১৫ বছর ছাগল চরানোর অর্থ দিয়ে ওমরাহ করলেন বৃদ্ধ

পবিত্র কাবাঘর ও নবির (স.) রওজা শরিফ দেখার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ছিল না। কারও কাছে টাকা চাওয়ার মতো মানসিকতাও ছিল না। এমন অবস্থায় নিজেই অর্থ জমানোর সিদ্ধান্ত নেন। ৮২ বছর বয়সী আবদুল কাদির বখশের মনস্কামনা ও চেষ্টা কোনোটিই ব্যর্থ হয়নি। নিজের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে গত রমজানে ওমরাহ পালন করেছেন তিনি। এবার হজ করার স্বপ্ন দেখছেন। খবর আরব নিউজ।

মদিনায় আবদুল কাদির বখশ

আবদুল কাদির বখশ পাকিস্তানের বেলুচিস্তান অঞ্চলের বাসিন্দা। স্থানীয় আরও হাজারো মানুষের মতো তিনিও দারিদ্র্যের কষাঘাতে পিষ্ট। কিন্তু তার অন্তর ছিল আল্লাহর ভালোবাসায় ভরপুর। চরম আর্থিক সংকটের মধ্যেও পবিত্র কাবাঘর ও নবির (স.) রওজা শরিফ দেখার স্বপ্ন লালন করতেন তিনি। অন্যের ওপর ভরসা করে নয়, বরং নিজের প্রচেষ্টাতেই এই স্বপ্ন পূরণের প্রতিজ্ঞা ছিল তার।

বয়স ততদিনে তার ৬৫ পেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাতে ভ্রুক্ষেপ করেননি। স্বপ্ন পূরণে সাধ্যমতো সঞ্চয় শুরু করেন। অবশেষে দীর্ঘ ১৫ বছরের জমানো অর্থে তিনি পবিত্র ওমরাহ পালনে সমর্থ হয়ে ওঠেন। তবে অন্যদের মতো নয়, নিজের মতো করেই ওমরাহ পালন করেছেন তিনি। কারণ অর্থ সংকটের দরুন মক্কায় তার সঙ্গে কোনো গাইড ছিল না। একমাত্র বেলুচি ছাড়া অন্য কোনো ভাষাও জানা ছিল না তার। ফলে ক্ষীণদৃষ্টির আবদুল কাদির বখশ কারো সাহায্য না নিয়ে নিজের মতো করেই ওমরাহ পালন করেছেন।

নিজ বাড়িতে আবদুল কাদির বখশ

গত রমজানে লাখো মানুষের ভিড়ে দৃষ্টি কাড়েন আবদুল কাদির বখশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি মসজিদে নববীতে লাঠি হাতে একাকী ঘোরাফেরা করছেন। সাদা জুব্বা পরা বৃদ্ধের দৃষ্টিশক্তিও বেশ ক্ষীণ বলে বোঝা যায়। তার হাঁটাচলার ধরনে মনে হচ্ছিল তিনি কাউকে হারিয়েছেন বা কিছু খুঁজছেন। তার এই সাদাসিধে চলাফেরা ও সরল ব্যবহার সবার নজর কাড়ে।

কাদির বখশের এই ভিডিওটি লাখ লাখ ভিউ হয়। একপর্যায়ে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের উপদেষ্টা তুর্কি আল-শেখ তার খোঁজ চেয়ে টুইট করেন। তবে সেই ভিডিও বা সৌদির শীর্ষ কর্মকর্তার খোঁজের ব্যাপারে তার কোনো কিছু জানা ছিল না। ওমরাহ শেষ করে গত শনিবার তিনি দেশে ফেরেন। সেখানেই গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে খুঁজে বের করলে কাদির বখশ এসব ব্যাপারে জানতে পারেন।

তিনি বলেন, পাঁচ সন্তান নিয়ে আমার পরিবার। জীবন চালাই ডিম ও লাকড়ি বিক্রি করে। আর্থিক অনটনের কারণে ঝুপড়িতেই জীবন কাঁটাই। সবসময় অভাব-অনটন লেগেই থাকে। এরপরও ১৫ বছর ধরে আমি স্বপ্ন দেখেছি ওমরাহ করার। তবে আমার কোনো টাকা-পয়সা ছিল না। তাই আল্লাহর কাছে সাহায্যের জন্য দোয়া চেয়েছি। তারপর ছাগল চরিয়ে পাওয়া অর্থ থেকে সামান্য সামান্য করে সঞ্চয় করি। এরপর এ বছরই ওমরাহ করার সিদ্ধান্ত নেই।

আবদুল কাদির বখশ বলেন, প্রথমবারের মতো মক্কা দেখে আমার অন্তরে খুশির সীমা ছিল না। আমার সব উদ্বেগ চলে গেছে। আমার অন্তর সন্তুষ্ট হয়ে গেছে। কারণ মক্কা ও মহানবীর (স.) রওজা জিয়ারতের বাসনা মঞ্জুর হয়েছে।

তিনি প্রথমে মদিনায় যান এবং পরে মক্কায় গিয়ে তাওয়াফ সম্পন্ন করেন। একাকী ঘোরার ব্যাপারে তিনি বলেন, কাবা প্রাঙ্গণে গিয়ে আমি দোয়া করেছি, হে আল্লাহ! এই জায়গা আমার অচেনা। তাই আপনিই আমার পথপ্রদর্শক। আমাকে আপনি সঠিক পথে পরিচালিত করুন। মদিনাতে থাকাবস্থাতেই কেউ তার ভিডিও করেছিল। আর সেটিই ভাইরাল হয়ে যায়।

ওমরাহ করতে পেরে বেজায় খুশি আবদুল কাদির বখশ বলেন, আমার সব দোয়া কবুল হয়েছে। এখন তিনি হজ পালনের জন্য অর্থ সঞ্চয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আপাতত এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় ইচ্ছা।