যে কারণে স্বপ্ন বড় করা উচিত বাংলাদেশের

কী দুর্দান্ত বিশ্বকাপই না কাটা্চ্ছে বাংলাদেশ। দেশ ছাড়ার আগে মাশরাফিরা কোয়ার্টার ফাইনালকে বানিয়েছিলেন প্রাথমিক লক্ষ্য। গ্রুপ পর্বের এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সেই লক্ষ্য পুরণ হয়ে গেছে। লক্ষ্য ছিলো আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্যই জয়, এরপর বড় চার দলের অন্তত দুটিকে হারানো। সেই লক্ষ্যটা ‘প্রায়’ পূরণ হয়েছে। বাংলাদেশের সামনে পড়ে শেষ হয়ে গেছে ইংলিশদের বিশ্বকাপ। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দল কিউইরাও বাংলাদেশের সামনে ভেঙে পড়েছিলো প্রায়। কিন্তু ম্যাচের অন্তিম মুহুর্তের সাকিবের হেয়ালিপনায় বেঁচে যায় তারা। এমন দুর্দান্ত সময়ে বাংলাদেশের উচিত আরো বড় কিছুর স্বপ্ন দেখা। যে স্বপ্নটা আপাতত ভারতকে হারানো। এমন দাপুটে বাংলাদেশের অবশ্যই ভারতকে হারানোর ক্ষমতা আছে। তবে সে জন্য নিংড়ে দিতে হবে নিজেদের সেরা ক্রিকেট।

যে কোনো দেশের সমর্থকরা তাদের দলকে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে দেখতে চায়। যারা চুপচাপ পরাজয় মেনে নেয়, মাথা নুইয়ে হেরে যায়; তাদের কেউ পছন্দ করে না। পছন্দ করার প্রশ্নও আসে না। সবাই খেলার মাঠে সাহসী পদক্ষেপ দেখতে চায়। ফলাফল যাই হোক সবাই চায়ের জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দেখতে। মাশরাফিদের এই দলের মধ্যে জয়ের তৃষ্ণাটা দেখা যাচ্ছে দারুণভাবে। এ কারণেই মূলত বিশ্বের তাবত সমালোচকরা প্রশংসায়, মুগ্ধতায় ভাসাচ্ছেন তাদের।

নিউজিল্যান্ডকে দেখুন। এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক দল। প্রথম ম্যাচ থেকেই প্রতিপক্ষকে ছিঁড়ে ছ্যাবড়া বানিয়ে ছাড়ছে তারা। শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড- কেউই তাদের কাছে পাত্তা পায়নি। কিউই ব্যাটসম্যানরা তো বটেই, তাদের পেসাররাও এই বিশ্বকাপে নির্মমতার প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছেন। প্রতিটি ম্যাচে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানের নাভিশ্বাস উঠিয়ে ছেড়েছেন তারা। এতোটা আক্রমণাত্মক, এতোটা ভয়হীন এবং এতোটা আকর্ষণীয় দল গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি। এই নিউজিল্যান্ড যে কাউকেই পাত্তা দেয় না! কিন্তু হ্যামিল্টনে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো চ্যালেঞ্জে পড়েছিলো কিউইরা। কারা তাদেরকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলো মনে আছে? হ্যা, বাংলাদেশই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলো ম্যাককালামের দলকে।

হ্যামিল্টনের ওই ম্যাচকে আপনি শুধুমাত্র কিউইদের প্রতি বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ বলেই থামতে পারবেন না। ম্যাচটি তো প্রায় জিতেই গিয়েছিলো বাংলাদেশ। শেষ দিকে, ডেথ ওভারের সময় সাকিবের অহেতুক জুয়া খেলার কারণেই ওই ম্যাচ হারতে হয়েছে। না হলে বুকউঁচু আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারতেন মাশরাফিরা। তিন উইকেটে হারের পরও অবশ্য মাশরাফিদের আত্মবিশ্বাসে কোনো রকম ফাটল ধরার কথা নয়। নিউজিল্যান্ডের কাছে এই বিশ্বকাপে ওভাবে হারতেই বা পেরেছে কারা!

হ্যামিল্টনের উইকেট ছিলো দুর্ধর্ষ কিউই পেসারদের অনুকুলে। যারা প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের কাঁপিয়ে দেওয়া ছাড়া কিছুই ভাবতে পারে না। সেই তাদের সামনে, অনভ্যস্ত কন্ডিশনে কী দুর্দান্তই না খেললো বাংলাদেশ। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে নিজের ব্যাটিং প্রতিভার অসাধারণ নমুনা রাখলেন মাহমুদুল্লাহ। সৌম্যও বোঝালেন বয়সের তুলনায় ভালোই পরিণত তিনি। এ ছাড়া সাব্বির- নাসিরও যতোটুকু সম্ভব নিজেদের জাত চেনালেন; আহা, এই বাংলাদেশকেই তো দরকার। ভারতের গলা শুকানোর জন্য অস্ট্রেলিয়া- দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে এই বাংলাদেশই তো বেশি উপযোগী। হয়তো বেশি কার্যকরীও।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টনের ওই ম্যাচটির কারণেই বাংলাদেশের উচিত স্বপ্ন বড় করা। ভারত ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর দল। তারা বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। দলটাও দুর্দান্ত। সবাই ফর্মে। কিন্তু তারা অজেয় নয় কোনোভাবেই। এই বিশ্বাসটা রেখে এবং নিজেদের বিশ্বাসের প্রতি ভরসা করে মাশরাফিদের উচিত কোয়ার্টার ফাইনালে একটা মরণকামড় দেওয়া। দারুণ এক অর্জনের সামনে দাঁড়িয়ে মাশরাফিদের উচিত আরো বেশী ভয়ডরহীন হয়ে উঠা। আরো দুর্ধর্ষ, আরো নির্মম এবং আরো বেশি অগ্নিরূপ ধারণ করা মাশরাফিদের কাছে এখন সময়ের দাবি। তাতেই ভারতের অব্যাহত অবহেলার জবাব দেওয়া যাবে,মাড়িয়ে দেওয়া যাবে সেমিফাইনালের মঞ্চও। সেখানে আরো একবার ‘বড় দলের’ ত্বকমা মাখা কাউকে বাজিয়ে দেখা যাবে। কে জানে সেই বাজিয়ে দেখার উপলক্ষ্য মাশরাফিদের জন্য আরো বড় কোনো মঞ্চের পথ দেখিয়ে দেয় কিনা!

আপনি আরো পড়তে পারেন

বাংলাদেশকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভারত

স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে দুই-এ অস্ট্রেলিয়া

শেষ ম্যাচেও ভারতের সহজ জয়