বার্সার নাটুকে জয়, রিয়ালের চূড়ান্ত সর্বনাশ

স্প্যানিশ লা লিগার চলতি মৌসুমের শিরোপা লড়াই থেকে কার্যত ছিটকে গেল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। রোববার রাতে ন্যু ক্যাম্পে গিয়ে শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার বিরুদ্ধে ২-১ গোলে হেরে গেছে কার্লো আনচেলত্তির দল। এই হারে বার্সার সঙ্গে রিয়ালের পয়েন্ট ব্যবধান বেড়ে দাঁড়াল ১২!

এল ক্লাসিকোতে অন্তিম প্রহরে জয়সূচক গোলের পর বার্সেলোনার বাধভাঙা উচ্ছ্বাস 

অনেক দিন ধরেই লিগ টেবিলের শীর্ষে আছে বার্সেলোনা। তাদের সঙ্গে রিয়ালের পার্থক্যটা পরিষ্কার ছিল। খুব স্বাভাবিকভাবেই লিগ লড়াইয়ে ফিরতে এল ক্লাসিকো জয়ের বিকল্প ছিল না রিয়ালের। কিন্তু ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে হারার পর রিয়াল পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল বার্সার দুর্গ ন্যু ক্যাম্পেও।

লিগের ২৬তম রাউন্ড শেষে বার্সেলোনার সংগ্রহ ৬৮ পয়েন্ট। ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে থাকল রিয়াল মাদ্রিদ। তিনে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ঘরে আছে ৫১ পয়েন্ট। ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে আছে রিয়াল সোসিয়েদাদ। পাঁচে থাকা রিয়াল বেটিসের সংগ্রহ ৪৫ পয়েন্ট। অর্থাৎ লিগ এখন বার্সার হাতের মুঠোয়।

ম্যাচের তিনটি গোলই করেছে বার্সেলোনা। যার প্রথমটি ছিল আত্মঘাতী। ম্যাচের বয়স দুই অংক ছোঁয়ার আগেই রিয়াল মাদ্রিদ উদযাপনে মেতে ওঠে। ভিনিচিয়াসের কোনাকুনি শট ঠেকাতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে বসেন বার্সার উরুগুয়েন ডিফেন্ডার রোনাল্ড আরাজু।

বিরতির আগ মুহূর্তে সমতায় ফেরে স্বাগতিক বার্সা। কাতালানদের ম্যাচে ফেরান সার্জি রবার্তো (১-১)। দ্বিতীয়ার্ধের বড় একটা অংশে প্রায় ঘুমপাড়ানি ফুটবল হয়েছে। ৮২ মিনিটে ঘুমন্ত ম্যাচ হঠাৎই জেগে ওঠে। বদলি খেলোয়াড় মার্কো অ্যাসেনসিও বার্সার জাল কাঁপান। কিন্তু গোলটা বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে।

মহারণ অমীমাংসিত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা জেগেছিল। কিন্তু যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে বার্সার হয়ে জয় জয়সূচক গোল করে বসেন ফ্র্যাঙ্ক কিসি। বেঞ্চ ছেড়ে উঠে এসে গোল করে দলকে উচ্ছ্বাসে মাতান আফ্রিকান ডিফেন্ডার। এই গোলেই রিয়ালের চূড়ান্ত সর্বনাশ হলো। লিগ শিরোপা ধরে রাখার অভিযান এক অর্থে শেষ হয়ে গেল তাদের।

এল ক্লাসিকো গোল দেখতে পারতো আরও। কিন্তু দুই দলের ফরওয়ার্ডরা এদিন গোল মিসের যেন মহড়া বসিয়েছিলেন। রিয়ালের হয়ে একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করেছেন ভিনিচিয়াস জুনিয়র ও করিম বেনজেমা। বার্সার তারকা রাফিনহা ও রবার্ট লেভানডফস্কিও কয়েকটা সুযোগ নষ্ট করেছেন। শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিলেন এক ডিফেন্ডার।

দুই দলের পারফরম্যান্স বিবেচনায় যোগ্য দল হিসেবেই ম্যাচটা জিতেছে বার্সেলোনা। ম্যাচজুড়ে তাদের শারীরী ভাষায় ছিল জেতার মানসিকতা। সেই হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড়দের একটু আয়েসী দেখা গেল। যেটার মাসুল তারা দিলো পুরো তিন পয়েন্ট খুইয়ে। এ জন্য চাইলে দুর্ভাগ্যকেও দোষারোপ করতে পারে রিয়াল।

এই হারের পর বাস্তবিক অর্থে রিয়াল মাদ্রিদের লা লিগা জয়ের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেল। সম্ভাবনা আছে স্রেফ কাগজে-কলমে। দুই দলের ব্যবধান এখন বিস্তর। বিশাল এই ঘাটতি পুষিয়ে নিয়ে রিয়াল শিরোপা জিতলে পারলে সেটি হবে অলৌকিক কিছু। সবচেয়ে বড় কথা লিগ আর রিয়ালের হাতে নেই। তাই প্রতিটি ম্যাচেই এখন বার্সার জন্য অমঙ্গল কামনা করতে হবে তাদের।

এই মৌসুমে টানা তিনটি এল ক্লাসিকো হারল রিয়াল মাদ্রিদ। কিছুদিন আগে স্প্যানিশ কোপা ডেল রের সেমিফাইনালে ঘরের মাঠে ১-০ গোলে হেরেছিল বার্সা। আগামী ৫ মার্চ শেষ চারের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটি খেলতে আবারও ন্যু ক্যাম্পে আসতে হবে তাদের। এই টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে সেদিন জয়ের বিকল্প নেই রিয়ালের সামনে।