অপুষ্টি নয়, আপনার নীরব ঘাতক স্থূলতা

শুনতে অবাক লাগলেও, না খাওয়ার চেয়ে অতিরিক্ত খাওয়াই এখন বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে পৃথিবীর মানুষের জন্য। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় স্থূলকায় মানুষের সংখ্যা এখন পর্যন্ত কম। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেমন ভারত বা চীনে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মেদও বাড়ছে। বাড়ছে গড় ওজনের মাত্রা।

গত চার দশকে সারা বিশ্বে স্থূলকায় মানুষের হার মারাত্মকভাবে বেড়েছে। ১৯৭৫ সালে যা ছিলো প্রায় সাড়ে ১০ কোটি, এখন তা ৬৪ কোটিরও বেশিতে গিয়ে ঠেকেছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতি পাঁচ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে এক জন স্থূলকায় হবেন।

বাংলাদেশেও পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। আমাদের দেশে বিভিন্ন ফাস্ট ফুড চেইনের প্রসার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের গড় ওজন। ছোটদের স্বাস্থ্যের ওপরও এই জাঙ্ক বা ফাস্ট ফুড বিরূপ প্রভাব ফেলছে। আর আমরা জানি, স্থূলতা ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ক্যান্সারসহ নানান রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। একটু খেয়াল করে দেখুন, আজকাল এসব রোগের প্রকোপ খুব বেশি দেখা যাচ্ছে।

এ বিষয়ে আমরা কী করতে পারি? হ্যাঁ, চাইলে অনেক কিছুই করতে পারি আমরা। প্রথমত নজর দিন বাচ্চাদের শরীরের দিকে। বাচ্চাদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা ভয়াবহভাবে দেখা যাচ্ছে। এর কারণ হলো, বাচ্চাদের খেলার জায়গার অভাব, আশেপাশে খেলার মাঠ না থাকা। তাদের অবসর সময় কাটে কম্পিউটারে-মোবাইলে গেইম খেলে বা টিভি দেখে। তাদের এভাবে সময় কাটাতে না দিয়ে অফিস থেকে ফিরে বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে বরং বেরিয়ে পড়ুন। বাইরে থেকে কিছুক্ষণ হেঁটে আসুন। আকাশের তারা অথবা আশেপাশের গাছপালা চেনান। সারাদিন কিভাবে কাটল তার গল্প করুন, এতে করে বাচ্চার সাথে বন্ধনটাও শক্ত হবে, শরীরও ভালো থাকবে।

বাচ্চাদের ফাস্ট ফুড বা প্রসেসড ফুড থেকে দূরে রাখুন। প্রয়োজনে বাড়িতেই তৈরি করুন চিকেন ফ্রাই। ফাস্ট ফুডে লবন, তেল, অতিরিক্ত চর্বি, ক্ষতিকর খাদ্য উপাদান অনেক বেশী পরিমানে থাকে। তাই বাড়িতে বানানো খাবার সবাই মিলে বসে খান। এতে শরীর-মন দুইই ভালো থাকবে। বাচ্চাকে কোমল পানীয়, চকোলেট না দিয়ে এর বদলে লেমনেড, ফলের রস, কুলফি দিন।

বড়দের যে সমস্যা তা হলো খাওয়ার পর ক্যালোরি বার্ন না করা। ব্যায়াম না করেই দীর্ঘক্ষণ চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, বসে কাজ করা, ডিপ্রেশনের কারণে বেশি খাওয়া, প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া ইত্যাদি ওজন বাড়ার কারণ।

স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন এড়াতে এই ছোট পদক্ষেপগুলো আমরা নিতে পারি। যেমন নিয়মিত ব্যায়াম তা না হলে হাঁটা, প্রসেসড ফুড, কোমল পানীয়, অতিরিক্ত লবন না খাওয়া। গরু বা খাসির মাংস যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা।

স্থূলতা থেকে দূরে থাকতে সবচেয়ে জরুরী ছোটবেলা থেকে স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে তোলা। যেমন, খাবার সময় ক্যালোরি বুঝে খাওয়া, সকালে ভারী নাস্তা করা, দেশি মুরগী খাওয়া, শাকসবজি- মাছ বেশি খাওয়া, একবারে বেশি না খেয়ে ঘন ঘন খাওয়া ইত্যাদি।

সুতরাং সচেতন হোন, সুস্থ্য থাকুন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

শীতের আগমনীতে শিশুর যত্ন

সমীক্ষা: রাতের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে স্মার্টফোন

অসুখে আপনার বন্ধু পেঁয়াজ

ঘৃতকুমারীর আশ্চর্য ব্যবহার

গুণে ভরা কমলার রস ও খোসা, যা না জানলেই নয়