সান্ত্বনা পুরস্কার পেলেন এমবাপ্পে

ফাইনালে অবিশ্বাস্য এক হ্যাটট্রিক করেও ফ্রান্সের রাজত্ব ধরে রাখতে পারলেন না কিলিয়ান এমবাপ্পে। আজ রোববার রাতে লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে মহানাটকীয় ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে টাইব্রেকে হেরে গেছে তার দল ফ্রান্স। শতভাগের চেয়ে বেশি দিয়ে হ্যাটট্রিক করেও শেষপর্যন্ত ম্লান হয়ে গেলেন এমবাপ্পে। তার জন্য সান্ত্বনার পুরস্কার হিসেবে থাকল গোল্ডেন বুটের ট্রফি।

অবিশ্বাস্য এক হ্যাটট্রিক করেও ফ্রান্সের রাজত্ব ধরে রাখতে পারলেন না কিলিয়ান এমবাপ্পে

প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে থেকেও নির্ধারিত সময়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে দুই মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের সমতায় ফেরান এমবাপ্পে। অতিরিক্ত সময়েও ফের লিড নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। এবারও ফ্রান্সকে সমতায় ফেরান পিএসজি সুপারস্টার।

টাইব্রেকেও দলের পক্ষে প্রথম শটে গোল করেছিলেন এমবাপ্পে। দলকে শিরোপা জেতাতে সম্ভাব্যটুকুর চেয়েও বেশি নিংড়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু টানা দ্বিতীয় শিরোপা জযে আর কিছুই করার ছিল না তার। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। হেরে গেছেন ভাগ্য নির্ধারণীর খেলা পেনাল্টি শ্যুট আউটে।

প্রথম দেড় ঘণ্টায় ২-২ গোলে ড্রয়ের পর অতিরিক্ত সময়ে ফল দাঁড়ায় ৩-৩। পরে টাইব্রেকে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ বীরত্বে ৪-২ গোলে জিতে ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটায় আর্জেন্টিনা। ল্যাটিন আমেরিকান জায়ান্টদের স্বপ্নপূরণের নায়ক লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক করেছেন জোড়া গোল। তবু চ্যাম্পিয়নের সোনালি ট্রফি হাতে তুলতে স্নায়ুচাপের চূড়ান্ত পরীক্ষাই দিতে হলো তাদের।

মূলত ফাইনালটা হয়ে উঠেছিল মেসি বনাম এমবাপ্পে লড়াই। যেখানে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে কিছুটা হলেও ফরাসি স্ট্রাইকার এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু দলীয় ব্যর্থতায় বিফলেই গেল এমবাপ্পের জাদুকরি পারফরম্যান্স। তবে সাত ম্যাচে আট গোল করে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের আলাদা স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।

সাড়ে চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে এমবাপ্পের হাতে উঠেছিল সেরা তরুণের মশাল। তার অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের ওপর দাঁড়িয়ে ক্রোয়েশিয়াকে কাঁদিয়ে দ্বিতীয় ট্রফি জিতেছিল ফ্রান্স। আজ লুসাইলের ঐতিহাসিক ফাইনালে জ্বলে উঠেছেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে জোড়া গোলের পর অতিরিক্ত সময়ে করেছেন আরও একটি।

অথচ ফাইনালে গোল্ডেন বুটের ভাগ্যও দুলছিল পেন্ডুলামের মতোই। ম্যাচের প্রথমার্ধে পেনাল্টি থেকে মেসি করেন আসরের ষষ্ঠ গোল। অতিরিক্ত সময়ে তার গোলে ফের লিড নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু সাত গোল করেও গোল্ডেন বুট জিততে পারেননি তিনি। তার হাতে উঠেছে গোল্ডেন বল।

সবশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপেও এই মুকুটটা পেয়েছিলেন মেসি। কিন্তু আর্জেন্টিনা অতিরিক্ত সময়ের গোলে জার্মানির (১-০) কাছে হেরে যাওয়ায় ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের স্বীকৃতি অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। এবার স্বপ্নের সোনালি ট্রফি এবং গোল্ডেন বল দুটোই জিতেছেন একসঙ্গে। জোড়া এই প্রাপ্তি তাকে নিয়ে গেল মহানায়কের কাতারে।

মেসি যখন ট্রফি হতে উৎসব করছিলেন তখন ক্যামেরা চোখ খুঁজে নিলো বিষণ্ণ এমবাপ্পেকে। টুর্নামেন্টজুড়ে আলো ছড়িয়েও শ্রেষ্ঠত্ব অটুট রাখতে পারেননি দলের। বলতে গেলে ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে প্রায় একাই লড়াই করেছেন তিনি। এর পুরস্কারটা এমবাপ্পে পেয়েছেন নিছকই সান্ত্বনা হিসেবে।

আসলে ব্যক্তিগত কোনো ট্রফি নয়, এমবাপ্পে চেয়েছিলেন দলীয় ট্রফি। প্রায় হারতে বসা ম্যাচটার রোমাঞ্চ তিনিই তো বৃহস্পতির তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এমবাপ্পে ও ফ্রান্সের এমন প্রত্যাবর্তন মাটি হয়ে গেছে টাইব্রেকারে। বিফলে গেছে হ্যাটট্রিকটা।

সবশেষ ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে দেখা গিয়েছিল হ্যাটট্রিক। সেই ফাইনালে জিওফ হার্সট তিন গোল করে ইংল্যান্ডকে জিতিয়েছিলেন স্বপ্নের ট্রফি। কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকায় এবার এমবাপ্পের হার্স্টস হয়ে ওঠা হলো না।