ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক একটি আদর্শ টি-টোয়েন্টি লিগের যেসব উপাদার দরকার এর অনেককিছুই নেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল)। টুর্নামেন্ট ইতোমধ্যে আটটি আসর শেষ হলেও এখন পর্যন্ত এটি আদর্শ কোনো কাঠামোগত রূপ পায়নি। যেটার মাসুল দেওয়া লাগতে পারে অদূর ভবিষ্যতে। অস্তিত্ব সংকটের আশঙ্কায় পড়তে যাচ্ছে এই টুর্নামেন্ট।

comilla victorians celebrationএবারের বিপিএলে শিরোপা ধরে রাখতে লড়বে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপানের দাবি ছিল, বিপিএল বিশ্বের সেরা দ্বিতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। যদিও তার দাবির সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুব কমই পাওয়া যায়। কারণ, এক দশক পাড়ি দেওয়ার পরও বিপিএল সঠিক কোনো কাঠামো দাঁড় করাতে পারেনি। এর মূল দায়টা অবশ্য বিসিবিরই।

টুর্নামেন্টের আগের আটটি আসরে বিপিএলে খেলার চেয়ে ‘ধুলা’ বেশি উড়েছে। সঠিক পরিকল্পনার অভাব, আম্পায়ারিং বিতর্ক, অস্বচ্ছ সম্প্রচার, সর্বোচ্চ প্রযুক্তির (ডিআরএস) ব্যবহারে সংকট, তারকা খেলোয়াড়ের ঘাটতি, কম প্রাইজমানি, বাজে উইকেট, নিম্নমানের ধারাভাষ্য, ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক জটিলতা, ফ্র্যাঞ্চাইজিদের আসা-যাওয়া নিয়েই বেশি কথা হয়েছে বিগত বছরগুলোতে।

ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো বিস্ফোরক বিষয়ও যথেষ্ট ভুগিয়েছে বিপিএলকে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টের কিছু ম্যাচ নিয়ে এখনও অভিযোগ আছে। এসব বিতর্কের মাঝে যুক্ত হয়ে আছে খেলোয়াড়দের সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক পক্ষের বিরোধ। যা টুর্নামেন্টের ভাবমূর্তি অনেকটাই ক্ষুণ্ন করেছে। তাতে বিসিবির ভ্রুক্ষেপ কমই দেখা গেছে।

এসব সমস্যার বেশির ভাগই হয়তো সমাধান করা যেত, যদি বিসিবি সতর্ক থাকতো কিংবা সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নিতো। কেবল দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসনই নয়, নেপথ্যে দায় আছে ফ্র্যাঞ্চাইজিদেরও। টুর্নামেন্ট নিয়ে বিসিবির সঙ্গে তাদের বেশ কিছু বিষয়ে এখনও মতের পার্থক্য রয়ে গেছে। যেটির সমাধান করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর মধ্যে বিগ ব্যাশ বেশ পুরোনো। অস্ট্রেলিয়ান এই টি-টোয়েন্টি লিগ নিয়ে প্রশ্ন তোলার জায়গা খুব কমই। এই ধরনের টুর্নামেন্টে সবচেয়ে সফল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। প্রায়সব ক্রিকেটারের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এটি। জনপ্রিয়তার দিক থেকেও এটি তুঙ্গে। আইপিএলের প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বললেই চলে।

আইপিএল আজকের এই অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছে অনেক কারণেই। যার মূলে রয়েছে সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ও সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা। ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডে (বিসিসিআই) আইপিএল নিয়ে শুরু থেকেই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার পথে হেঁটেছে। মুনাফার বড় একটা অংশ ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গেও ভাগাভাগি করেছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আইপিএলকে অনেক আগেই একটা মানসম্মত কাঠামোতে দাঁড়ি করিয়ে ফেলেছে।

এই জায়গায় বেশ পিছিয়ে আছে বিসিবি। দীর্ঘ মেয়াদের বদলে স্বল্প মেয়াদি পরিকল্পনার পথে শুরু থেকেই হেঁটেছে তারা। ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের সঙ্গে অল্প সময়ের চুক্তি করেছে বোর্ড। যদিও বেশির ভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজির দাবি ছিল দীর্ঘ মেয়াদের চুক্তি। এতে করে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের ঝুঁকি যেমন কমতো তেমনি মুনাফা প্রাপ্তির সম্ভাবনাও বাড়তো।

