১৯৭৪: নতুন ট্রফিতে পুরোনো চ্যাম্পিয়ন

১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০। তিনটি বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় মিল- সবকটি আসরেই শিরোপা জিতেছিল ব্রাজিল। তখনকার নিয়ম অনুসারে কোনো দল তিনবার চ্যাম্পিয়ন হলে চিরদিনের জন্য ট্রফির মালিক হয়ে যাবে। সেই হিসেবে জুলে রিমে ট্রফির মালিকানা পেয়ে যায় পেলের ব্রাজিল। কিন্তু সেই ট্রফি আগলে রাখতে পারেনি সেলেকাওরা। রিও ডি জেনিইরো থেকে চুরি হয়ে যায়। প্রথম দফায় ‘পিকলস’ নামের একটি কুকুর ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করেছিলেন ট্রফিটি। এবার আর হলো না।

নতুন ট্রফিতে পুরোনো চ্যাম্পিয়ন

অবশ্য ট্রফিটি পাওয়া গেলেও কোনো লাভ হতো না ফিফার। কারণ আজীবন মালিকানা তো ব্রাজিলের কাছেই। তাই সেটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে আগেই। তাহলে ১৯৭৪ বিশ্বকাপের কী হবে? বানানো হলো নতুন ট্রফি। নতুন ট্রফিটা দেখতে অনিন্দ্য সুন্দর। বিশ্বকাপ শিরোপার নকশাটি করেছিলেন ইতালিয়ান শিল্পী সেলভিও গাজ্জানিগার। ১৮ ক্যারেটের সোনায় মোড়ানো ট্রফিতে দেখা যায় দুজন মানুষ হাত দিয়ে গোলাকার বিশ্বকে উঁচিয়ে ধরে আছে। সেই ট্রফিটা আজও অক্ষত আছে। বদল হচ্ছে কেবল হাত।

সুদৃশ্য এই ট্রফি দিয়েই ১৯৭৪ সালে পশ্চিম জার্মানিতে শুরু হয় দশম বিশ্বকাপ। এই ট্রফিটার জন্যই এখন চার বছর পরপর ফুটবল যুদ্ধে নেমে পড়ছে সারাবিশ্বে ফুটবল পরাশক্তিরা। এবারও এই ট্রফির আজীবনের মালিকানার স্বত্ব পাওয়ার স্বপ্নে মাঠে নামছে তিনটি দল- ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং জার্মানি। এদের মধ্যে কোনো দল চ্যাম্পিয়ন হলেই ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য বানাতে হবে আরেকটি ট্রফি। এই তিনটি দলই এই ট্রফিটি জিতেছে দুবার। দুবার জিতেছে ইতালিও। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপেও মূলপর্বের টিকিট পায়নি চারবারের বিশ্বসেরারা।

১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপে অংশ নিতে আগ্রহ জানায় ৯৮টি দেশ। তবু বাড়ানো হয়নি দলের সংখ্যা। স্বাগতিক ও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দল বাদ দিয়ে প্রায় শ-খানেক দেশের মধ্যে ১৪টি দল চূড়ান্ত করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই বাছাইপর্বে অঘটনের শিকার হয়েছে বেশ কয়েকটি জায়ান্ট দল। সবচেয়ে বড় চমক পূর্ব জার্মানির বিশ্বকাপে টিকিট পাওয়াটা। ওই আসরটাই তাদের প্রথম ও শেষ বিশ্বকাপ হয়ে থাকল।

১৬ দলকে নিয়ে নতুন ফরম্যাটে আয়োজন করা হয় বিশ্বকাপ। ছিল না কোনো কোয়ার্টার ফাইনাল কিংবা সেমিফাইনাল। আসর শুরু হয় অঘটন দিয়ে। সাবেক চ্যাম্পিয়ন পশ্চিম জার্মানিকে ১-০ গোলে হারিয়ে সবাইকে চমকে দেয় পূর্ব জার্মানি। ওই হারটা অবশ্য শাপেবর হয়ে যায় স্বাগতিকদের জন্য। পশ্চিম জার্মানিকে আর ঠেকানো যায়নি। দলটি জিতে নেয় দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ট্রফি। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন বাদ পড়ে সেমিফাইনালে। তৃতীয় হয় পোল্যান্ড।

শুধু নতুন ট্রফির বিশ্বকাপ বলেই নয়, আসরটা ফুটবলপ্রেমীদের মনে থাকবে আরও অনেক কারণে। ওই বিশ্বকাপেই প্রথমবারের মতো দেখা যায় ‘টোটাল ফুটবল’। আধুনিক এই ফুটবলের জনক নেদারল্যান্ডস। অল আউট ফুটবলে পুরো আসর মাতিয়ে রাখে ডাচ শিবির। কিন্তু শেষটা মধুর করতে পারেনি তারা। বার্লিনের ফাইনালে স্বাগতিক পশ্চিম জার্মানির কাছে ২-১ গোলে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের।

চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও দলীয় পারফরম্যান্সে পুরো বিশ্বকাপে নজর কাড়ে নেদারল্যান্ডস। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে দশম আসরটা ছিল শুধুই জার্ড মুলারের। বিশ্বকাপের ওই আসরেই সর্বোচ্চ ১৪ গোলের নতুন রেকর্ড গড়েন জার্মান কিংবদন্তি। তিনি পেছনে ফেলেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি ফন্টেনারকে। যদিও পরবর্তীতে ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনালদো ভেঙে ফেলেন রেকর্ডটা। তার রেকর্ডটা আবার চলে যায় জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসার হাতে। এবার তার উত্তরসূরি টমাস মুলের সামনে নতুন রেকর্ড গড়ার সুযোগ।

একনজরে ১৯৭৪ বিশ্বকাপ

স্বাগতিক: পশ্চিম জার্মানি
চ্যাম্পিয়ন: পশ্চিম জার্মানি
রানার্সআপ: নেদারল্যান্ডস
তৃতীয়স্থান: পোল্যান্ড
অংশগ্রহণ: ১৬টি

ভেন্যু: ৯টি (৯ শহর)
মোট ম্যাচ: ৩৮টি
মোট গোল: ৯৭টি
ম্যাচ প্রতি গোল: ২.৫৫টি
গোল্ডেন বুট: গ্রিগর্জ লাতো (৭ গোল, পোল্যান্ড)

উদীয়মান সেরা: ওয়াদিস্ল জুডা (পোল্যান্ড)
ফেয়ার প্লে পুরস্কার: জার্মানি
মোট দর্শক: ১৮৬৫৭৬২
ম্যাচ প্রতি দর্শক: ৪৯০৯৯