দুই দশকের বৃহত্তম উৎপাদন ঘাটতি, আরও বাড়বে চালের দাম

দুই দশকের সবচেয়ে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে বৈশ্বিক চাল উৎপাদনে। চীন থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সবখানেই ফলন কমেছে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষের প্রধান খাদ্য শস্যটির। এতে করে চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম নজিরবিহীন বেড়ে যেতে পারে। খাদ্য চাহিদা মেটাতে গুরুতর সংকটে পড়বে চাল আমদানিকারক দেশগুলো। বাজার-বিষয়ক পরামর্শক সংস্থা ফিচ সলিউশনস এ কথা জানিয়েছে।

ধান উৎপাদনে ঘাটতি দেখা গেছে পৃথিবীর সব অঞ্চলে

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ বিশ্বের ৩৫০ কোটির বেশি মানুষের ক্ষুধা নিবারণের প্রধান অবলম্বন ভাত। সারাবিশ্বে উৎপন্ন মোট ধানের ৯০ শতাংশই ভোগ করেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানুষেরা।

চীন, পাকিস্তানসহ প্রধান ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোতে ফলন বিপর্যয়ের কারণে চলতি ২০২৩ সালে ধানের বৈশ্বিক উৎপাদনে বিরাট ঘাটতি হতে চলেছে। গত ২০ বছরে ধান উৎপাদনে এত বড় ঘাটতি দেখা যায়নি বলে পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে।

ফিচ সলিউশনসের কমোডিটি মার্কেট বিশ্লেষক চার্লস হার্ট বলেন, ধান উৎপাদনে যে বিরাট ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, তার সবচেয়ে দৃশ্যমান পরিণতি হবে চালের দামে ঊর্ধ্বগতি। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কয়েক দশকের উচ্চতম সীমায় পৌঁছতে পারে। বিশেষত চালের প্রধান আমদানিকারক দেশগুলো বড় ধরনের বিপদে পড়বে।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত চালের দাম প্রতি কুইন্টাল গড়ে ১৭ ডলার ৩০ সেন্ট। দাম আরও বাড়তে পারে। আগামী বছর চাল উৎপাদন ঘুরে দাঁড়ালে দাম কমে প্রতি কুইন্টাল ১৪ ডলার ৫০ সেন্ট পর্যন্ত নামতে পারে।

চার্লস হার্ট বলেন, ধান বা ভাত যেহেতু এশিয়ার অনেক বাজারেই প্রধান খাদ্য, এ কারণে শস্যটির মূল্যবৃদ্ধি গরিব পরিবারগুলোর জন্য খাদ্য মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য নিরাপত্তার প্রধান নির্ধারক হয়ে ওঠে।

ফিচ সলিউশনস কান্ট্রি রিস্ক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চ প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০২২-২০২৩ মৌসুমে বৈশ্বিক ধান উৎপাদনে ঘাটতির পরিমাণ হবে ৮৭ লাখ টন। দুই দশকে এটাই ধান উৎপাদনে সবচেয়ে বড় ঘাটতি। এর আগে ২০০৩-২০০৪ মৌসুমে ধান উৎপাদনে ঘাটতি হয়েছিল ১ কোটি ৮৪ লাখ টন।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চালের বাজারে সরবরাহ সংকট রয়েছে। অতিবৃষ্টি ও খরায় ফলন নষ্ট হয়েছে বিশ্বে ধানের বৃহত্তম ধান উৎপাদনকারী দেশ চীনে। বন্যার কারণে উৎপাদন ৩১ শতাংশ কমেছে বৈশ্বিক বাজারে ৭ শতাংশের বেশি চাল সরবরাহকারক দেশ পাকিস্তানে।

র‌্যাবোব্যাংকের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক অস্কার জাকরা বলেন, চলতি বছর ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর খাদ্য আমদানির ব্যয় বেড়ে যাবে। চালের আন্তর্জাতিক বাজার এমনিতেই খুব টাইট। উৎপাদন ঘাটতির কারণে চাল রপ্তানিকারক দেশগুলোও রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে।

গ্রো ইন্টেলিজেন্সের কেলি গোগারির মতে, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিরিয়া ও আফ্রিকার যেসব দেশে ধান উৎপাদন বেশি কমেছে, তারা এরইমধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ভূগছে। আগামী দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।

ফিচ সলিউশনসের চার্লস হার্ট মনে করেন, গত সেপ্টেম্বরে ভারত মোটা চাল রপ্তানি বন্ধ করার পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম এমনিতেই উর্ধ্বমুখী। এমন আরও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ আসতে পারে বিভিন্ন দেশ থেকে।