কিন্তু বিসিবির রাজি না হওয়ায় কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি বিপিএল ছেড়ে গেছে। এ ছাড়া বিপিএল থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব আয়ের একটা অংশের দাবি অনেক দিন ধরেই করে আসছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। যেটি ভাগাভাগি করতে কখনোই রাজি হয়নি বোর্ড। পরিস্থিতি এখন এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, ফ্র্যাঞ্চাইজিদের দাবিগুলো মেনে নিলেও কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে বিপিএলকে।

কারণ অনেক দেশেই এখন চালু হয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ। বিগ ব্যাশ, আইপিএলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তান সুপার লিগ, লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ ও আরব আমিরাত প্রিমিয়ার লিগ। নতুনরূপে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। এ ছাড়া টি-টেন লিগ, দ্য হান্ড্রেডের মতো বিভিন্ন টুর্নামেন্ট তো আছেই। অর্থাৎ বিপিএলের প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

এসব টুর্নামেন্টের কয়েকটির সূচি প্রায় সমসাময়িক। এ কারণে খেলোয়াড় পাওয়ার কাজটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে বিপিএলের জন্য। বেগ পেতে হচ্ছে ডিআরএস নিয়েও। এই সংকটের কারণে এবারও টুর্নামেন্টের রবিন লিগ রাউন্ড হতে যাচ্ছে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ছাড়া। আশার কথা হচ্ছে, প্লে-অফ থেকে পাওয়া যাবে ডিআরএস।

ক্রিকেটারদের জাতীয় দলের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি তো আছেই, পাশাপাশি বা একই সময়ে কয়েকটি টুর্নামেন্টের কারণে এবারের বিপিএলেই তো খেলোয়াড় পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ভাগ্যিস, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এবার বিপিএলের জন্য কয়েকজন খেলোয়াড়কে পাঠাচ্ছে। না হলে হয়তো বড় বিপদেই পড়তে হতো বিপিএলকে।

শ্রীলঙ্কার বেশকিছু খেলোয়াড় বিপিএলে নিবন্ধন করিয়েছেন বটে কিন্তু ভারত সিরিজের জন্য তাদেরও আপাতত পাওয়া যাচ্ছে না। পাকিস্তানি যেসব ক্রিকেটার আসছেন তারাও হয়তো পুরো আসর খেলতে পারবেন না। কারণ তাদের সামনে অপেক্ষা করছে পিএসএল। সবমিলিয়ে এবারের বিপিএলে বিদেশি তারকাদের উপস্থিতি একটু কমই দেখা যাবে।

এসব সীমাবদ্ধতা বিপিএলের ভবিষ্যতকে প্রায় অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অনিশ্চয়তার এসব মেঘ সরিয়ে টুর্নামেন্টে আলো ফেরাতে বিসিবি দ্রুতই ভাবতে হবে। টিকে থাকার এই লড়াইয়ে বোর্ড কতক্ষণ টিকে থাকতে পারবে সেটা বলে দেবে সময়। কার্যত সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলে বিপিএলের অস্তিত্ব যে সংকটের মুখে পড়বে সেটা এক প্রকার নিশ্চিত।

সবমিলিয়ে বিপিএল কোথায় দাঁড়িয়ে আছে এটার একটা নমুনা মিলতে পারে আগামী ৬ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া আসরে। তবে এটি যে টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং আসর হতে যাচ্ছে এটা কিছুদিন আগে মেনে নিয়েছেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ও বিসিবি পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক।

সংবাদ সম্মেলনে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘অবশ্যই এটা আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সারা বিশ্বেই পড়েছে। আর্থিক একটা মন্দা ভাব দেখা যাচ্ছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) নিজেও খরচের ব্যাপারে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বিপিএলের সময় অন্য ফ্রাঞ্চাইজি লিগ হওয়াতে খেলোয়াড় পাওয়াও কঠিন হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি।’

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.