গ্রুপ অব ডেথ’ বা ‘মৃত্যুকূপ’ বলে একটা কথা প্রতি বিশ্বকাপেই শোনা যায়। ড্রতে যদি তুলনামূলক শক্তিশালী একাধিক দল একই গ্রুপে পড়ে যায়, তাহলেই এই শব্দ চলে আসে আলোচনায়। এবারের বিশ্বকাপেও অন্তত দুটি গ্রুপকে খালি চোখে দেখেই গ্রুপ অব ডেথ রায় দেওয়া যায়। যেমন গ্রুপ ‘বি’ এবং গ্রুপ ‘ই’। একটু সূক্ষ্মভাবে দেখলে গ্রুপ ‘জি’টাকেও বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বলা যায়।

brazil এমন নাচ দেখার অপেক্ষায়

সাধারণত দলগুলোর নাম শুনেই আমরা ধারণা করে নিতে পারি কোন দলের শক্তি কেমন বা কোন দলের বিপক্ষে কোন দলের জেতার কথা। কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে যদি দলগুলোর শক্তিমত্তা বা ফর্মকে দেখা যায়, তাহলে হয়তো এ রকম মৃত্যুকূপ নামের গ্রুপগুলোর পরিস্থিতি আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে। 'জি' গ্রুপে থাকা ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ সুইজারল্যান্ড, সার্বিয়া ও ক্যামেরুন। যেখানে সার্বিয়া ও সুইজারল্যান্ড অনকটাই এক মাপের দল। যাদের সঙ্গে টেক্কা দিতে হলে কৌশলই শেষ ভরসা।

কেননা শারীরিক শক্তিতে কিংবা গতিতে তাদের পরাস্ত করা কঠিন। সেই সাথে ক্যামেরুনও য়ে কম তা নয়। যে কোনো দিন অঘটন ঘটাতে পারে তারা। তাই নেইমারদের নিশ্চিন্তে ঘুমানোর সুযোগ নেই। তবে হ্যাঁ, কিছু কারণে এই ব্রাজিলকে আটকানো কঠিন হবে প্রতিপক্ষের জন্য৷ যার একটি, তাদের আছে নেইমারের মতো একজন। গত বছর অক্টোবরেই নেইমার বলেছিলেন, ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতানোই এখন তাঁর মূল লক্ষ্য।

ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তিদের যে লম্বা তালিকা, অবসর নেওয়ার আগে নেইমার সেখানে বিলক্ষণ নাম লেখাতে চাইবেন। সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত দক্ষতায় কমতি নেই তার। ব্রাজিল-সমর্থকদের এখন অপেক্ষা শুধু বিশ্বকাপে নেইমার যেন ফিট এবং ফুরফুরে মেজাজে থাকেন। বাকিটা সময়ই বলে দেবে।

তারকা: ব্রাজিলের বড় তারকা নেইমার। তিনিই দলটির আক্রমণভাগের মুল ভরসা। তার সঙ্গে ব্রাজিলকে আশা দেখাচ্ছে কাসেমিরো, ভিনিসিয়াস, রদ্রিগোরা। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাতারে পা রাখবেন ভিনি ও রদ্রিগো। এদিকে গোলপোস্টে বিশ্বস্ত আলিসনও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ভালো মৌসুম কাটিয়েছেন। নেইমার লিগ জিতেছেন পিএসজিতে, গ্যাব্রিয়েল জেসুস জিতেছেন ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে। তাদের বাইরে পাকেতা, রাফিনিয়া, আন্তনিওরা ইউরোপের লিগে যথেষ্ট অভিজ্ঞ। ইউরোপিয়ান দলের মুখোমুখি হতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় নেইমারদের।

তবে এক নেইমারের ওপর এখন আর নির্ভর করে না ব্রাজিল। আগের ইতিহাস থেকে তারা শিক্ষা নিয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ বিশ্বকাপে শুধু নেইমারের ওপর ভরসা রাখার ফল টের পেয়েছে ব্রাজিল। চোটের কারণে গত বিশ্বকাপে তো পুরো ফিট হয়েও খেলতে পারেননি পিএসজি তারকা। কথা হলো, এবারও যদি এমন কিছু হয়? গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে যদি নেইমারকে না পায় ব্রাজিল! তখন তো উতরে যাওয়ার পথ বের করতে হবে।

