সুপার লিগ যেন ‘ছাইচাপা আগুন’
- Details
- by প্রিন্স রাসেল
এপ্রিল, ২০২১। ক্লাব ফুটবল দুনিয়ার ভিত প্রায় নাড়িয়ে দিয়েছিল একটি ঘোষণা। বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ আয়োজনের ঘোষণা দেয় ইউরোপের প্রভাবশালী ১২টি ক্লাব। কিন্তু অঙ্কুরেই ঝরে গেছে তা। ফুল হয়ে ফোটার আগেই সুপার লিগ প্রকল্প দমন করে ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফা ও বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় অভিভাবক ফিফা। তাদের সমর্থন দেয় জাতীয় পর্যায়ের সংগঠনগুলো।
ইউরোপিয়ান সুপার লিগ, ফিফা, উয়েফা
সংস্থাগুলোর অসহনীয় চাপ, ভক্ত-সমর্থক ও সাবেক-বর্তমান ফুটবলারদের তীব্র সমালোচনায় মুখ থুবড়ে পড়ে নতুন টুর্নামেন্ট ইউরোপিয়ান সুপার লিগ। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এলোমেলো হয়ে যায় পুরো পরিকল্পনা। প্রবল চাপের মুখে সরে দাঁড়ায় লিভারপুল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি, টটেনহাম হটস্পার, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, এসি মিলান ও ইন্টার মিলান।
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া সুপার লিগ প্রকল্পের সঙ্গে একমত ছিল না প্রভাবশালী ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ও প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। যেটি উয়েফা ও ফিফার জন্য বড় স্বস্তির ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অস্বস্তিটা জিইয়ে রাখল ‘নাটের গুরু’ রিয়াল মাদ্রিদ। তাদের সঙ্গেই থাকল বন্ধুপ্রতীম বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস।
এই তিনটি ক্লাবকে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছিল উয়েফা। এখন পর্যন্ত তারা কিছুই করতে পারেনি এই শক্তিশালী জোটকে। সরে দাঁড়ানো ৯টি ক্লাব যখন নিজেদের ভুল বুঝে ক্ষমা প্রার্থণা করেছিল তখন নিজেদের সিদ্ধান্ত আর প্রকল্প নিয়ে আরও অবিচল ছিল রিয়াল, বার্সা ও জুভেন্টাস। তাদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নেমেও পিছু হটেছিল উয়েফা।
বল মাঠে গড়ানোর আগেই সুপার লিগ যে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিল তাতে অনেকেই ধরে নিয়েছিল এই প্রকল্প ভেস্তে গেছে। কিন্তু এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রাণপণ লড়াইয়ে চালিয়ে গেছে তিনটি ক্লাব। আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরছে তারা। ইউরোপিয়ান সুপার লিগ এখন হয়ে উঠেছে গোদের ওপর বিষফোড়া। যার ব্যথাটা একটু আধটু টের পাচ্ছে উয়েফা।
পুরোনো প্রকল্প এবার আসছে নতুন চেহারায়। তাদের এই প্রত্যাবর্তনের সঙ্গী ৮০টি ক্লাব। এসব ক্লাব প্রতি মৌসুমে অন্তত ১৪টি করে ম্যাচ খেলবে। খবরটা ভড়কে যাওয়ার মতোই। হ্যাঁ, চমকপ্রদ হলেও এটিই সত্য। রিয়াল, বার্সা ও জুভেন্টাসের পরিকল্পনা এখন এতটাই বিস্তৃত হয়ে গেছে। এবার কোমড় বেঁধে পায়ের তলায় মজবুত ভিত নিয়েই মাঠে নেমেছে তারা।
তাদের পেছনে অর্থের উৎসের অভাব নেই। পর্দা আড়ালে আছে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। প্রকাশ্যে এসেছে কেবল টাকার কুমীর খ্যাত ‘টোয়েন্টিটু স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট’। বিচ্ছিন্ন সুপার লিগ মাঠে গড়াতে পৃষ্ঠপোষণা ও সহায়তায় প্রস্তুত আছে তারা। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী বেরন্ড রাইচার্ট নতুন পরিকল্পনার ঘোষণা দেন। ক্লাব ফুটবলের কাঠামোটাই পাল্টে দিতে চান তারা। এতে করে আরও একবার কেঁপে উঠল উয়েফার হৃদপিণ্ড!
ইউরোপের ৫০টি ক্লাব ও ফুটবলের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনার ফল হিসেবে এই রূপরেখার বিবৃতি দিলো সংস্থাটি। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে পরিবর্তনটা জরুরি মনে করছে তারা। যেখানে স্থায়ী সদস্য হিসেবে কেউ থাকবে না। প্রতিযোগিতা হবে পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উয়েফা ও ফিফা এবার দমাতে পারবে সুপার লিগ প্রকল্পকে?
উত্তরটা এখনই দেওয়া কঠিন। কারণ আগাম নিষেধাজ্ঞার খড়গে যেন পড়তে না হয় তাই ‘কোর্ট অব জাস্টিস অব দ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন’-এ আবেদন করে রেখেছে রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা ও জুভেন্টাস। আলাদতের রায় আসার কথা এ বছরই। টুর্নামেন্টের পথচলা মসৃণ করতেই সুপার লিগ কর্তৃপক্ষের এমন আগাম প্রস্তুতি।
মূলত মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিপুল আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই সুপার লিগ প্রকল্পের উত্থান হয়। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে চলা আলোচিত-সমালোচিত এই টুর্নামেন্ট শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে কিনা এই প্রশ্নের উত্তর সহসা মিলবে না। এটি ঠেকাতে উয়েফা কেমন কৌশল গ্রহণ করতে পারে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম দফায় সুপার লিগ দমনে উয়েফা পাশে পেয়েছে ফিফা ও জাতীয় পর্যায়ের প্রায়সব সংগঠনকে। ধারণা করা হচ্ছে, এবারও উয়েফার পাশে দাঁড়াবে তারা। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকা যাবে তো? পায়ের নিচেই যে ছাইচাপা আগুন। যার ধোঁয়ার কুণ্ডলি ইতোমধ্যে উড়তে শুরু করেছে। সেখানে একটু জল দেওয়ার চেষ্টা করলেন স্প্যানিশ লা লিগা প্রধান হ্যাভিয়ের টিবাস।
অভিজ্ঞ এই ফুটবল সংগঠক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এক পোস্টে দাবি করেছেন, ফুটবলকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ। আসলেই কি তাই? এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত তোলা থাকল সময়ের হাতে। কার্যত আরও একটা স্নায়ুযুদ্ধ দেখা ছাড়া ফুটবলপ্রেমীদের কিছুই করার নেই।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.