২০১০ বিশ্বকাপকে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিশ্বকাপ বলা হয়। সেটির অবশ্য অনেক কারণ আছে। প্রথমবারের মতো স্বপ্নের ট্রফি জেতে ইউরোপিয়ান জায়ান্ট স্পেন। তাদের বিশ্বজয়ের মধ্য দিয়ে বিপ্লব ঘটে ‘তিকাতাকা’ ছন্দের। মৃত্যু ঘটে আধুনিক ফুটবলের। আরও একবার শিরোপা হাতছোঁয়া দূরত্বে রেখে আসতে হলো নেদারল্যান্ডসকে। তিনটি ফাইনাল খেলেও বিশ্বজয়ী করতে না পারা একমাত্র দল এই ডাচরাই।

world cup 2010ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১০

টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই অবশ্য ঝড় উঠেছিল গোটা দুনিয়ায়। ‘ওয়াকা ওয়াকা’ গানের তালে নেচেছিলেন কলম্বিয়ান পপস্টার শাকিরা; নাচিয়েছিলেন বিশ্বকে। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় শুভেচ্ছা দূত তিনিই হয়ে উঠেছিলেন। শাকিরার সেই গান এখনও দোলা দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের। কেবল গান-বাজনাতেই নয়, আয়োজক হিসেবেও আফ্রিকান দেশটি ছিল সফল।

আগের ১৮টি বিশ্বকাপের মঞ্চ বসেছিল ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার মাটিতে। ১৯তম বিশ্বকাপটা তাই আফ্রিকা মহাদেশে করার পূর্ব পরিকল্পনাটা আগে থেকেই নিয়েছিল ফিফা। মিশর, মরক্কো ও দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্মুখি ভোটযুদ্ধে নির্ধারণ হয় আয়োজক দেশের নাম। তবে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ান দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট তথা প্রয়াত বর্ণবাদ বিরোধী বিশ্বনেতা নেলসন ম্যান্ডেলা।

তার সম্মানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছিল ফিফা। কিন্তু সফল সেই আয়োজনের পাঁচ বছর পর বিস্ফোরক একটা তথ্য ফাঁস করে ফিফা দুর্নীতি দমন কমিশন। বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পেতে তৎকালীন ফিফা সহ-সভাপতি জ্যাক ওয়ার্নার এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য চুক ব্ল্যাজারকে ঘুষ দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা! ওই বিতর্কটা বাদ দিলে ইতিহাসের অন্যতম সফল একটা বিশ্বকাপই উপহার দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

এই বিশ্বকাপের আগে নতুন নিয়ম চালু করে ফিফা। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের সরাসরি মূলপর্বে খেলার পদ্ধতিটা বাতিল করে ফিফা। আর তাতেই ইতিহাসের প্রথম চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে বাছাইপর্ব খেলতে হয় ইতালিকে। শুধু আজ্জুরিরাই নয়, ৩১ টিকিটের বাছাইপর্বে অংশ নেয় আরও ২০৩টি দল। বাছাইয়ে সফল অভিযান শেষ করে স্লোভাকিয়া। চেকোস্লোভাকিয়া বিভাজনের পর নতুন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বকাপে আত্মপ্রকাশ করে স্লোভাকিয়ানরা।

রোমাঞ্চকর ওই বিশ্বকাপের আগে থেকেই ফেভারিটের কাতারে ছিল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। কিন্তু দারুণ শুরু করা ল্যাটিন আমেরিকার দল দুটোকে বিদায় নিতে হয় কোয়ার্টার ফাইনালে। ব্রাজিল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এবং আর্জেন্টিনা এবারো থেমেছে জার্মানির কাছে। অথচ সুইজারল্যান্ডের কাছে হার দিয়ে শুরু করা সেই স্পেনই হয়ে যায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন!

ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১১৬ মিনিটে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার করা ম্যাচের একমাত্র ও জয়সূচক গোলের ওপর দাঁড়িয়ে স্বপ্নের শিরোপা জিতে নেয় স্প্যানিয়ার্ডরা। তাতে আরও একবার ফাইনাল হারের হতাশায় ডুবতে হায় ডাচদের। জোহানেসবার্গের স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচটা ছিল বিশ্বকাপে ডাচদের তৃতীয় ফাইনাল হার। এর আগে ১৯৭৪ সালে জার্মানি ও ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল তারা।

দুঃস্মৃতির ওসব ক্ষতে প্রলেপে দেওয়ার মোক্ষম সুযোগ পেয়েও শাপমোচন করতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। তাই ফাইনালটা ডাচদের কাছে চিরকালীন একটা আক্ষেপের নাম হয়ে থাকল। আরও একবার মৃত্যু ঘটল আধুনিক ফুটবলের। বিপ্লব ঘটল ‘তিকিতাকা’ ছন্দের। যেটির ওপর দাঁড়িয়ে ব্যাক টু ব্যাক ইউরো-বিশ্ব-ইউরো জিতেছিল ভিসেন্তে দেল বস্কের স্পেন।

নেদারল্যান্ডসের দুঃস্বপ্ন এবং স্পেনের স্বপ্নের আসরে সুদিন ফেরানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল উরুগুয়ে। ডিয়েগো ফোরলানের প্রায় একক প্রচেষ্টায় চার দশক পর সেমিফাইনালে উঠেছিল দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। টুর্নামেন্টজুড়ে দ্যুতি ছড়ানোর পুরস্কার হিসেবে ফোরলান জিতে নেন গোল্ডেন বল। গোল্ডেন বুট ওঠে জার্মানির কাণ্ডারি থমাস মুলারের হাতে। বিস্ময়কর হচ্ছে ফোরলান, ডেভিড ভিয়া এবং ওয়েসলি স্নেইডারও করেছিলেন সমান পাঁচ গোল। কিন্তু তাদের চেয়ে এক ম্যাচ কম (৬ ম্যাচ) খেলায় মুলার জেতেন ট্রফি।

একনজরে ২০১০ বিশ্বকাপ:

স্বাগতিক: দক্ষিণ আফ্রিকা
চ্যাম্পিয়ন: স্পেন
রানার্সআপ: নেদারল্যান্ডস
তৃতীয়স্থান: জার্মানি
অংশগ্রহণ: ৩২টি দল

ভেন্যু: ১০টি (৯টি শহর)
মোট ম্যাচ: ৬৪টি
মোট গোল: ১৪৫টি
ম্যাচ প্রতি গোল: ২.২৭টি
মোট দর্শক: ৩১৭৮৮৫৬

ম্যাচ প্রতি দর্শক: ৪৯৬৭০
ফেয়ার প্লে পুরস্কার: স্পেন
উদীয়মান সেরা: টমাস মুলার (জার্মানি)
গোল্ডেন গ্লাভস: ইকার ক্যাসিয়াস (ইতালি)
গোল্ডেন বল: ডিয়েগো ফোরলান (উরুগুয়ে)

গোল্ডেন বুট: থমাস মুলার (৫ গোল, জার্মানি)। তবে ডিয়েগো ফোরলান (৫ গোল, উরুগুয়ে), ওয়েসলি স্নেইডার (৫ গোল, নেদারল্যান্ডস), ডেভিড ভিয়া (৫ গোল, স্পেন) এক ম্যাচ বেশি খেলায় মুলার জেতেন গোল্ডেন বুট।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.