আপনি পড়ছেন

ইউরোপ যখন ক্রমবর্ধমান ইসলামবিরোধী মনোভাবে জর্জরিত এবং কোরআন পোড়ানোর জঘন্য কাজগুলো অনেকের কাছে মজার বিষয় হয়ে উঠছে তখন টিআরটি ওয়ার্ল্ডের সাথে আলাপচারিতায় মেতেছিলেন একজন ডাচ রাজনীতিক, যিনি তার সারা জীবন ইসলামবিরোধিতায় কাটিয়ে এসে এখন ইসলামের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমান হতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

joram van klaverenজোরাম ভ্যান ক্ল্যাভেরেন

নেদারল্যান্ডসে অতি ডান চরমপন্থার গডফাদার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন গির্ট ওয়াইল্ডার্স। তার ডান হাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন জোরাম ভ্যান ক্ল্যাভেরেন। রাজনৈতিক জীবনের নিজের অবস্থান সম্পর্কে বলেন, বছরের পর বছর ধরে, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে ইসলামের সাথে লড়াই করার জন্য আমার যা কিছু ছিল, সবই দিয়েছি। আমি নেদারল্যান্ডসের সমস্ত ইসলামিক স্কুল বন্ধ করার জন্য আইন পাস করার চেষ্টা চালিয়েছি। দেশের প্রতিটি মসজিদ বন্ধ করার চেষ্টা করেছি। এমনকি আমি কোরআনকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করেছি, একসময় আমি যেটিকে বিষ বলে ডাকতাম।

একজন সক্রিয় পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে ইসলামের বিপদ সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করার জন্য আমার পক্ষে যতদূর সম্ভব আমি তা করেছি। আমি ইসলামকে সত্যিকারের ধর্ম বলেই মনে করিনি। বরং আমি এটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক রাজনৈতিক মতাদর্শ মনে করতাম। আমার নিশ্চিত ধারণা ছিল, ইসলাম সহিংস, নারী-বিরোধী, খ্রিস্টান-বিরোধী এবং তারা অবশ্যই সন্ত্রাসবাদকে প্রচার করেছে।

mosque in netherlandsনেদারল্যান্ডসে মুসলিম

মূলত অনেকগুলো রক্ষণশীল প্রতিবাদী ধর্মতত্ত্ব ও লালন-পালনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা অন্যান্য ধর্ম বিশেষ করে ইসলামকে বিপথগামী হিসেবে বিবেচনা করেছিল। খ্রিষ্টানদের ত্রিত্ববাদ ও যিশুখ্রিষ্টের দেবত্বকে প্রত্যাখ্যানের বিষয়টির জন্য পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামকে খারাপ হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়।

জোরাম ভ্যান ক্ল্যাভেরেন বলেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থিও ভ্যান গগ নামের একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা নিহত হন। সেদিন আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমাকে এই দুষ্ট ধর্মের বিরুদ্ধে দেশকে রক্ষা করতে হবে এবং মৃত্যুর দিন পর্যন্ত ইসলামের সাথে লড়াই করতে হবে।

এ অবস্থা থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার যাত্রা সম্পর্কে ওয়ার্ল্ড ক্ল্যাভেরেন বলেন, রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার পর ইসলাম বিরোধী বই লিখছিলাম আমি। এটা ছিল আমার অনেক দিনের ইচ্ছা। আমি ইসলামের বিরুদ্ধে রাজনীতিতে যা বলেছি তার একটি তাত্ত্বিক ভিত্তি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বই লিখতে গিয়ে আমার তথ্য অনুসন্ধানের সময়, আমার মনে হলো, আমার জানা অনেক তথ্যে কিছুটা ফাঁক আছে। যেহেতু আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বই লিখতে শুরু করেছিলাম, তাই আমি মুসলিম আলেমদের কাছেও গিয়েছিলাম। এক পর্যায়ে আমি অধ্যাপক আবদাল হাকিম মুরাদের (পূর্বে টিমোথি উইন্টার নামে পরিচিত) কাছেও যাই। আমি মনে করেছিলাম, তিনি কখনোই আমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন না কারণ আমি একটি মুসলিমবিরোধী দলের অংশ। কিন্তু তিনি আমার প্রশ্নগুলো উত্তর দিয়েছেন যত্ন সহকারে। সেই সাথে আমি কোথা থেকে তথ্য পেতে পারি, সেজন্য কিছু বই ও আলোচনার জন্য কয়েকজন আলেমের ঠিকানা দেন।

