শির সঙ্গে ফোনালাপে রুশ ভাষা শুনতে হয় জেলেনস্কিকে

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বুধবারের ফোনালাপে রুশ ভাষা শুনতে বাধ্য হন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বেইজিংয়ে চীনা পক্ষে ইউক্রেনীয় ভাষাভাষী কোনো দোভাষী না থাকায় একজন সহকারী শি জিনপিংয়ের কথাগুলো রুশ ভাষায় অনুবাদ করে জেলেনস্কিকে শোনান। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র সের্গেই নিকিফোরভ এ কথা জানিয়েছেন।

শি জিনপিংয়ের সঙ্গে জেলেনস্কির ফোনালাপে ইউক্রেনীয় ভাষা জানা দোভাষী ছিল না

নিকিফোরভ বলেন, চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক ঘণ্টার দীর্ঘ ফোনালাপে ‘আগ্রাসনকারীর ভাষা’ শুনে ক্লান্ত হয়ে পড়েন জেলেনস্কি। যেহেতু ইউক্রেনীয় ভাষা জানা কোনো দোভাষী ছিল না, তাই তাকে বাধ্য হয়ে কথাগুলো শুনতে হয়।

তিনি জানান, এতে প্রেসিডেন্ট (জেলেনস্কি) অতীব মর্মপীড়া অনুভব করেন, যদিও তিনি যথেষ্ট সপ্রতিভ ও আন্তরিকভাবে ফোনালাপ সেরে নিতে সমর্থ হন। ফোনালাপ শেষের পর প্রেসিডেন্ট তার সহকারীকে ডেকে ইউক্রেনীয় ভাষায় কথা বলতে বলেন, যাতে তিনি চাপমুক্ত হতে পারেন।

ব্যক্তিগতভাবে জেলেনস্কি ইউক্রেনীয় ও রুশ দুই ভাষাতেই সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন। গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর আক্রমণ শুরুর পর তিনি রুশ জনগণের উদ্দেশ্যে ৮ মিনিটের একটি বক্তৃতা রেকর্ড করেন। ইউটিউব ও অন্যান্য মাধ্যমে শেয়ারকৃত রুশ ভাষার বক্তৃতাটিতে জেলেনস্কি রাশিয়ার জনগণের কাছে সে দেশের সরকারের আগ্রাসনের বিষয়টি তুলে ধরেন ও শান্তির আবেদন জানান।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া: শি জিনপিং ও ভলোদিমির জেলেনস্কির ফোনালাপে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। গতকাল সন্ধ্যায় দুই প্রেসিডেন্টের ফোনালাপের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, দুই পক্ষের আলোচনা শুরুর বিষয়ে চীনের আগ্রহ আমরা লক্ষ্য করেছি। একই সময়ে কিয়েভ যে কোনো গঠনমূলক প্রক্রিয়া প্রত্যাখ্যানের কথা বলছে। ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকরা এরইমধ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি অনীহা দেখিয়েছে।

গতকাল দুই প্রেসিডেন্টের ফোনালাপের পর জেলেনস্কির মুখপাত্র সের্গেই নিকিফোরভ বলেন, ইউক্রেনীয় ও চীনা শান্তি প্রক্রিয়া অভিন্ন ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রশ্নে ছাড় দিয়ে শান্তি আসবে না। ইউক্রেনকে ১৯৯১ সালের সীমান্ত ফিরে পেতে হবে।

এ বিষয়ে আজ মস্কোতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, মস্কোতে পুতিন ও শি জিনপিংয়ের মধ্যকার আলোচনায় ইউক্রেনকে ১৯৯১ সালের সীমান্তে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।

শি জিনপিং ও জেলেনস্কির মধ্যকার ফোনালাপের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা দুটি সার্বভৌম দেশের নিজেদের বিষয়। তবে ইউক্রেনে সংঘাত নিরসন ও রাশিয়ার বিশেষ অভিযানের লক্ষ্য পূরণ করবে এমন যে কোনো উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।

জানা গেছে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এরইমধ্যে সে দেশের কূটনীতিক লি হুইকে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিরসনে বিশেষ প্রতিনিধিদলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। লি হুই এর আগে মস্কোতে চীনা রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অচিরেই তিনি শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইউক্রেন ও অন্যান্য দেশ সফর করবেন।