনিপ্রোপেত্রোভস্কে হামলায় ইউক্রেনীয় বাহিনীর গোলাবারুদের বিশাল মজুদ ধ্বংস হয়েছে। দোনেৎস্কের বিভিন্ন ফ্রন্টে পাঠানোর জন্য এসব গোলাবারুদ মজুত করা হয়েছিল। পাভলোগ্রাদ রেল স্টেশনে মোতায়েন ইউক্রেনের এসব-৩০০ বিমান প্রতিরক্ষা মিসাইলও ধ্বংস হয়েছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, খেরসন অঞ্চলে গ্লাইডিং বোমা হামলায় ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিপুল পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস হয়েছে। স্থানীয় বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারসহ কয়েকটি স্থানে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ঘাঁটি বোমা হামলায় মাটিতে মিশে গেছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জেলেনস্কির ফোনালাপ

এর আগে গতকাল রাতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এক ঘণ্টারও বেশি সময়ের ফোনালাপে জেলেনস্কি আগামী মে-জুন নাগাদ যুদ্ধ পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে বলে মাখোঁকে জানান।

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি ও ইউরোপে ন্যাটো অ্যালায়েড ফোর্সেসের কমান্ডার জেনারেল ক্রিস্টোফার কাভোলি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট তার দেশের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে নতুন একটি শক্তিশালী সামরিক সহায়তা প্যাকেজের আশ্বাস দিয়েছেন। দুই প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের বস্তুগত ও কারিগরি প্রয়োজনের দিকগুলো নিয়েও কথা বলেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রত্যাঘাতের গতি ও লক্ষ্যনিবিষ্টতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ফ্রান্সের সহায়তাকে আমরা স্বাগত জানাই।

ন্যাটো কমান্ডারের সঙ্গে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী প্রধানের বৈঠক

ইউরোপে ন্যাটো অ্যালায়েড ফোর্সেসের কমান্ডার মার্কিন জেনারেল ক্রিস্টোফার কাভোলির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনি।

গতরাতে ইউক্রেনীয় টিভিকে জালুঝনি জানিয়েছেন, বৈঠকে ন্যাটো ও মার্কিন কমান্ডার কাভোলি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পুরো ফ্রন্টলাইনজুড়ে বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন এবং সম্ভাব্য দৃশ্যপট ও হুমকির ওপর আলোকপাত করেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যের ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে যথাসম্ভব কম সময়ে সম্ভব সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জন করতে হবে বলে তারা একমত পোষণ করেন।