জার্মানির সাড়া না পেয়ে জাতিসংঘের দ্বারস্থ পোল্যান্ড

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দখলদারি ও ক্ষয়ক্ষতির জন্য জার্মানির কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে সাড়া পায়নি পোল্যান্ড। বিষয়টি নিয়ে কোনোরকম আলোচনা করতেও রাজি হয়নি জার্মানি। এ অবস্থায় পোল্যান্ড সরকার ক্ষতিপূরণ আদায়ে সাহায্য চেয়ে জাতিসংঘের কাছে চিঠি দিয়েছে। পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আরকাদিউস মুলারচিক এ কথা জানিয়েছেন। খবর এপি, সিনহুয়া।

গত ১ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন প্রকাশ করে পোল্যান্ড

গতকাল ওয়ারসতে এক সংবাদ সম্মেলনে মুলারচিক বলেন, জাতিসংঘ ব্যবস্থায় সংলাপের কিছু পথ রয়েছে। একইসঙ্গে এ প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে যুদ্ধকালীন সময়ে জার্মান আগ্রাসন ও দখলদারিত্বের ফলে উদ্ভূত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরা সম্ভব। আমরা এ পথ ব্যবহার করতে চাই।

গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড সরকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সে দেশের ভৌত ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে জার্মান দখলে থাকাকালীন সময়ে পোল্যান্ডের অর্থনীতি, অবকাঠামো ও জনমিতির নানা ক্ষতি তুলে ধরে জার্মানির কাছে মোট ৬ লাখ ২০ হাজার কোটি যলটি (১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার) ক্ষতিপূরণ দাবির কথা বলা হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশের ধারাবাহিকতায় পোল্যান্ড সরকার গত ৩ অক্টোবর ক্ষতিপূরণ চেয়ে জার্মানির কাছে একটি কূটনৈতিক নোট প্রেরণ করে। জার্মান সরকার গত ২৮ ডিসেম্বর শনিবার ওই নোটের জবাব পাঠিয়ে জানিয়েছে, ক্ষতিপূরণের বিষয়টি এরইমধ্যে চুকে গেছে। এ নিয়ে নতুন করে কথা বলার অবকাশ নেই।

পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী বলেন, জার্মান সরকারের প্রতিক্রিয়া ও জবাবে পোল্যান্ড ও পোলিশ জনগণের প্রতি অশ্রদ্ধামূলক মনোভাব ফুটে উঠেছে। জার্মানি যেহেতু বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেছে বলে বিশ্বাস করে, তাই তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতিপূরণ নিয়ে আর কোনো আলাপে আগ্রহী নয় বলে জানিয়েছে।

জার্মানির দাবি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের পরপর পোল্যান্ডকে ভূখণ্ড ছেড়ে দিয়ে ও অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা হয়। ওয়ারস তখন নিজেদের পাওনা বুঝে নিয়ে জার্মানির কাছে ক্ষতিপূরণের সব দাবি তুলে নেয়।

অন্যদিকে পোল্যান্ড বলছে, সে সময় ওয়ারসতে কমিউনিস্ট সরকার ছিল। তারা মস্কোর চাপে পড়ে দাবি প্রত্যাহার করেছিল। চাপের মুখে থেকে তারা যে সমঝোতা করেছিল তা আইনতঃ গ্রহণযোগ্য নয় বলে পোল্যান্ডের দাবি।

পোল্যান্ডকে পাঠানো জার্মান সরকারের অফিসিয়াল নোটে বলা হয়েছে, যুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ ও মাশুলের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। জার্মান সরকার এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে অনিচ্ছুক।

পোল্যান্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এখন ক্ষতিপূরণের জন্য আরও বৃহত্তর পরিসরে চেষ্টা চালাবেন। এ বিষয়ে সহযোগিতা ও সমর্থন চেয়ে মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও সংস্থাটির অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

পোল্যান্ডের ইউরোপীয় সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী সাইমন সিনকোস্কি বলেন, ক্ষতিপূরণ আদায়ে কয়েক বছর এমনকি কয়েক দশক পর্যন্ত লাগতে পারে। তবে পোলিশ জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে এ ক্ষতিপূরণ চাওয়া ও আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।