নতুন ডিক্রি জারি, দুই বিদেশি কোম্পানি এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে

ইউক্রেনে আক্রমণের জেরে রাশিয়ার ওপর শত শত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। জব্দ করেছে বিদেশে থাকা রাশিয়ার সম্পদ। এবার পাল্টা চাল চেলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নতুন একটি ডিক্রি জারি করে রাশিয়ায় থাকা দুটি বিদেশি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ আপাতত কেড়ে নিয়েছেন তিনি। খবর আল জাজিরা।

নতুন ডিক্রিতে সই করেছেন পুতিন

এর একটি জার্মানির ইউনিপারের রুশ শাখা ইউনিপ্রো, অপরটি হচ্ছে, ফিনল্যান্ডের ফোর্টাম ওইজ। ইউনিপারে জার্মান সরকারের মালিকানা রয়েছে। অন্যদিকে ফোর্টামেরও বেশিরভাগ মালিকানা সম্প্রতি ন্যাটোতে যোগ দেওয়া ফিনল্যান্ড সরকারের।

নতুন জারি করা ডিক্রি অনুযায়ী, এ দুটি কোম্পানির সম্পদে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না রুশ কর্তৃপক্ষ। তবে অস্থায়ীভাবে সংস্থাগুলোর পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে রুশ সরকারের হাতে। ইউনিপার ও ফোর্টাম ওইজের শেয়ারগুলো বর্তমানে থাকছে রুশ সরকারের সম্পদ বিষয়ক সংস্থা রোসিমুশচেস্টভো’র নিয়ন্ত্রণে।

জার্মান ইউনিপ্রো ও ফিনল্যান্ডের ফোর্টাম

অনেক বছর ধরে জার্মানিতে রুশ গ্যাস সরবরাহ করে আসছে ইউনিপ্রো। প্রতিষ্ঠানটিতে জার্মান কোম্পানি ইউনিপারের শেয়ারের অংশ ৮৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ। তারা রাশিয়ায় পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করে, যেখানে ১১ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ৪ হাজার ৩০০ কর্মী। অন্যদিকে ফোর্টাম রুশ শাখার মালিকানায় রয়েছে সাতটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এগুলো উরাল ও পশ্চিম সাইবেরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত।

এই ডিক্রির মাধ্যমে কোম্পানি দুটির মালিকদের তাদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা হবে না। তবে আপাতত তারা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যদের কাছ থেকে ‘অবন্ধুসুলভ এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী’ অনির্দিষ্ট পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া জানাতে রাশিয়া এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে বলে ডিক্রিতে বলা হয়েছে। পশ্চিমা কোম্পানির বিরুদ্ধে এমন আরও পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন ডিক্রি জারি করে বিদেশি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মধ্য দিয়ে মস্কো পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি কড়া বার্তা পাঠিয়েছে। সেটি হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে যদি বিদেশে রুশ সম্পদ জব্দ করা হয়, তাহলে রাশিয়াতে থাকা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রেও একই পরিণতি অপেক্ষা করবে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও এখন রাশিয়া থেকে তাদের সম্পদ সরিয়ে নিতে পারবে না বিদেশি কোম্পানিগুলো।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিদেশে থাকা রাশিয়ার সম্পদ জব্দ করে ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যয় করার দাবি তুলেছেন অনেকে। গত বছরের অক্টোবরে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল বলেছিলেন, ইউক্রেনে হামলা চালানোর কারণে মস্কোর বৈদেশিক সম্পদ জব্দ করার কথা চিন্তাভাবনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এসব সম্পদ ইউক্রেন পুনর্গঠনে ব্যবহারের কথাও বলেন তিনি। পরের মাসে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পাশ হয়, যেখানে রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়।

এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সম্প্রতি রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ভিটিবি পিএও-এর প্রধান নির্বাহী গত সোমবার মন্তব্য করেন, অন্যান্য দেশের মতো মস্কোরও উচিত বিদেশি কোম্পানিগুলোর সম্পদ গ্রহণের বিষয়ে বিবেচনা করা। এসব কোম্পানি নিয়ন্ত্রণে পুতিনের ডিক্রি জারি করা উচিত। রাশিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে এগুলোর নিয়ন্ত্রণও ফিরিয়ে দেওয়া হবে।