বিশ্বকাপের তরুণ তুর্কি

সব অপেক্ষার পালা শেষে আজ শুরু হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর। উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় আয়োজক কাতারের বিপক্ষে মাঠে নামবে ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর। সময়ের অন্যতম সেরা তারকাদের পাশাপাশি প্রায় এক মাসের এই ময়দানি লড়াইয়ে নজর কাড়বেন উঠতি কিছু ফুটবলার। এদের মধ্যে থেকে সম্ভাব্য কয়েকজনকে নিয়ে আমাদের এবারের পর্ব বিশ্বকাপের তরুণ তুর্কি।

মোহাম্মদ কুদুস, নুনো মেন্ডিস, রদ্রিগো, লাওতারো মার্টিনেজ

১. মোহাম্মদ কুদুস: আগামী দিনের ঘানা ফুটবলকে নেতৃত্ব দিবেন যে কয়েকজন, সে তালিকার সবার ওপরের দিকেই রাখতে হবে মোহাম্মদ কুদুসকে। ২০১৯ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হয় ২২ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডারের। শুরু থেকেই ঘানার একাদশের প্রাণভোমরা বনে গেছেন কুদুস।

২. নুনো মেন্ডিস: গত জুনেই ২০ এর কোটায় পা দিয়েছেন নুনো মেন্ডিস। এরই মধ্যে নিজের সক্ষমতা দিয়ে পর্তুগালের প্রধান কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের মন জয় করে নিয়েছেন রক্ষণভাগের এই অতন্দ্র প্রহরী। জাতীয় দলের পাশাপাশি প্যারিস সেন্ট জার্মেই, পিএসজির একাদশের নিয়মিত মুখ মেন্ডিস।

৩. রদ্রিগো: পুরো নাম রদ্রিগো সিলভা ডি গোজ। নামের মতো মাঠে নিজের ভূমিকাতেও বেশ লম্বা চওড়া এই তরুণ ফুটবলার। করিম বেনজেমা ভিনিচিয়াস জুনিয়রের পর রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণভাগের প্রধান অস্ত্র বলা হয় ২১ বছর বয়সী রদ্রিগোকে। অনুমিতভাবেই তার কাছে এবারের বিশ্বকাপে অনেক বড় প্রত্যাশা থাকবে ব্রাজিল কোচ তিতের।

৪. এদোয়ার্দো কামাভিঙ্গা: ২০২১ সালের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ফরাসি লিগ ওয়ানের ক্লাব রেনেস ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমান এদোয়ার্দো কামাভিঙ্গা। এরই মধ্যে গ্যালাকটিকোদের প্রধান কোচ কার্লো আনচেলত্তির চোখের মণি হয়ে উঠেছেন। জাতীয় দলের জার্সিতেও নিজের সক্ষমতা দেখিয়েছেন এই মিডফিল্ডার।

৫. ভিনিচিয়াস জুনিয়র: রিয়াল মাদ্রিদের এই উইঙ্গোরকে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। গত মৌসুমে স্প্যানিশ লা লিগার শীর্ষ ক্লাবটির ডাবলস জিততে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ২২ বছর বয়সী তারকা। কাতারের মাটিতে নেইমারের সাথে তাকে ঘিরেই আক্রমণভাগ সাজাবেন তিতে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

৬. লাওতারো মার্টিনেজ: যোগ্যতা বলে গত কয়েক বছর ধরেই আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকিং পজিশনটি নিজের দখলে রেখেছেন লাওতারো মার্টিনেজ। দুই পাশে লিওনেল মেসি ও ডি মারিয়াকে নিয়ে লা আলবিসেলস্তেদের আক্রমণভাগকে অনেক সমৃদ্ধ করেছেন ইন্টার মিলান তারকা।

৭. জামাল মুসিয়ালা: মাত্র ১৯ বছর বয়সেই যে বিশ্বকে চমকে দেওয়া যায় তার জ্বলজ্বলে উদাহরণ জামাল মুসিয়ালা। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ধারাবাহিক পারফর্ম করে এবারের বিশ্বকাপে জার্মানদের স্বপ্ন সারথী হয়েছেন প্রতিভাবান মিডফিল্ডার।

৮. ইউসুফা মুকোকো: সবশেষ দলবদলে আর্লিং হাল্যান্ডকে হারিয়ে ইউসুফা মুকোকোকে দিয়ে শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টায় আছে বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড। চলতি বছর জার্মানি জাতীয় দলের হয়ে পথচলা শুরু করা এই তরুণ প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগের ঘুম হারাম করার সব কৌশলই রপ্ত করেছেন।

