দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। কাতারে বসতে যাচ্ছে ফুটবল মহাযজ্ঞের ২২তম আসর। ফুটবল উৎসবের বানে ভেসে যাওয়ার আগে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক একটি প্রতিযোগিতার দিকে।

1990শেষ সময়ে পেনাল্টিতে আর্জেন্টিনার হৃদয় ভাঙে জার্মানি

১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালের পূনরাবৃত্তিই ঘটলো ১৯৯০ বিশ্বকাপে। দুটি আলাদা আলাদা বিশ্বকাপ। কিন্তু মঞ্চ যেন একই। মঞ্চের দুই প্রতিপক্ষও এক। আগের বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে পরস্পর মুখোমুখি এই দুই দেশ। তবে এবার আর দিয়েগো ম্যারাডোনার হাতে উঠলো না সোনালি ট্রফিটা। রোমের এস্টাডিও অলিম্পিকে ১-০ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নিলো পশ্চিম জার্মানি।

১৪তম আসরের আয়োজক ছিল ইতালি। মেক্সিকোর পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে দুবার বিশ্বকাপ আয়োজনের কৃতিত্ব দেখায় ইতালি। ৮ জুন থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত চলে বিশ্বকাপ। ১১৬ দেশ কোয়ালিফাইং রাউন্ড খেলে, চূড়ান্তপর্বে অংশ নেয় ২৪টি দল। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ ও ১৯৯০ বিশ্বকাপের মধ্যে খুব একটা তফাৎ নেই! আলাদা দুটি বিশ্বকাপ হলেও মঞ্চ ছিল প্রায় একই। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জেতে আর্জেন্টিনা পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে, আর চার বছর পর প্রতিশোধ নেয় পশ্চিম জার্মানি। রোমের এস্টাডিও অলিম্পিকে ১-০ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জেতে জার্মানরা। এটিই ছিল শেষ প্রতিযোগিতা, যেখানে জার্মান দল বিভক্ত জার্মানির প্রতিনিধিত্ব করে। কেননা, ১৯৯০ সালের পর পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি এক হয়ে যায়।

টুর্নামেন্টে তৃতীয় হয় স্বাগতিক ইতালি, চতুর্থ ইংল্যান্ড। পেনাল্টি শুটআউটে দুই দল ফাইনালের টিকিট হারায়। কোস্টারিকা, আয়ারল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নেয়। ১৯৯০ বিশ্বকাপ খুব একটা নজর কাড়েনি। গড়ে মাত্র ২.২১ গোল হওয়ায় অনেকেই বলেছিল বিশ্বকাপ তার স্ট্যান্ডার্ড হারিয়েছিল। পাশাপাশি এ বিশ্বকাপে রেকর্ড ১৬টি লাল কার্ড দেখান রেফারিরা। বিশেষ করে ফাইনালেও লাল কার্ড দেখাতে হয় রেফারিকে। এ ছাড়া এই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ফেয়ার প্লে ট্রফি নিয়ে আসেন আয়োজকরা।

মাঠের খেলায় নজর কাড়তে না পারলেও সেবার রেকর্ড-সংখ্যক দর্শক টিভির পর্দায় বিশ্বকাপ উপভোগ করেছিল। আয়োজকদের মতে, ২৬.৬৯ বিলিয়ন নন-ইউনিক দর্শক বিশ্বকাপ দেখেছিল টিভির পর্দায়। এর কারণও আছে, সেবারই প্রথমবারের মতো ম্যাচগুলো এইচডিটিভিতে রেকর্ড ও প্রচার করা হয়। প্রতিযোগিতার দাপ্তরিক বল ছিল অ্যাডিডাসের এতরুস্কো ইউনিকো। ইতালির মোট ১২ শহরের ১২টি মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপের ৫২টি ম্যাচ। এই বিশ্বকাপ থেকেই বিজয়ী দলকে ৩ পয়েন্ট করে দেওয়ার নিয়ম চালু করা হয়। ৬ গোল করে ইতালির সালভাটর শিলাচি সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাব অর্জন করেন। অসাধারণ পারফরম্যান্সে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হন তিনি।

ফাইনালে ম্যারাডোনাকে পুরো বোতলবন্দী করে রেখেছিল জার্মানি। তাকে বলতে গেলে খেলতেই দেয়নি তারা। এছাড়া তিনি ছিলেন কিছুটা ইনজুরিতে পড়া। এমন এক ফুটবলার যখন নিষ্প্রভ থাকেন, দলের অবস্থা খারাপ হতে বাধ্য। তারওপর  ম্যাচের ৬৫ মিনিটে ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যানকে ফাউল করার অপরাধে লাল কার্ড দেখেন পেদ্রো মনজোন। বিশ্বকাপের ফাইনালে প্রথম কোনো লাল কার্ড দেখার ঘটনা সেটি। ৮৫ মিনিটে রুডি ভোলারকে ফাউল করেন আর্জেন্টিনার রবার্তো সেনসিনি। যে কারণে পেনাল্টির বাঁশি বাজান মেক্সিকান রেফারি এদগার্দো কোদেসাল। গোল করেন আন্দ্রেস ব্রেহমে। শেষ দিকে গুস্তাভো দেজোত্তি লাল কার্ড দেখলে ৯ জনের দলে পরিণত হয় আর্জেন্টিনা।

জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার তখন পর্যন্ত একমাত্র ফুটবলার ও কোচ, যিনি খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে জিতেছেন বিশ্বকাপ শিরোপা। এ বিশ্বকাপে রুমানিয়ার বিরুদ্ধে ক্যামেরুনের ৩৮ বছর ২০ দিন বয়সী রজার মিলা গোল করে সবচেয়ে বেশি বয়সে গোলদাতার খেতাব অর্জন করেন। ৬ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জেতেন ইতালির সালবাতোর এসচিলাচি। টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলার হিসেবে গোল্ডেন বলও জেতেন এসচিলাচি। মজার বিষয় হলো, ১৯৯০ বিশ্বকাপের আগে মাত্র একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলেন সালভাতোর ‘টুটু’ এসচিলাচি। অথচ, বিশ্বকাপে এসেই দুর্দান্ত এক নায়কে পরিণত হলেন তিনি।

একনজরে ১৯৯০ বিশ্বকাপ

স্বাগতিক: ইতালি
চ্যাম্পিয়ন: পশ্চিম জার্মানি
রানার্স আপ: আর্জেন্টিনা
মোট ম্যাচ: ৫২
মোট গোল: ১১৫

গোল গড়: ২.২২
সর্বোচ্চ গোলদাতা: সালভাতোরে শিলাচি (ইতালি -৬ গোল)
সেরা খেলোয়াড়: সালভাতোরে শিলাচি (ইতালি)
মোট দর্শক: ২৫১৬২১৫
ম্যাচ প্রতি দর্শক:৪৮৩৮৯।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.