এতে ধীরে ধীরে আমার মধ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আমার ভেতরে থাকা যাবতীয় প্রশ্নের এমনকি খ্রিষ্টানদের বেশ কিছু প্রশ্নেরও ইসলামিক উত্তর পাই। আমার শেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল মুহাম্মদ (স.) এর নবুওয়াত সম্পর্কে। কয়েক মাস ধরে আমি জীবনচরিত অধ্যয়নের পর আমি নিশ্চিত হয়ে যাই, তিনি সত্যিই আল্লাহর রাসূল ছিলেন।

তবে আমি যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে ইসলামবিরোধিতা করে আসছি, ফলে তখনো আমার ভেতর কিছুটা ঘৃণাবোধ কাজ করছিল। ফলে আমি তখনো ইসলামকে গ্রহণ করতে পারিনি। মুসলমান হতে চাইনি। কিন্তু আমার সাথে আশ্চর্যজনক এক ঘটনা ঘটে। আমি যখন আমার সবপত্র গুছিয়ে রাখছিলাম, তখন কিছু জিনিস তাক থেকে নিচে পড়ে যায়। তার একটি ছিল কোরআনের কপি। যখন আমি সেটি তুলছিলাম, তখন আমার বুড়ো আঙ্গুল ছিল কোরআনের একটি আয়াতে, যেখানে বলা হয়েছিল, চোখ অন্ধ নয়, হৃদয়ই অন্ধ।

সত্যি বলতে এটাই ছিল আমার সমস্যা। ওই অবস্থায় আমি প্রভুর কাছে ছোট একটি দোয়া করেছিলাম, বলেছিলাম এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করতে। আমার ওপর কোনো সোনার তারা এসে পড়েনি। কিন্তু পরের দিন আমি জেগে ওঠার পরে অনুভব করলাম, ইসলামের প্রতি আমার ঘৃণা ও উদ্বেগের অনুভূতি সম্পূর্ণরূপে চলে গেছে। আমি নিজের ভেতর খুশি অনুভব করলাম। পরে আমি আমার স্ত্রী ও মাকে বললাম, আমি মুসলমান হয়েছি। এটি ২০১৯ সালের ঘটনা।

জোরাম ভ্যান ক্ল্যাভেরেন বলেন, ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর আমি আমার সন্তানদের হত্যার হুমকি পেয়েছি, আমার স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকি পেয়েছি। অবশ্য এগুলোতে আমার নিজের দায় ছিল। কারণ আমি অতীতে চরমপন্থা ছড়িয়েছি এবং আমি সেটাই ফেরত পাচ্ছিলাম।

এখন নেদারল্যান্ডসে পরিস্থিতি পাল্টেছে। এখন এখানে কয়েক ডজন ইসলামিক স্কুল, শত শত মসজিদ ও সংস্থা রয়েছে। সরকারও ক্ষেত্র বিশেষে নামাজ, খাবার এবং পোশাক সম্পর্কিত ইসলামিক অনুশাসনকে বিবেচনা করে। তারপরও এখানে রাষ্ট্রীয় ইসলামোফোবিয়ার মতো একটি জিনিসও রয়ে গেছে, যা মসজিদে অনুদান প্রদানকারী লোকদের প্রতারক হিসেবে দেখে, মসজিদের বিদেশি তহবিল রোধ করতে চায়, কোরবানি নিষিদ্ধ করতে চায়, নেদারল্যান্ডস থেকে ইসলাম নিষিদ্ধ করতে চায় এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে বৈষম্য করার চেষ্টা করে।

ইউরোপের ইসলামোফোবিয়া বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পাশ্চাত্যে অধিকাংশ মানুষ ইসলাম সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। তারা যা দেখে তা হল মুসলমানদের আচরণ। পাশাপাশি তারা ইন্টারনেট ও টেলিভিশনে যতটুকু দেখে। সমস্যা হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে খারাপ কিছু হলে মিডিয়া অবিরামভাবে এর পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। আর কিছু রাজনৈতিক দল বিষয়টি জানে এবং সেটা ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে।

তাই মুসলমান হিসেবে আমি মনে করি, আমাদের আরও বেশি করে দাওয়াহ অনুশীলন করা উচিত এবং পশ্চিমা বিশ্বের লোকজনের কাছে ইসলামের বাণী নিয়ে যাওয়া উচিত।

আর বর্তমানে অধিকাংশ অমুসলিম কোরআন বা হাদিস পড়ে না। তারা আমাদের পড়ে অর্থাৎ আমাদের দেখে। তাই আমাদের উচিত হবে প্রকৃত মুসলমানের মত জীবন যাপন করার চেষ্টা করা। আপাতত অমুসলমিদের ইসলাম দেখানোর এটাই সঠিক উপায় বলে মনে করেন জোরাম ভ্যান ক্ল্যাভেরেন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.