৯. পেদ্রি: বার্সেলোনার মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা পেদ্রি গঞ্জালেস। অসাধারণ কারিকুরি দিয়ে ইতোমধ্যে স্পেন তথা বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডারে পরিণত হয়েছেন তিনি। জাভি হার্নান্দেস, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার পর স্পেনের সম্ভাব্য মিডফিল্ডার হিসেবে পেদ্রিকে দীর্ঘ দিন মনে রাখবে স্প্যানিশরা।

১০. গভি: পাবলো মার্টিন পায়েজ গভিরাকে নিয়ে স্পেনের কোচ লুইস এনরিকের চাওয়া অনেক বেশি। বয়সে ছোট হলেও মাঠে নিজের দায়িত্বে সব সময় বড়ত্বের পরিচয় দিয়ে থাকেন এই তরুণ। কাতারেও তার কাছে এনরিকের চাওয়া অনেক বেশি থাকবে।

১১. আনসু ফাতি: বলা হয়ে থাকে বারবার ইনজুরির কবলে না পড়লে এতোদিনে নিজেকে আরও অনেক দূর নিয়ে যেতেন আনসু ফাতি। ইনজুরির ফাঁকফোঁকর গলে ক্লাব কিংবা জাতীয় দলের হয়ে যতটা সময় মাঠে থাকতে পারেন তাতেই সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছেন বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ড।

১২: ফিল ফোডেন: ফিল ফোডেনের ওপর ম্যানচেস্টার সিটির ক্লাসের প্রধান শিক্ষক পেপ গার্দিওলার ভরসা পাহাড় সমান। এর যথার্থতাও আছে। মাঝমাঠের মতো আক্রমণভাগেও সমানতালে পারফর্ম করতে পারেন ইংলিশ তারকা। চলতি মৌসুমে জ্যাক গ্রিলিশ, আর্লিং হালান্ডদের নিয়ে প্রতিপক্ষদের জন্য সাক্ষাৎ যমদূত হয়ে উঠেছেন ফোডেন।

১৩. জুডে বেলিংহাম: বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে ধারাবাহিক ভালো করার ফল হিসেবে জুডে বেলিংহামকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রেখেছেন ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। গুরুর ভরসার প্রতিদান দেওয়ার সব যোগ্যতাই আছে ১৯ বছর বয়সী ফুটবলারের।

১৪. আলফানসো ডেভিস: আলফানসো ডেভিসের ক্লাব এবং জাতীয় দলকে এক পাল্লায় ওজন করা যাবে না। কানাডা জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেও খেলেন বায়ার্ন মিউনিখের মতো ইউরোপ সেরা ক্লাবে। আগামী দিনের সেরা তারকা হওয়ার সব যোগ্যতাই আছে এই লেফট ব্যাক কাম উইঙ্গারের মাঝে।

১৫. আরিলিয়েন চৌমেনি: অনেক টানাটানির পর গত দলদবলে আরিলিয়েন চৌমেনিকে দলে ভিড়িয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। বিশ্বকাপে যে কয়েকজনের খেলোয়াড়ের ওপর ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশমের চোখ থাকবে, তাদের মধ্যে চৌমেনি অন্যতম।

১৬. জুলিয়ান আলভারেজ: বিকল্প হিসেবে জুলিয়ান আলভারেজকে বিশ্বকাপ দলে রেখেছেন আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি। মেসি, ডি মারিয়া, মার্টিনজেরা ইনজুরিতে পড়লে আক্রমণভাগে দেখা যাবে ম্যানচেস্টার সিটি তারকাকে।

১৭. তাকেফুসা কুবো: রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে নতুন মৌসুমে তাকেফুসা কুবোর ঠিকানা হয়েছে রিয়াল সোসিয়েদাদে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বেশ কয়েকটি স্প্যানিশ ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করা এই উইঙ্গার বিশ্বকাপে জাপানের তুরুপের তাস হতে পারেন।

১৮. বুকায়ো সাকা: আর্সেনালের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা বুকায়ো সাকাকে বিশ্বকাপ দলে রাখতে কোনো ভুল করেননি গ্যারেথ সাউথগেট। একাধিক পজিশনে খেলার সামর্থ থাকা এই তরুণও চাইবেন কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে।

১৯. রিচার্লিশন: চোট জয় করে শেষ পর্যন্ত ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেয়েছেন রিচার্লশন। বিশ্বমঞ্চে তিতের আক্রমণভাগের অন্যতম সদস্য হতে যাচ্ছেন টটেনহাম হটস্পারের এই ফরোয়ার্ড তাতে কারও কোনো সন্দেহ থাকার কথা না।