ব্রাজিল ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের মহানায়ক ছিলেন পেলে

তিন তিনটি বিশ্বকাপ জেতা পেলে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তিনি ছিলেন ব্রাজিলেরই প্রতিচ্ছবি। শুধু তাকে দিয়েই যেন চেনা যেত ব্রাজিলকে। তবে শুধু ব্রাজিল নয়, আরেকটি দেশেও তিনি মহানায়ক। যে দেশের ক্রীড়াঙ্গন বদলে গিয়েছিল তার কারণে। সেই দেশটির নাম যুক্তরাষ্ট্র। তাই ব্রাজিলের মানুষদের কাছে তিনি যতটা জনপ্রিয়, যুক্তরাষ্ট্রজুড়েও তার জনপ্রিয়তা মোটেও কম নয়।

পেলে

জীবনের বড় একটা সময় তিনি সান্তোসের হয়ে খেলেছেন। ১৯৭৪ সালে আংশিক অবসরের ঘোষণা দিয়ে পেলে বলেন, আর পেশাদার ফুটবল খেলবেন না। তবে খুব বেশি প্রয়োজন হলে আবার নামবেন সান্তোসের হয়ে। এর একবছর পর তিনি নর্থ আমেরিকান সকার লিগে খেলার সিদ্ধান্ত নেন।

তার এ সিদ্ধান্ত অবাক করেছিল সবাইকে। ইউরোপের এত কাড়ি কাড়ি টাকার অফার ঠেলে পেলে খেলবেন অখ্যাত নর্থ আমেরিকান সকার লিগে! কিন্তু তিনি তা-ই করলেন। যোগ দিলেন প্রায় ইউনিভার্সিটি পর্যায়ের দল নিউইয়র্ক কসমসে। নাম-খ্যাতিহীন দলটিকে তিনি নর্থ আমেরিকান সকার লিগের চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন! দলটির হয়ে মোট ১০৭ ম্যাচে করেন ৬৬ গোল। দলকে এনে দিয়েছিলেন ২টি ট্রফি। এখানেই শেষ নয়। কারণ পেলে সেখানে শুধু খেলতে যাননি। ফুটবলকে শিল্পে পরিণত করা পেলের যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল ফুটবলের সৌন্দর্যকে উত্তর আমেরিকাতে ছড়িয়ে দেওয়া।

নিউইয়র্ক কসমসের হয়ে খেলছেন পেলে

পেলে অজনপ্রিয় ফুটবল খেলাকে যুক্তরাষ্ট্রের জনমানুষের খেলায় পরিণত করেন। আর সেই কারণে তিনি যতদিন আমেরিকায় ছিলেন, জনমানুষের পেলে হয়েই ছিলেন। পেলের এই পদক্ষেপ কেবল আমেরিকানদের মাঝেই ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়নি, বরং ব্রাজিলের আরও অনেকের জন্য সে দেশে খেলার রাস্তা সহজ করে দেয়। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই পরে আমেরিকান ফুটবলে পাড়ি জমান বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলের আরেক কিংবদন্তি কার্লোস আলবের্তো। এরপর দেশটিতে খেলতে যান, জোহান ক্রুইফ, ববি মুর, গর্ডন ব্যাংকস, ইউসেবিও, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাউয়ের মতো তারকারা। পেলে যে ফুটবলকে জনপ্রিয়তা দিয়ে এসেছিলেন, পরবর্তী সময়ে যাওয়া ব্রাজিলিয়ানরা সেই জনপ্রিয়তার শেকড়কে আরও মজবুত করেন। পুরো বিষয়টিই সামগ্রিকভাবে আমেরিকান ফুটবলের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখে।

পেলে তার জীবনে জাতীয় দল ছাড়া সান্তোস ও নিউইয়র্ক কসমসের হয়েই খেলেছেন। আর তাই তো পেলে ফুটবলকে বিদায়ের ঘোষণা দিলে আয়োজন করা হয় ব্যতিক্রমী এক ম্যাচের। তার বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে ১ অক্টোবর ১৯৭৭ আয়োজন হয় সান্তোস ও কসমসের মধ্যে এক প্রীতি ম্যাাচের। পেলের ক্যারিয়ারের সর্বশেষ ওই ম্যাচের প্রথমার্ধ্বে পেলে খেলেন কসমসের হয়ে, আর বাকি সময়টা খেলেন সান্তোসের পক্ষে। প্রীতি ম্যাচ হলেও পেলেকে দেখতে সেদিন স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। সেই সময়ে টেলিভিশনেও দেখানো হয়েছিল এ ম্যাচ। ম্যাচের প্রথমার্ধে পেলে করেন তার ক্যারিয়ারের শেষ গোল। দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয় বৃষ্টি। ওই বৃষ্টির মধ্যেই ম্যাচ শেষে পুরো মাঠ ঘুরে সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান পেলে। সেদিন পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছিল, পেলের বিদায়ে প্রকৃতিও কেঁদে উঠেছে।

আমেরিকার ফুটবল আজ অনেকটাই উন্নত। তবে এর অনেকটা কৃতিত্ব পেলের। আর সে কারণেই ব্রাজিলিয়ানরা পেলেকে যতটা ভালোবাসে, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষেরাও পেলেকে নিজেদের ততটাই কাছে মনে করে। সেই পেলে আর নেই। যাত্রা করেছেন অনন্তের পথে কোটি ভক্ত-সমর্থকের ভালোবাসা নিয়ে।