কিংবদন্তি: ব্রাজিলের কিংবদন্তি খেলোয়াড় অনেকেই আছেন। যার মধ্যে পেলে সবচেয়ে বড় লিজেন্ড। তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন পেলে। এছাড়া কাফু, রোনাল্ডো, রোনালদিনহো, কাকা এরাও নিজেদের সময় ছিলেন দুর্দান্ত।

কোচ: লম্বা সময় ধরে দলটাকে নিয়ে কাজ করছেন তিতে। গত বিশ্বকাপের ভুল শুধরে এবার শিরোপার ফুল ফোটানোর পালা। এরইমধ্যে ব্রাজিলের ডাগআউটে থেকে ৫৭ ম্যাচ জিতেছেন তিতে। এবার ব্রাজিলকে নিয়ে বড় স্বপ্ন তার।

অভিজ্ঞতা আর ঐতিহ্যেরও একটা ওজন আছে। সর্বশেষ বিশ্বকাপ পর্যন্ত মূল পর্বে অংশ নেওয়া মোট দলের সংখ্যা ৭৯। কিন্তু বিশ্বকাপ জিততে পেরেছে মাত্র আটটি দল-ব্রাজিল, জার্মানি, ইতালি, উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও স্পেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়া এসব দলের মধ্যে শুধু ব্রাজিলই সব কটি বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলেছে। অর্থাৎ বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতায় কোনো দলই ব্রাজিলকে পেছনে ফেলতে পারেনি। এ অভিজ্ঞতা কতটা দামি, তা বোঝা যায় দলটির সর্বোচ্চসংখ্যকবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায়।

বিশ্বকাপে ১০৯ ম্যাচে ৭৩ জয় নিয়েও সাফল্যে সবার ওপরে ব্রাজিল। যে দলের অভিজ্ঞতা এমন, শিরোপা জয়ের দৌড়ে তারাই যে এগিয়ে থাকবে, সে কথা না বললেও চলে। এখন প্রশ্ন হলো, এই ঐতিহ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে ব্রাজিল কি সফলতা পাবে? জয় যদি হয় অভ্যাস, তাহলে বলতে হবে তিতের দলে এমন ‘উইনার’ আছেন বেশ কয়েকজন।

তিতে ঠিক এ বিষয়ই মাথায় রেখে কয়েক মাস ধরে কাজ করেছেন আক্রমণভাগ নিয়ে। বৈচিত্র্য এনেছেন অ্যাটাকিং থার্ডে। সেখানে কখনো জেসুস, কখনো-বা নেইমারকে দেখা যায়। নেইমারকে ফলস নাইনে খেলানো হয়েছে। রাফিনিয়া-আন্তোনিওকে দিয়ে ডান উইং দিয়ে জায়গা বাড়াচ্ছেন, ভিনিচিয়াসকে বক্সে ঢোকার লাইসেন্স দিয়েছেন। আর পাকেতাকে তো ‘একের মধ্যে তিন’ মিডফিল্ডার বানিয়ে ফেলেছেন ব্রাজিলের এই কোচ। এতসব গুণ যাদের আছে, তারা নিশ্চয়ই গ্রুপ পর্বটা সহজেই পার হয়ে যাবে; এটাই চাওয়া ব্রাজিল সমর্থকদের।

একনজরে

র‍্যাঙ্কিং: ১
প্রথম বিশ্বকাপ: ১৯৩০
মোট বিশ্বকাপ: ২২ বার
চ্যাম্পিয়ন: ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪, ২০০২
বেশি ম্যাচ: কাফু (১৪২)

বেশি গোল: পেলে (৭৭)
গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষ: সুইজারল্যান্ড, সার্বিয়া ও ক্যামেরুন

ফিকশ্চার

২৪ নভেম্বর প্রতিপক্ষ সার্বিয়া, রাত ১টা
২৮ নভেম্বর সুইজারল্যান্ড, রাত ১০টা
২ ডিসেম্বর ক্যামেরুন, রাত ১টা।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.