ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে মেসির যত কীর্তি

আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারে স্বপ্নের ফর্মে আছেন লিওনেল মেসি। গোল করেই চলেছেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। কাতার বিশ্বকাপে তার মাঠে নামা এবং গোল করাই যেন নতুন একটি রেকর্ড। মঙ্গলবার রাতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আরও কয়েকটি রেকর্ড গড়েছেন মেসি। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষের ম্যাচে রেকর্ড বইয়ে ঝড় তুলেছেন মেসি

মেসির দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ক্রোয়াটদের ৩-০ গোলে উড়িয়ে ফাইনালেও উঠে গেছে ল্যাটিন আমেরিকান জায়ান্টরা। ম্যাচে জোড়া গোল করেছেন জুলিয়ান আলভারেজ। তার দ্বিতীয় গোলটার উৎস মেসি নিজেই। ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণভাগকে ঘোল খাইয়ে সতীর্থকে যেভাবে বলটা বাড়িয়েছেন সেটা সম্ভবত তার ক্যারিয়ারের সেরা অ্যাসিস্ট।

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে টস করতে নেমেই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার জার্মানির কিংবদন্তি ফুটবলার লোথার ম্যাথুসকে ছুঁয়ে ফেলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। বৈশ্বিক আসরে মেসি-ম্যাথুস দুজনের ম্যাচ সংখ্যাই এখন সমান ২৫টি। আগামী রোববার ফাইনালে মাঠে নামলেই পিএসজি সুপারস্টার গড়বেন নতুন এক ইতিহাস।

লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ম্যাচে ৩৫ মেসি গড়েছেন আরও একটি রেকর্ড। পেনাল্টি থেকে করেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। এবারের বিশ্বকাপে চারটি পেনাল্টি নিয়ে তিনটিতেই গোল করলেন তিনি।

পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে আসে মেসির গোল সংখ্যা এখন ১১টি। স্পট কিক থেকে ক্রোয়াটদের জাল কাঁপিয়ে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন বিশ্বকাপের ইতিহাসে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে। তিন বিশ্বকাপ খেলে গোলগুলো করেছেন প্রাক্তন এই স্ট্রাইকার। অবশ্য মেসিকে শুভোচ্ছা বার্তা বাতিস্তুতা জানিয়ে রেখেছিলেন আগেই।

সবমিলিয়ে এবারের প্রতিযোগিতায় ৩৫ বছর বয়সী এই প্লেকারের গোল হলো পাঁচটি। এই গোলে তিনি ছুঁয়ে ফেললেন কাতার বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ফ্রান্সের স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পেকে। গত আসরের সেরা তরুণ অবশ্য এক ম্যাচ কম খেলেছেন। মেসি ম্যাচ খেলেছেন ছয়টি। এরমধ্যে কেবল পোল্যান্ড ম্যাচেই গোল পাননি তিনি।

ওই ম্যাচে পেনাল্টি মিস করেন আর্জেন্টিনা দলপতি। স্পট কিক থেকে গোলের সেই সুযোগ হাতছাড়া না করলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ফুটবলার হিসেবে টানা ছয় ম্যাচে গোলের বিরল কীর্তির রেকর্ড হয়ে যেত মেসির। কার্যত বিশ্বকাপে ধারাবাহিক তিন ম্যাচে জালের ঠিকানা খুঁজে নিলেন আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকর।

কেবল নিজে গোল করেই নয়, ৬৯ মিনিটে সতীর্থ জুলিয়ান আলভারেজকে দিয়েও করিয়েছেন একটি। সব মিলিয়ে কাতারের ফুটবল মহাযজ্ঞে তিনটি অ্যাসিস্ট হয়ে গেল তার। প্রতিযোগিতার চলমান আসরে সর্বোচ্চ তিনটি অ্যাসিস্ট ছিল ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেনের। যদিও ইংলিশরা টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছে কোয়ার্টার ফাইনাল রাউন্ডে।

বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ডটা আরও দূরে নিয়ে গেলেন মেসি। এ পর্যন্ত বিশ্বমঞ্চে দেশকে ১৮বার নেতৃত্ব দেওয়া হয়ে গেল তার। এবার তার সামনে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার হাতছানি। যেটা ফাইনালেই হয়তো হয়ে যাবে। আর্জেন্টিনা সেমিফাইনাল নিশ্চিত করায় ম্যাথুসের রেকর্ডটা অবশ্য আগেই নড়বড়ে হয়ে উঠেছিল।

কেবল ম্যাথুস নন, জার্মানির আরেক কিংবদন্তি মিরোস্লাভ ক্লোসার দারুণ একটা রেকর্ডেও এদিন ভাগ বসিয়েছেন মেসি। বিশ্বকাপে ২৩ ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ ১৭টিতে জিতেছিলেন জার্মানদের প্রাক্তন স্ট্রাইকার। তাকে ছুঁতে অবশ্য মেসিকে দুই ম্যাচ বেশি খেলতে হয়েছে। এবারের আসরে আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হলে ক্লোসার রেকর্ড ভেঙে ফেলবেন মেসি।

গোল কিংবা ম্যাচ খেলার রেকর্ড ছাড়া আরও একটা বড় কীর্তির হাতছানি এখন আর্জেন্টিনা অধিনায়কের সামনে। সেটি হলো বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সময় মাঠে থাকার থাকার রেকর্ড। কার্যত যা চারটি বিশ্বকাপ খেলা ইতালির পাওলো মালদিনির দখলে। তিনি মোট খেলেছেন ২২১৭ মিনিট। জার্মানির ম্যাথুস মাঠে ছিলেন ২১০৪ মিনিট।

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষের ম্যাচে দ্বিতীয়জনকে ছাড়িয়ে গেছেন মেসি। বিশ্বকাপে মাঠে তার উপস্থিতি হলো ২১৩৭ মিনিট। ফাইনালে ৮১ মিনিট পর্যন্ত মাঠে থাকলে মেসি পেছনে ফেলবেন মালদিনিকে। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়া এই জাদুকর এখন গোল্ডেন বল জয়ে সবচেয়ে বড় দাবিদার হয়ে উঠেছেন। এবারের বিশ্বকাপে পাঁচ গোল, তিন অ্যাসিস্ট এবং চারটি ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাওয়া মেসি এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলেন।