সূর্যাস্তের পর কাতার বিশ্বকাপের সূর্যোদয়
- Details
- by প্রিন্স রাসেল
প্রতীক্ষার প্রহর শেষ। নিঃশ্বাস দূরত্বে চলে এসেছে বহুল আলোচিত বিশ্বকাপ। আজ সূর্যাস্তের পর দোহায় সূর্যোদয় হবে ফিফা ফুটবল মহাযজ্ঞের ২২তম আসরের। টুর্নামেন্টের আয়োজক কাতার। এক যুগ ধরে বৈশ্বিক এই প্রতিযোগিতার মঞ্চায়নের প্রস্তুতি নিয়েছে মধ্যপাচ্যের দেশটি। এখন অপেক্ষা মাহেন্দ্রক্ষণের।
আজ শুরু দুনিয়া কাঁপানো ফুটবল-যুদ্ধ
পারস্য উপসাগরের দেশটিতে আজ বাজবে বিশ্বকাপের বাঁশি। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিক কাতার আতিথেয়তা দেবে ল্যাটিন আমেরিকার দল ইকুয়েডরকে। টুর্নামেন্ট শুরুর ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন, গাজি টিভি ও টি স্পোর্টস। এ ছাড়া বেশ কিছু ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখা যাবে এই লড়াই।
যথারীতি মাসব্যাপী এই লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে ৩২টি দেশ। সর্বোচ্চ ১৩টি দলের প্রতিনিধিত্ব থাকছে ইউরোপ মহাদেশ থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছয়টি দল খেলবে এশিয়া অঞ্চল থেকে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই প্রথম এশিয়া মহাদেশ থেকে এতো দল মূলপর্বের টিকিট পেল। এ ছাড়া আফ্রিকান অঞ্চল থেকে পাঁচটি, দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের চারটি করে দল খেলবে টুর্নামেন্টে।
প্রায় ৩০ লাখ মানুষের বসবাস কাতারে। ছোট্ট এই দেশের পাঁচ শহরের অনিন্দ্য সুন্দর আটটি ভেন্যুতে মঞ্চায়ন হবে ৬৪টি ম্যাচ। যার বেশির ভাগ স্টেডিয়াম নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। কেবল ভেন্যু নির্মাণ নয়, মেট্রো রেল, রাস্তা-ঘাট, হোটেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো কাতার তৈরি করেছে বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে। আসরে চমকে দিতে চায় তারা।
প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে এবারের আয়োজনে। ‘টাকার কুমির’ খ্যাত কাতার এ মহাযজ্ঞ চিরস্মরণীয় করতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। সবকিছুই সাজানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। এবার সুফল পাওয়ার অপেক্ষা। এরইমধ্যে দেশটিতে পৌঁছে গেছে অংশ নেওয়া সবকটি দল ও তাদের সমর্থকরা। গতকাল তো ফ্যান ফেস্টিভাল হয়ে গেল দেশটির রাজধানী দোহায়।
কাতারে আল খোরের আল বায়াত স্টেডিয়ামে বেজে উঠবে বিশ্বকাপের প্রথম বাঁশি
বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে আটটায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। কেবল সুর ও সঙ্গীতেই নয়, আয়োজন ও মাঠের খেলাতেও দারুণ কিছু করতে চায় কাতার। চমকে দেওয়ার মতো আরও অনেক দল আছে এবারের বিশ্বকাপে। কার্যত চলছে শেষ মুহূর্তের জল্পনা-কল্পনা। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর তাড়া করে বেড়াচ্ছে ফুটবলপ্রেমীদের। সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী ১৮ ডিসেম্বরের ফাইনালে।
আল খোরের আল বায়াত স্টেডিয়ামে বেজে উঠবে বিশ্বকাপের প্রথম বাঁশি; শেষ বাঁশির মঞ্চ লুসাইল স্টেডিয়ামে। শেষ মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করার লড়াইয়ে সবচেয়ে ফেভারিট ভাবা হচ্ছে ব্রাজিলকে। জোর সম্ভাবনা আছে ল্যাটিন আমেরিকার আরেক দেশ আর্জেন্টিনারও। তাদের জন্য বড় হুমকি ইউরোপিয়ান জায়ান্টরা। আসল লড়াইটা যে এই দুই মহাদেশেরই!
ইউরোপ মহাদেশের ‘বড়’ দলগুলোর মধ্যে ফ্রান্সকে এগিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু একের পর এক চোটের আঘাতে টালমাটাল হয়ে পড়েছে ফরাসিরা। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের শিরোপা ধরে রাখার কাজটা কঠিন হয়ে গেছে করিম বেনজেমা, এনগোলো কান্তে, পল পগবা, প্রেসনেল কিম্পেম্বে, ক্রিস্টোফ এনকুঙ্কু চোট নিয়ে আসর থেকে ছিটকে যাওয়ায়।
এবারের আয়োজনে নতুনত্বের শেষ নেই। দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া মহাদেশে বিশ্বকাপের আসর বসলেও, মধ্যপাচ্যে এই প্রথম। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। রক্ষণশীল দেশ কাতারের বিভিন্ন রীতি-নীতি নিয়েও ঝড় উঠেছে বিতর্কের। এর সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ। যদিও কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি কাতারের স্বপ্নযাত্রায়।
কাতার সেজেছে নতুন রূপে
শুরু হতে যাওয়া প্রতিযোগিতাটি এই প্রজন্মের সেরা দুই ফুটবলার লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ। রঙিন এক বিদায়ের স্বপ্ন দেখছেন দুজনই। আরেক তারকা নেইমার জুনিয়রের কাছে এই বিশ্বকাপও বিশেষ কিছু। ‘হেক্সা’ মিশন (ষষ্ঠ শিরোপা) এবারই শেষ করতে চান তিনি। কাতার পারবে তো তাদের শাপমোচনের মঞ্চ হয়ে উঠতে?
ফ্রান্সের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক কিলিয়ান এমবাপ্পেও নিজের সেরাটা দিতে প্রস্তুত। বেনজেমার অনুপস্থিতিতে পাহাড়সম দায়িত্ব এখন এই তারকার কাঁধে। ইউরোপ মহাদেশের আরেক বড় তারকা হ্যারি কেন ঘোচাতে চান ইংল্যান্ডের ৫৮ বছরের দুঃখ। শেষ বিশ্বকাপ রাঙাতে চাইবেন জার্মানির ম্যানুয়েল ন্যুয়ার, টমাস মুলারের মতো পোড় খাওয়া ফুটবলারাও।
গতকাল থেকে উৎসবের দেশে পরিণত হয়েছে কাতার। উৎসবের হাওয়া লেগেছে গোটা দুনিয়াতে। বিশ্বকাপ জ্বরে কাঁপছে বাংলাদেশও। দেশের সিংহভাগ মানুষই চাইছেন, কুড়ি বছরের অপেক্ষার অবসান হোক ল্যাটিন আমেরিকানদের। সেটা ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনার সৌজন্যে এ দিয়ে দ্বিখণ্ডিত দেশ। এই বিশ্বকাপ ইউরোপের বাইরে হওয়ায় তাদের সম্ভাবনা বেড়েছে কয়েক গুণ।
কিন্তু অনিশ্চয়তার বিশ্বকাপে সম্ভাবনা বাস্তবে পরিণত হওয়ার উদাহরণ কমই আছে। সেরা দলের ট্রফি জয়ের ঘটনা যে বিরল! তাই ভাগ্যকেও পাশে চাইবে দলগুলো। বিশ্বকাপের চিরকালীন দুর্ভাগা নেদারল্যান্ডসের জন্য এটাই যেন বড় পরীক্ষার মঞ্চ। একমাত্র দল হিসেবে তিনটি ফাইনাল খেলেও শিরোপা জিততে পারেনি ডাচরা। এবার দলটি অভিশাপ থেকে মুক্তি চাইছে।
কাতার বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের শেষ সুযোগ হয়ে এসেছে সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়ামের জন্যও। গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়ার জন্যও এটা দ্বিতীয় সুযোগ। মডরিচ-পেরিসিচরা স্বপ্ন দেখছেন। স্পেন স্বপ্ন দেখছে রাজত্বে ফেরার। বড় স্বপ্ন দেখছে ইউরোপের ‘জায়ান্ট কিলার’ খ্যাত ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ডও। বিশ্বকাপ জয়ের সামর্থ্য আছে তাদেরও।
‘বড়’ দলগুলোর মধ্যে কেবল জার্মানিরই সময়টা খারাপ যাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে নিজেদের হারিয়ে খুঁজতে থাকা জার্মানরা এবার গা ঝাড়া দিয়ে সুদিন ফেরানোর আশায় আছে। ‘জার্মান যন্ত্র’ যে বিকল হয়ে যায়নি সেটা কাতারে বোঝাতে চাইবে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ছেড়ে কথা বলবে না অন্যরাও। লড়াইয়ের তীব্র মানসিকতা দেখাতে চাইবে এশিয়ান ও আফ্রিকান দলগুলোও।
যাদের শিরোপা স্বপ্ন হয়তো নেই, কিন্তু ফেভারিটদের স্বপ্ন ভেঙে দেওয়ার সামর্থ্য আছে। বিশ্বকাপের সূচনালগ্ন থেকেই ‘ছোট’ দলের চমক দেখে আসছেন ফুটবলপ্রেমীরা। এসব অঘটন বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। এই রোমাঞ্চের প্রতীক্ষায় এখন দুনিয়া। অপেক্ষা, আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার। তাদের প্রত্যাশা উষ্ণ মরুর বুকে ফুটুক ফুটবলের শীতল ফুল।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.