পরিণতি হবে পূর্বাভাসের অতীত, যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার হুঁশিয়ারি

যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট মিসাইল সরবরাহ করলে তার পরিণতি পূর্বাভাসের অতীত হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে রাশিয়া। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম সরবরাহের একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে মর্মে খবর প্রকাশের একদিনের মাথায় ওয়াশিংটনের রুশ দূতাবাস থেকে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হলো। খবর সিএনএন ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট মিসাইল সরবরাহের পরিকল্পনা চুড়ান্ত করছে যুক্তরাষ্ট্র

এর আগে জো বাইডেন প্রশাসনের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে সিএনএন জানায়, মার্কিন সরকার ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট মিসাইল সরবরাহের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে। পরিকল্পনায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন স্বাক্ষর করলে প্রস্তাবনাটি হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হবে। প্রেসিডেন্ট এতে স্বাক্ষর করবেন বলে সংশ্লিষ্টরা আভাস দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্টের অনুমোদন পেলে কয়েকদিনের মধ্যে এ মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনে পাঠানোর  উদ্দেশ্যে জাহাজে বোঝাই করা হবে। একইসঙ্গে, এ মিসাইল পরিচালনার জন্য ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে জার্মানির গ্রাফেনভোহরে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইউক্রেন সরকার বহুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দূরপাল্লার অস্ত্র চাইছে। প্যাট্রিয়ট সিস্টেম পাঠানো হলে তা হবে এ যাবত দেশটিকে দেওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী ও দূর পাল্লার অস্ত্র। এর মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর আকাশ প্রতিরক্ষাও নিশ্চিত হবে।

ইউক্রেনকে কয়টি প্যাট্রিয়ট মিসাইল দেওয়া হবে তা জানাতে পারেনি সিএনএন। তবে একেকটি প্যাট্রিয়ট ব্যাটারিতে থাকে টার্গেট শনাক্ত ও অনুসরণের জন্য র‌্যাডার, বেশকিছু কম্পিউটার, পাওয়ার জেনারেটিং সিস্টেম, এনগেজমেন্ট কন্ট্রোল স্টেশন এবং আটটি পর্যন্ত লঞ্চার, যার প্রতিটিতে থাকে চারটি রেডি-টু-ফায়ার মিসাইল।

ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট মিসাইল দেওয়ার প্রস্তুতির খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ওয়াশিংটনে রুশ দূতাবাস বলেছে, যুক্তরাষ্টের এমন সিদ্ধান্ত নিলে তা হবে ওয়াশিংটনের তরফ থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরেকটি উসকানিমূলক পদক্ষেপ। এর পরিণতি এমন হতে পারে যার আগাম পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ-সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্যাট্রিয়ট মিসাইল দেওয়া হলে সেগুলো রাশিয়ার আইনসঙ্গত টার্গেট হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব মিসাইল ধ্বংস করতে রাশিয়ার ন্যূনতম দ্বিধা থাকবে না।

এর আগে নভেম্বরে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, ন্যাটো যদি কিয়েভকে প্যাট্রিয়ট সরবরাহ করে এবং সেগুলো পরিচালনার জন্য নিজেদের সৈন্য পাঠায়, তাহলে মিসাইল ও জনবল দুটোই অবিলম্বে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হবে।

রুশ সিনেটের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির ফার্স্ট ডেপুটি চেয়ারম্যান ভ্লাদিমির জাবারভ গতকাল বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদেরকে ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে উসকানি দিচ্ছে। বিশেষত তারা যদি প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সরবরাহ করে, তাহলে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সত্যিকার অর্থেই পৃথিবীকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট মিসাইল দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, ব্যয়বহুল প্যাট্রিয়ট সিস্টেম চালাতে অনেক বেশি জনবল প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে একটি প্যাট্রিয়ট সিস্টেম সরবরাহ করবে বলে শোনা যাচ্ছে। একটি প্যাট্রিয়ট ব্যাটারির ব্যয় এক বিলিয়ন ডলার। এর প্রতিটি মিসাইলের দাম ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ ডলার। রাশিয়ার ৩০ হাজার ডলার মূল্যের ড্রোন ধ্বংসের জন্য এত দামী মিসাইল মোতায়েনের কোনো যুক্তি নেই।

আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো শন ম্যাকফেট সাইরাকিউজ ইউনিভার্সিটি নিউজকে বলেছেন, প্যাট্রিয়ট খুব স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার দিক থেকে প্রতিক্রিয়া ডেকে আনবে। এই মিসাইল সরবরাহ হলে তা হবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় উসকানি। এক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে এবং অপারেট করার জন্য ৯০ জনের মতো মানুষ নিয়োজিত রেখে ড্রোনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চিন্তা অবান্তর।