১৯৮২ বিশ্বকাপ: একজন রসি ও ইতালির তৃতীয় শিরোপা

দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ। কাতারে বসতে যাচ্ছে ফুটবল মহাযজ্ঞের ২২তম আসর। ফুটবল উৎসবের বানে ভেসে যাওয়ার আগে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক আগের একটি প্রতিযোগিতার দিকে।  জিরো থেকে হিরো! ফুটবলে এই কথাটার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ১৯৮২ বিশ্বকাপের নায়ক পাওলো রসি। ক্লাব বা জাতীয় দলে যার তেমন কোনো নামডাক ছিল না। কিন্তু সেবার বিশ্বমঞ্চ একাই মাতিয়েছিলেন এই ইতালিয়ান স্ট্রাইকার। যদিও স্পেনে অনুষ্ঠিত ৮২ বিশ্বকাপে রসির খেলারই কথা ছিল না নিষেধাজ্ঞার কারণে। কিন্তু টুর্নামেন্টে শুরুর সপ্তাহখানেক আগে নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পান রসি।

রসির হাতে ইতালির তৃতীয় সোনালি ট্রফি

এরপর তখনকার ইতালিয়ান কোচ এনজো বেয়ারজটের একক প্রচেষ্টায় বিশ্বকাপ দলে জায়গা পান রসি। গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচ ও শেষ ষোলোতে রসি সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি। একবারের জন্যও জালের ঠিকানা খুঁজে পাননি। তাতে সমালোচনার ঝড় উঠে ইতালিয়ান গণমাধ্যমে। তবে কোয়ার্টার ফাইনাল নতুন এক রসির দেখা মেলে। যে ধারা অব্যাহত ছিল ফাইনাল পর্যন্ত।

গ্রুপ পর্বে পোল্যান্ড, পেরু ও ক্যামেরুনের বিপক্ষে ড্র করার পরও নকআউট পর্বে নাম লেখায় ইতালি। দ্বিতীয় রাউন্ডে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতে যায়। এরপর শেষ আটে ব্রাজিলের ইতিহাসের সেরা দলের সামনে পড়ে। মাঠে নামার আগে সবাই এগিয়ে রাখে ব্রাজিলকে। কিন্তু বাস্তবে হয় তার উল্টোটা। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচের ৫ মিনিটের মাথায় ক্যাবরিনির ক্রস থেকে হেডে গোল করেন রসি। সক্রেটিস ৬ মিনিট পরে তার একক নৈপুণ্যে সমতায় ফেরান ব্রাজিলকে। ম্যাচের ২৫তম মিনিটে আবারও রসি ডি বক্সের বাইরে থেকে গতিময় এক শটে পরাস্ত করেন প্রতিপক্ষ কিপার ভালদির পেরেসকে।

২-১ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ব্রাজিল। তবে বেশিক্ষণ পিছিয়ে থাকতে হয়নি তাদের। ম্যাচের ৭৮তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ফ্যালকাওয়ের বাঁ পায়ের শটে বল খুঁজে নেয় ইতালির জাল। ফের সমতায় ফেরে ব্রাজিল। কিন্তু এর ঠিক ছয় মিনিট পর নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন রসি। আর ব্রাজিলকে ৩-২ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে যায় ইতালি। তার এমন পারফরম্যান্সের পর মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন সমালোচকরা।

এরপর সেমিফাইনালে পোল্যান্ডের বিপক্ষে সেই রসি করেন জোড়া গোল। আর ফাইনালে জার্মানিকে ৩-১ ব্যবধানে হারানোর ম্যাচেও অবদান রাখেন এই রসি। বলা যায় তার একক প্রচেষ্টায় ইতালি তৃতীয়বারের মত বিশ্বসেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল। সেবার টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোল স্কোরারের পুরষ্কার জিতে নেন রসি।

এরপর রসিই হয়ে যান ইতালির মানুষদের চোখের মণি। অথচ আসর শুরুর আগে তার নিষিদ্ধ হওয়া, এরপর নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তির পর দলভুক্ত হওয়ার পর কত কথা শুনতে হয়েছিল রসিকে। সব মুখ বুঝে সহ্য করে যান তিনি। আর জবাবটা দেন মাঠেই।

একনজরে ১৯৮২ বিশ্বকাপ

স্বাগতিক: স্পেন
চ্যাম্পিয়ন: ইতালি
রানার আপ: পশ্চিম জার্মানি
মোট ম্যাচ: ৫২
মোট গোল: ১৪৬

গোল গড়: ২.৮১
সর্বোচ্চ গোলদাতাঃপাওলো রসি (ইতালি)
সেরা খেলোয়াড়: পাওলো রসি (ইতালি)
মোট দর্শক: ২১০৯৭২৩
ম্যাচ প্রতি দর্শক: ৪০৫৭২।